Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অনুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

maro news
অনুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

ক্যাব ড্রাইভার

ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে কলকাতা এয়ার ইন্ডিয়ার সোজা ফ্লাইট। সকাল সাতটায় প্লেন নামলো বিমান বন্দরে। বেরিয়ে এসে সোমেনের মুখোমুখি। ওর বাড়ি এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেটের কাছে। আবদার করেছিল ওর বাড়িতে সকালটা কাটিয়ে যেতে। মাকে ফোনে জানিয়ে দিলাম সে কথা। তিন বছরে সোমেন কিছুটা বদলেছে। মনে হয় কপাল কিছুটা চওড়া হয়েছে। এগারোটা নাগাদ নিজের বাড়ির পথে রওনা হলাম।

বুক করা ওলা এসে দাঁড়ালো। বুক করার সময়ই বুঝেছিলাম মহিলা ড্রাইভার। কয়েকদিন আগে আনন্দবাজার অনলাইনে ভিডিও রিপোর্টিং-এ জেনেছিলাম এক মহিলা ড্রাইভার দীপ্তার কাহিনী। জানি না সেই আজ এসেছে কি না। কৌতুহল নিজের মনেই রেখে দিলাম। ক্যাব চলতে শুরু করলো। আগে থাকতেই বাড়ির ডাইরেকশন আমি বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। একটাও কথা বলেননি মহিলা। বাইপাশ থেকে বেলেঘাটা মেইন রোডে ঢুকে কিছুটা গিয়ে সোজা আমার বাড়ির সামনে এসে ক্যাব দাঁড়িয়ে গেলো। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম এত নিখুঁত করে মহিলা চিনলেন কি করে? হ্যাঁ, বিদেশে পেয়েছি মহিলা কর্মদক্ষতার পরিচয়। ওলা মানিতে বিল মিটিয়ে ব্যাগপত্র নামিয়ে বাড়ির পাশের গলি দিয়ে এগিয়ে চললাম। বাড়ির দরজা দিয়ে ঢোকার সময়ও দেখলাম ক্যাব দাঁড়িয়ে আছে।

সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটা পোস্ট এল হোয়াটসঅ্যাপে। ড্রাইভারের নম্বর থেকে। লেখা আছে, “ভুলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার নম্বর ডিলিট করে ভালোই করেছ।– নীলা।” আমার মুখের পরিবর্তন দেখেও মা কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

স্মৃতির সরণি বেয়ে চলে গেলাম তিন বছর আগে। তার আগে দু’বছর একটানা ভালোবাসার সম্পর্ক গভীর হয়ে উঠেছিল নীলার সঙ্গে। বিদেশের চাকরির অফার আর রিপোর্টিং এর মাঝে হাতে ছিল মাত্র দু’দিন সময়। ফোনে কথা হয়েছিল। দেখা করতে পারিনি। তারপর নতুন দেশের পরিবেশ আর কাজের চাপে ফোনের সংখ্যায় ধীরে ধীরে কমে এসেছিল নীলার সঙ্গে। এক সময় দেখলাম নীলাও আর ফোন করে না। বিদেশ যাওয়ার আগে দেখা না করতে পারার জন্য ওর নিশ্চয়ই অভিমান হয়েছিল। মেয়েরা খুবই অভিমানী হয় মনে হয়। কি ভাবে যে আমিও ওকে ভুলে গেলাম তা আমি ব্যাখ্যা দিতে পারবো না নিজের কাছেও। আজ বুঝলাম ও আমার ফোন নম্বর ডিলিট করেনি। বুকিং-এর সময়েই ও চিনে গিয়েছিল, ভাবি সওয়ারিকে। মাথায় একটা স্কার্ফ জড়ানো ছিল। ও একবারও পিছন ফিরে তাকায়নি। কথাও বলেনি।

মা সেন্টার টেবিলে চায়ের কাপ রাখতে আমার সম্বিত ফিরলো। মাকে বিদেশে যাওয়ার আগে নীলার কথা একবার বলেছিলাম। মা জিজ্ঞাসা করলো, “সেই মেয়েটির খবর কি?” আমি উত্তর খুঁজে পেলাম না।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register