Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ৯)

মজুর, মার্ক্স ও মে দিবস

আগেই বলেছি অ্যালবার্ট পারসনস আর তাঁর প্রিয়তমা লুসি আর তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে হে মার্কেট স্কোয়ারের দিকে চলেছিলেন দি অ্যালার্ম কাগজের সহ সম্পাদক লিজি হোমস ( ২১ ডিসেম্বর ১৮৫০ - ৮ আগস্ট ১৯২৬)। লিজি হোমস লিখতেন। দি অ্যালার্ম তো বটেই, আরো অনেক পত্র পত্রিকায় লিখতেন। আর লেখা দেবার প্রশ্নে তাঁর বিশেষ ছুঁৎমার্গ ছিল না। আমেরিকান নৈরাজ্যবাদী এই মহিলা লেখক শ্রমিক মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে সর্বান্তঃকরণে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তাঁর কলমের নাম ছিল মে হান্টলে। কাছের মানুষের কাছে শুনে শুনে সবাই ডাকত লিজি হোমস। আসলে তিনি জন্মসূত্রে এলিজাবেথ মে হান্ট। লিজি হোমস নিজেকে মুক্তচিন্তার পথিক হিসেবে গড়ে তুলছিলেন। তিনি ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে চিকাগোর শ্রমজীবী মেয়েদের সংগঠিত করতে উদ‍্যোগ নিয়েছিলেন। ওহায়োতে তিনি ছিলেন একজন বিদ্যালয় শিক্ষক এবং তিনি গান বাজনা শিক্ষা দিতেন। বিয়ে তাঁর একটা হয়েছিল। তবে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা তেমন না থাকায় বাচ্চাদের হাত ধরে ভেসে পড়েছিলেন লিজি। তিনি বিবাহকে আজীবনের বন্ধন বলে মনে করতেন না। আর মনের গঠনে মৌলিক পার্থক্য থাকলে সমাজের শাসনে স্বামী স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে যেতেও বিশ্বাসী ছিলেন না। তো স্বামীর ঘর ছেড়ে, স্বামীর পরিচয় ঝেড়ে ফেলে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে চিকাগো পাড়ি দেন লিজি। সেটা ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দ। লিজির বয়স তখন ঊনত্রিশ। নর নারীর মুক্ত স্বাধীন অনাহত ভালবাসার আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠেছিলেন লিজি। বিশ্বাস করতেন লিঙ্গসাম‍্যে। ভিতরে ভিতরে স্বাধীনচেতা হবার কারণেই ১৮৭৭ এর রেলপথ ধর্মঘটের খবর পড়ে তিনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে অন্তরের টান অনুভব করেন। তার দুটো বছর পরেই ১৮৭৯ এ লিজি চলে এলেন চিকাগোয়, রেলধর্মঘটের স্নায়ুকেন্দ্রে। তাঁর ইচ্ছে ছিল সংগীতের শিক্ষকতা করে রুটি রোজগার করবেন। তিনি যে ওহায়োতে ওই সংগীত শিক্ষকতাই করতেন। ওটিই ছিল তাঁর মনোমত পেশাজীবন। কিন্তু বিধি বাম। তাঁর অন‍্য একটি ইচ্ছে ফলবতী হল। পোশাক তৈরির কারখানায় সেলাই শ্রমিকের কাজে নিযুক্ত হলেন লিজি। অনেকদিন পরে চিকাগো টাইমস কাগজে একটি সাক্ষাৎকারে লিজি বলেছিলেন যে, তিনি শ্রমিক শ্রেণিকে হৃদয়ের অন্তঃস্তল থেকে চিনতে চাইছিলেন। শ্রমিকশ্রেণির দিন গুজরানের সমস্ত সংগ্রামগুলি নিবিড়ভাবে চিনতে চেয়েছিলেন। কেমন করে কতো গরিবানাকে সাথি করে শ্রমিকদের দিন কাটে; আর কেমন করে শ্রমজীবী মেয়েরা নিজের নিঃস্ব হতদরিদ্র অবস্থাটাকে ঢেকে চেপে রেখে দেখাতে চায় যে সে একটা সম্মানের জীবন যাপন করছে। লুসি গঞ্জালেস ছিলেন লিজির একেবারেই সমবয়সিনী। তিনিও সেলাই শ্রমিকের জীবন যাপন করতেন। তার সঙ্গেই শ্রমজীবী মানুষের লড়াই গড়ে তোলার কাজটা করতেন। শ্রমিক সংগঠনের কাজের পাশাপাশি লিজি হোমস লেখালেখির কাজটা আঁকড়ে ধরেন। লুসি গঞ্জালেসও লিখতেন। বিভিন্ন নৈরাজ‍্যবাদ প্রচারক ও বিপ্লবপন্থী কাগজে লিজি লিখতেন। অ্যালবার্ট পারসনস এর সম্পাদনায় বেরোতো "দি অ্যালার্ম"। লুসিও লিখতেন সেই কাগজে। লিজি সেই কাগজে সহ সম্পাদকের দায়িত্ব নিলেন। এছাড়াও লিজি লুসিফার, দি লাইট বিয়ারার, ফ্রিডম, এবং ফ্রি সোসাইটি নামে কাগজেও লিখতেন। লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে লিজি খুব গোঁড়াপন্থী ছিলেন না। "আমেরিকান ফেডারেশন অফ লেবার" নামে রক্ষণশীল সংগঠনের কাগজ "আমেরিকান ফেডারেশনিস্ট" এও তিনি পরপর কলম বাগিয়ে গিয়েছেন। নানাবিধ বিষয়ে তিনি কলম ধরতেন। অনেক ফিকশন লিখেছেন। "হাগার লিণ্ডেন বা একটি মেয়ের বিদ্রোহ" নামে একটি পূর্ণাঙ্গ উপন‍্যাস পর্যন্ত তিনি প্রকাশ করেছিলেন। শ্রমিক সংগঠনের কাজ করতে করতে লিজি হোমস চিকাগোর শ্রমিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব‍্যক্তিত্ব হয়ে উঠলেন। হে মার্কেট স্কোয়ারের আগুন ঝরানো দিনগুলির বছরখানেক আগেই লিজি বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই সংগঠন গুলির মধ‍্যে অন‍্যতম হল ইন্টারন‍্যাশনাল ওয়ার্কিং পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যালবার্ট পারসনস আর অগাস্ট স্পিজ দুজনেই এই ইন্টারন‍্যাশনাল ওয়ার্কিং পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ছিলেন।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register