Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদকীয়

maro news
সম্পাদকীয়

মধ্য রাতের কলকাতা বরাবরই আমায় টানে । মির্চা এলিয়াদের “লা নুই বেঙ্গলী” পড়ার পর থেকে ভোররাতে ঘুম ভেঙে যায়। অসমাপ্ত গল্পগুলো তলপেটে ছটফট করে। আমি গঙ্গার মত ওদের নদীতে ভাসিয়ে দিতে চাই। ওরা ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকে। সেই থেকে এই সংলগ্ন সব ছবি আমার পাঁজরে ফটো ফ্রেম হয়ে ঝুলতে থাকে। যেখানেই যাই খুঁজি ফুটপাতের রহস্যময় বৈচিত্র। এক একটা ফুটপাতের এক একরকম বেদনা। আমি ওদের আমার মত করে সাজাই। কোন কোন ফুটপাতের বাসিন্দাদের দেখলে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ছবিগুলো ভেসে ওঠে। ওদের নাম দিয়েছি - উপোসী ফুটপাত। ঝুপড়ি গুলোকে যদি কমন নিয়ে নিই যেটা পড়ে থাকে তা হল,নিত্যনতুন পাগল। আমার এই জীবনে শিয়ালদার ফুটপাতে বসবাসকারী এতো রকমের পাগল আমি কোথাও দেখিনি। তাই ঐ ফুটপাতের নাম দিয়েছি - পাগলা হাওয়া। কলকাতার বেশ কিছু ফুটপাত আছে যেখানে ঠেলাওয়ালা,মুটেওয়ালারা কচিকাঁচা নিয়ে চুটিয়ে সংসার করছে। এই ফাটল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। রোদ ওদের পোড়ায় না। বরং ওরাই রোদে নিজেদেরকে সেঁকে নেয়। বৃষ্টি খুব সচ্ছলভাবে ঢুকে পড়ে ওদের সংসারে। এই নিয়ে দিব্যি কেটে যায় জীবন। আর একটা পায়ে চলা পথ,যেখানে শুধুই বই আর বই। শক্তি থেকে সুনীল,বঙ্কিম থেকে বনফুল,সবই মেলে। ওদের নাম - মনের মানুষ। শ্যামবাজার,হাতিবাগান,আহিরি টোলা,বেনিয়াটোলা এইসব ফুটপাতে ইশারায় ব্যবসা হয়। এর নাম দিয়েছি - দেনা-পাওনা। কিছুদিন ধরে আর্মহা স্ট্রিটের পোস্ট অফিসের ধারে একটা ফুটপাত আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। মেয়েটার বয়স কত হবে,২২ থেকে ২৫ এর মধ্যে। তিন তিনটে বাচ্চার জন্ম দিয়েছে! আমি যতবার দেখেছি ততবারই উতলা ফুটপাতে ও একা। ওর মাথার উপর কোন ছাউনি নেই। একটা বাচ্চা সবে দাঁড়াতে শিখেছে। একটা হামাগুড়ি টানছে। আর একটা কোলে,শুকনো বোঁটা চুষছে। অনেক ভেবে এই ফুটপাতটার নাম রেখেছি - মা।

রীতা পাল

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register