Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

maro news
অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

মায়ের মন

নীলা আট বছরের ছেলে বাবাইকে নিয়ে চিন্তায় ডুবে থাকে। অটিজমের কারণে বাবাই স্বাভাবিক নয়। ডাক্তারের আশা ও ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যাবে। জিৎ অফিস আর লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে ব্যস্ত থাকে সব সময়। বাবাইয়ের বিষয়ে বিন্দু মাত্র চিন্তিত বলে মনে হয় না। জিতের সঙ্গে পত্রিকার সূত্র ধরেই নীলা সঙ্গে প্রেম। আজ সেই পত্রিকাকে দু’চোখে দেখতে পারে না মা নীলা। মায়ের কাছে সন্তান কি তা একমাত্র মায়েরাই জানে। জিতের যৌথ পরিবার। ভাড়া বাড়ি। তিনটে শোবার ঘর। একটিতে জিতের বাবা-মা থাকেন। দ্বিতীয়টিতে থাকে জিতের দাদা-বৌদি দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে। দুজনেই বাবাইয়ের থেকে বড়। তবে ওরা বাবাইকে খুব ভালোবাসে। স্কুল থেকে এসে বা ছুটির দিনে ওকে সঙ্গ দেয়। খেলে, গল্প করে। তিন ভাই-বোন কোন দুর্বোধ্য কারণে টিভির ভক্ত নয়। বাবার কেনা টিভিটা ড্রয়িং রুমে রাখা আছে। ওই ঘরের সোফাতেই বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বাবাই বসে থাকে। দুই ভাই-বোন ঘরে চলে গেলে ঠাকুরদা-ঠাকুরমা এসে বসেন। ওরাও যতটা সম্ভব বাবাইকে সঙ্গ দেন।

এই পরিবেশটাতে নীলা খুবই স্বস্তি পায়। চেষ্টা করে সেই সময়টাতে ওদের সাথে মিশতে, কাজের ফাঁকে ফাকে। বাবাই গত দুবছর যাবত বেশ কিছুটা উন্নতি করেছে। এটা নীলাকে কিছুটা আশা জোগায়।

কিন্তু, জিতের এসব ঘোর অপছন্দ। পত্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে সে চিন্তিত। বিশ বছরের পত্রিকা। একক চেষ্টায় ধরে রেখেছে। অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকেও ওকে পত্রিকার পিছনে সময় দিতে হয়। একটা মাত্র ঘরে এত হৈ চৈ সে পছন্দ করে না। মাঝে মাঝেই নীলাকে কথা শোনায়।

একদিন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এলো জিৎ। তখন তিন ভাই-বোনের খেলা চলেছে। চা খেতে খেতে নীলাকে বললো, “দু’টো সুখবর আছে। আমার প্রোমোশন হয়েছে। আর অফিসের একাউন্টেন্ট বদলি হয়ে যাওয়ার অফিসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ওর ফ্ল্যাটটা সামনের মাসে খালি হবে। আমি ফ্ল্যাট নেওয়ার জন্য দরখাস্ত করে দিয়েছি।”

নীলা স্তম্ভিত হয়ে যায়। দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আঁচলে মুখ ঢেকে সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register