Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পতে সন্দীপ সাহু

maro news
গল্পতে সন্দীপ সাহু

জল ঘাটে পৌঁছায় না

একটা নৌকো বেয়ে চলেছে। নৌকাই হাল ধরেছে নিজের। দাঁড়টাও নিজেই নিজেরটি টানছে। বাহ্যত একটা ঘাটে নৌকোটি বাঁধা। আইনে। কিন্তু বাঁধা নয়!

খুব মন চায়, কোনো ঘাটে বাঁধা পড়তে। কোনো ঘাট তো এমন আছে যে বাঁধবে। নৌকোটি ঘাট খুঁজে চলে। পৌনপৌনিক ভাবে।

ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখলো রমেন। অন্ত্যমিলে পয়ারে লেখা পুরানো শব্দ চয়নে একটা কবিতা এবং কবিতার নীচে এক সুন্দরীর ছবি। কবিতাটি পড়লে মনে হবে বিগত পঞ্চাশ বছরের কবিতা যেন পড়ছি। ছবিটিতে মহিলা কবির লাবণ্য ঢল ঢল! ঝরনার প্রচণ্ড গতি আর পাথরে ধাক্কা খেয়ে জলের লাফিয়ে লাফিয়ে চলার চলকে ওঠা, ভাড়ী মিষ্টি হয়ে সারা মুখটায় লেগে রয়েছে। নাম শ্রাবণী।

আর সহ্য হয় না। কারুর কাছেই তো পাত্তা পাস না। মুরোদ থাকলে একটা জোটা না দেখি! জুটিয়ে দেখা। যা, যেখানে খুশী গিয়ে তোর জ্বালা মেটা। তোর সঙ্গে কোনো মেয়ে শোবে? একটা জানোয়ার। মিলির কথাগুলো আবার কানের কাছে এসে চিৎকার করে।

রমেন এখন শ্রাবণীকে দেখছে। মিষ্টি মুখে কেমন একটা মায়া অনুভব করে। কবিতাটা দু'চার লাইন পড়ার পর আর পড়তে ইচ্ছা করলো না। সেই চর্বিত চর্বনের প্রেম। প্রিয়, বঁধু, হে সখে এর মাঝে আধুনিকা সাহসিনী হওয়ার জন্য চুম্বনকে এনে দাঁড় করিয়েছে। ব্যাঞ্জনার‌ লেশ মাত্র নেই। রমেন ছোট্টোর উপর বেশ গুছিয়ে একটা প্রেমের‌ কবিতা লেখে ওই পোস্টের কমেন্টে। কিছুক্ষণ পরে লাভ রিএকশান পায় রমেন। ইনবক্সে ম্যাসেজ আসে," আপনি তো দারুণ লিখলেন। দারুণ। এমন প্রেমের কবিতা সচরাচর দেখা মেলে না। ভালো থাকবেন। অশেষ শুভেচ্ছা।"

নৌকোটি দূরে একটি ঘাট ঝাঁপসায় দেখতে পেল। তবুও কেমন যেন অচঞ্চল। আসলে আগেও এরকম হয়েছে অনেকবার। সেই সকল ঘাট নৌকোটাকে ভিরতে দেয়নি। অপমানে লজ্জায় কালো হয়ে ফিরেছে অনেকবার।

রমেন কোনো উত্তর করলো না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার মেসেজ এলো। "কী কিছু বললেন না যে!" লাভ রিএকশান দেয় রমেন। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। "এমন সুন্দরী আগে দেখিনি। আপনার সৌন্দর্যই আমাকে দিয়ে প্রেমের কবিতাটি লিখিয়ে নিয়েছে। আমি অসহায়!" ওপাস থেকে লাভ রিএকশানের ইমোজি অনেকগুলো আসে। এখানেই সেদিনের মতো চ্যাট শেষ হলো প্রথমবার ওই সুন্দরীর সঙ্গে।

নৌকোটির কাছে ঘাটটি ঝাঁপসা কাটিয়ে যেন অনেকটা স্পষ্ট। গুটি গুটি করে পা চালায় ঘাটের দিকে। স্পষ্টতা, ঠিক বিশ্বাস হয় না। যে কোনো মুহূর্তে ঝড় উঠতে পারে। ভূমিকম্প হতে পারে। সুনামি লাফ দিতে পারে ঘাড়ের ওপর যে কোনো সময়ে।

প্রায় প্রতিদিনই শুভ সকালের স্টিকার আসে। যায়। কবিতা পাঠায় ইনবক্সে। বার বার রমেন ব্যাঞ্জনার অভাবের কথা বলে। বার বার প্রতিষ্ঠিত কবিদের কবিতা পড়ার কথা বলে। পাঠানো কবিতা এডিট করে দেয়।

এভাবেই চলতে চলতে একদিন রমেন উজার করে ঘাটে থাকা সত্তেয় নৌকাটি কীরকম ঘাটহীন তা জানিয়ে ঘাটে ভেরার প্রস্তাব পাঠায়। কোনো উত্তর আসে না। এক দিন দু'দিন! অবশেষে এলো। না আসা পর্যন্ত একটা অপমান ঘিরে ছিল।

আপনাকে শ্রদ্ধা করি। নিজেকে আর ছোটো করবেন না। না হলে অপমান করতে বাধ্য হবো।

নৌকাটি বিদ্যুত-গতিতে হাল ধরে নৌকা ঘোরায় মাঝ-সমুদ্রের দিকে। অনন্ত অসীম জলরাশি। কুল-কিনারাহীন।

রমেন আয়নার সামনে! নিজের প্রতিবিম্ব মিলি হয়ে বিদ্রুপ করে, কিরে মুরোদ হলো না তো? পাত্তা দিল না তো? তোর মতো লোককে কেউ পাত্তা দেবে না। বাঁজা কবিতা লিখিস। কবি, কবি হয়েছিস। রবীন্দ্রনাথ হবি। নোবেল পাবি! একটা উৎকট হাসি ছলাৎ ছলাৎ করে আছড়ে পড়ে নৌকাটির গায়। , আকাশে সাতটি তারা। চার দিকে ঘন নীল জল! একদম নীল! এই জল বয়ে যায়। শুধু বয়ে যায়। কোনো ঘাটে পৌঁছায় না!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register