Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

maro news
অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

সম্পর্ক

আমি দেখছি একটা বিশাল গাছের নীচে আমি বসে আছি। গাছ ফলে ফুলে ঝুলে পড়েছে। ডালে ডালে নানান রকমের নানান রঙের পাখি। একদল উড়ে যাচ্ছে, আর একদল উড়ে এসে বসছে। নানান রকমের পাখির স্বর। নীচে শীতল ছায়ায় ক্লান্ত আমি জিরিয়ে নিচ্ছি। অনেকক্ষণ এই ভাবে কেটে গেল। হঠাৎ, উত্তর দিক থেকে বরফশীতল কন কনে বাতাস আসতে শুরু করলো। শীতে সমস্ত শরীর কাঁপছে। তারপর ঝিরিঝিরি বরফ পড়তে শুরু করলো। আস্তে আস্তে পুরো গাছ ঢেকে গেল। এই ভাবে আরো অনেকক্ষণ কেটে গেলো। এবার আস্তে আস্তে শীত কেটে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে গাছ দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু, একি হলো গাছে কোন পাতা নেই। সব বরফ গলে যাওয়ার পরেও কোন পাখির দেখা নেই। গাছের তখন শুধু মিশ মিশে কালো একটা কাণ্ড। এমন ভয়ংকর চেহারা প্রকৃতিতে হতে পারে তা আমি জানতে পারিনি। এরপর মনে হলো আমার মন আমাকে বলছে ‘পালিয়ে যা। নইলে তোরও ওই দশা হবে। আমি দূরে সরে যেতে শুরু করলাম। খুব মন খারাপ করতে লাগলো কিছুক্ষণ আগে দেখা সবুজ পাতা ফুলে ফলে পাখিতে ভরা গাছটার অবস্থা দেখে। কিন্তু, আমি তখন পালাচ্ছি। ক্রমশ দ্রুত হয়ে আসছে আমার গতি। এক সময় আমি হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। মনে হলো একটা খাদের মধ্যে ক্রমশ পড়েই চলেছি। ভয়ে ঘুম ভেঙে গেলো। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে।

বিছানায় উঠে বসে চশমাটা চোখে পড়লাম। সকাল প্রায় সাতটা। রমা বাথরুমে। ওরও দেরি হয়েছে উঠতে বোঝা গেল। কাল রাতে মায়ের সাথে আমার প্রচণ্ড তর্কাতর্কি হয়েছে। রাগের চোটে অনেক খারাপ কথা বলেছি। দাদা-বৌদি অনেক দিন আগে থেকেই মায়ের সঙ্গে কথা বলে না। মায়ের খোঁজও নেয় না। শুধু ভাইপোটা মাঝে মাঝে ফাঁক পেলে ঠাকুরমার কাছে যায়। রমাও বেশ কয়েকদিন হলো মায়ের সাথে কম কথা বলা শুরু করেছে। ওর দেখাদেখি আমিও সেই দলে। তবে কেন যে এই অবাঞ্ছিত ঘটনাটা হলো। শেষমেশ মা বলেছিল, “কালই আমি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবো। তোদের পাওনা গণ্ডা তো মিটে গেছে। সুখে থাকবি।”

শুনতে পেলাম নীচে থেকে দিদির গলা। এত সকালে ও চলে এসেছে। দিদির কাছে শুনেছিলাম- জামাইবাবু আর ও একদিন বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে কথাবার্তা পাকা করে এসেছে। এক তারিখেই নাকি চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, মা যেতে ইতস্ততঃ করছিল মনে হয়। কালকের ঘটনাতেই আজই কি তাহলে মা...। আমার গলাটা ধরে এলো। খুব খারাপ লাগছে। একসময় ভাইপো এসে বললো, পিসির সাথে ঠাকুরমা কোথায় বেড়াতে যাচ্ছে।

হ্যাঁ, বেড়াতেই বটে! মনের মধ্যে একটা চিন্তা গভীর ভাবে গ্রাস করলো। আচ্ছা দিদি কেন মাকে নিজের কাছে রাখলো না? নিশ্চয়ই জামাইবাবুর মত নেই। আচ্ছা দিদির তো ছেলে আছে। মা হয়ে ও নিজের ছেলেকে কি গল্প শোনাবে?

পরে জেনেছিলাম, সেই দিন দিদির সাথে বারো বছরের ছেলেও ছিল। মনে মনে একটা ধারণা জন্মালো, কেন আজকালকার সন্তানেরা টিভি গেমসে ডুবে থাকে!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register