Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

হৈচৈ ছোটদের গল্পে চন্দ্রমা মুখার্জী

maro news
হৈচৈ ছোটদের গল্পে চন্দ্রমা মুখার্জী

মনখারাপের ওষুধ

রিণ্টুর ভীষণ মনখারাপ। রোজ স্কুলে যাচ্ছে, ক্লাস করছে, ফিরে এসে আবার পড়তে বসছে। কিন্তু না বন্ধুদের সাথে গল্প করছে, না টিফিন খাচ্ছে। বাড়ি ফিরেও নমোনমো করে খেয়েই উঠে পড়ছে। মায়ের বকুনিতে যা একটু খাচ্ছে। মুখে একটুও হাসি নেই। রিণ্টু ক্লাস এইটে পড়ে। ওর দাদু মাসখানেক হল মারা গেছেন। তার আগে তিনমাস শয্যাশায়ী ছিলেন। তখন থেকেই রিণ্টুর মনখারাপ। তাও তখন ওর মনে একটা ক্ষীণ আশা ছিল যে, দাদু সুস্থ হয়ে উঠবেন। তারপর সব আগের মতো হয়ে যাবে। আসলে রিণ্টু ওর দাদুর খুব ন্যাওটা ছিল। স্কুলের বাসে উঠতে যাওয়া, ফেরার পথে বাস থেকে নেমে বাড়ি আসা, তারপর স্কুলের সব গল্প – সব দাদুর সাথেই হতো। কিন্তু দাদু অসুস্থ হওয়ায় সেই রুটিনে বাধা পড়েছিল। তবু একটু – আধটু গল্প শোনাত ও দাদুকে। দাদুর পাশে বসে থাকতো। দাদুর মৃত্যুটা ও এখনো মেনে নিতে পারেনি। ওর তেরো বছরের জীবনে এই প্রথম ও এতো কাছ থেকে মৃত্যু দেখেছে, তাও নিজের সবচেয়ে প্রিয়জনের। ঠাম্মা তো নিজের শোক কোনমতে কাটিয়ে উঠেছেন। ওর জন্য রোজ চিন্তা করেন, মাকে – বাবাকে বলেন, ‘মেয়েটা দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছে। ওকে তো স্বাভাবিক হতে হবে।‘ মাও বলছেন, ‘পড়াশোনাতেও মন দিতে পারছে না। ক্লাসটেস্টের নম্বর খুব কমে গেছে। কি যে করি?’ বাবা বলছেন, ‘এরকম চলতে থাকলে রিণ্টুকে ডাক্তার দেখাতে হবে, মনের ডাক্তার। মনখারাপের ওষুধ তো লাগবেই।‘ বিছানায় শুয়ে পড়েছিল রিণ্টু। শুয়েশুয়েই ও কথাগুলো শুনতে পেল। ওকে নিয়ে সবাই আলোচনা করছে, এটা মনে হতেই ওর নিজেকে কিরকম অপরাধী মনে হল। ‘দিদিভাই, কি গো এতো মনখারাপ কেন? এইতো আমি চলে এসেছি।‘ – দাদুর গলা শুনেই রিণ্টু একছুট্টে দাদুর কাছে চলে এল। দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘কোথায় চলে গিয়েছিলে দাদু? আমাদের সবার কি মনখারাপ, তুমি নেই বলে কিচ্ছু ভালো লাগছে না আমাদের কারুর। তুমি কেমন আছো? তোমার তো খুব শরীর খারাপ হয়েছিল।‘ দাদু হাসতে হাসতে বললেন, ‘ওমা, দিদিভাই। মনখারাপ কেন? আমি তো যেখানে চলে এসেছি, সেখানে কোন অসুখ নেই। সবাই এখানে ভালো থাকে, আমিও আছি। কিন্তু তোমরা মনখারাপ করে থেকো না দিদিভাই। বড়রা তোমাকে নিয়ে কত দুশ্চিন্তা করছে। তুমি এতো মনখারাপ না করে সত্যিটা মেনে নাও। সবাই তোমার সাথে চিরকাল থাকবে না। কিন্তু এখন যারা আছে, তাদেরকে অগ্রাহ্য করো না। আর আমি তো তোমার মনের মধ্যেই আছি। তুমি মনে করলেই আমি চলে আসবো, এই যেমন এখন এলাম। এখন আমি আসি। সবাইকে নিয়ে খুব ভাল থেকো দিদিভাই।‘ চোখে আলো পড়তেই রিণ্টুর ঘুম ভেঙে গেল। দেখল মা পর্দা সরিয়ে ওকে ডাকছেন, ‘রিণ্টু মা ওঠো।‘ রিণ্টু উঠেই মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘গুড মর্নিং মা। দাদু স্বপ্নে এসেছিল। আমি আর মনখারাপ করবো না। দাদু বলেছে, দাদু ভালো আছে।‘ অনেকদিন পর রিণ্টুর মুখ আগের মতো স্বাভাবিক উচ্ছ্বল হয়েছে। মা, বাবা, ঠাম্মা ওর স্বপ্নের কথা শুনে খুশি হলেন। আর ওকে দেখে আশ্বস্ত হলেন। দাদু এসে মনখারাপের ওষুধ দিয়ে চলে গেছেন।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register