Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্পিতা বোস (পর্ব - ৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্পিতা বোস (পর্ব - ৪)

বৃত্ত

৯| সাত‍্যকী স‍্যারের কাছ থেকে সবটা বুঝে রূপসা এগিয়ে চলেছে সাত নম্বর রুমের দিকে। ভালো হয়েছে একদিকে এখানে আসায়। এখানে পেশেন্ট নিয়ে ব‍্যস্ত থাকলে সময়টা কেটে যাবে। নাহলে একদিকে বাবার চিন্তা অন‍্যদিকে মার কান্না। তার ওপর সবার দোষারোপ চলছে রূপসার ওপর। সব মিলিয়ে বাড়িতে এক গুমোট পরিবেশ। সাত‍্যকী স‍্যার বোধহয় সবটা বুঝেই ডেকেছেন। সাত‍্যকী স‍্যারের রূপসার প্রতি দুর্বলতা অনুভব করে রূপসা। দুর্বলতা আছে রূপসারও। কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে রাখে। স‍্যার এমন নামকরা ডাক্তার। রূপসার মতো একটা মেয়ের সাথে স‍্যারের জীবন জড়ানো! নাহ্, বিস্তর ফারাক, অসম্ভব। মনে পড়ে এমনই অসম্ভবের বার্তা দিয়েছিল অর্জুনকেও। অথচ জীবনে দুবার অর্জুনের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। যদিও রূপসা নিশ্চিত যে গতবারের মতোই অর্জুন তাকে এতটুকু সাহায্য করবে না। অর্জুনের কোর্টে সাক্ষী দেওয়ার কথা মনে পড়ে আবার। প্রতিহিংসার জন্য মানুষ এত নীচে নামতে পারে! রূপসার প্রতি নাহয় রাগ ছিল কিন্তু বাবা! বাবা সেদিন যদি অর্জুনকে রাস্তা থেকে তুলে এনে পড়াশোনা না শেখাতো তবে? অর্জুন কি পারত পুলিশের চাকরি পেতে? প্রতিহিংসা তো রূপসার ওপর ছিল, কিন্তু বাবা? বাবা তো ভরসা করেছিল অর্জুনের ওপর। সেদিন কোর্ট থেকে বেরিয়ে বাবা যখন অর্জুনের কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, 'আমার গুরুদক্ষিণা পেলাম আজ। সঠিক শিক্ষা দিতে পারিনি তোমাকে, তাই তোমার এই কাজটাই আমার গুরুদক্ষিণা মনে করলাম। ক্ষমা করলাম তোমাকে অর্জুন। তুমিও মনে অপরাধবোধ রেখোনা।"

রূপসা জানে কতটা আঘাত পেয়ে বাবা বলেছিল কথাটা। বাবা সত্যিই কত কষ্ট সহ‍্য করেছে রূপসার জন্য। হ্যাঁ, হ্যাঁ রূপসাই দায়ী সবকিছুর জন্য। সবঘটনার কেন্দ্রবিন্দু তো রূপসাই। বাবা এত কষ্ট ভুলে যদি শুধু ভালো স্মৃতিদের মনে রাখত! বুকটা আবার মুচড়ে ওঠে। বাবা কোথায় আছে? কেমন আছে?কান্না পায়। রুম নম্বর সাতে যাওয়ার আগেই রুম নম্বর দুইয়ে ঢোকে। সাতনম্বর পেশেন্টকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন স‍্যার। রুমে তপতিদি আছেন দেখভালের জন্য। কিছু সময় পরে যাবে ঠিক করে রূপসা। দুনম্বর পেশেন্টের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

১০| দুনম্বর পেশেন্ট। এই রিহ‍্যাবের অনেক পেশেন্টেরই নাম নেই। রুম নম্বর দিয়ে পরিচিতি। সাত‍্যকী স‍্যার যাদের রাস্তায় পরিচয়হীন অথবা ভবঘুরে অবস্থায় পান তাদের এখানে আনেন চিকিৎসার জন্য। কোনও পরিচয় না থাকায় তাদের ঘরের নামেই পরিচিতি হয়। এদের অধিকাংশই কখনও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন না। সবাই জানে কিন্তু তাও সাত‍্যকী স‍্যার আনেন এদের। চিকিৎসা এবং যত্নের কোনও ত্রুটি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি স‍্যারের। অদ্ভুত লাগলেও স‍্যারের এই কাজ রূপসার ভালো লাগে। শ্রদ্ধা সম্মান এভাবেই আসে। ' মায়া ' ডাকটা কানে আসতেই বিছানায় শোওয়া রুম নম্বর দুই পেশেন্টের দিকে তাকায় রূপসা। হাতদুটো বাঁধা দেখেই রূপসা দৌড়ে যায়। চোখ বেয়ে জল রুম নম্বর দুই পেশেন্টের। হাত দুটো খুলে দেওয়ার আকুল আর্তি চোখেমুখে। রূপসার বাবার বয়সী প্রায় ভদ্রলোক। স্টেশনে একদিন আর পি এফ ওনাকে খুঁজে পান। অদ্ভুতভাবে ঘুরছিলেন। নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননি। তাই প্রথমে স্টেশনমাস্টার থেকে থানা। তারপর সাত‍্যকী স‍্যার কোনোভাবে খবর পেয়ে এখানে নিয়ে আসেন। নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননা আজও। শুধুমাত্র রূপসাকে দেখে "মায়া" নামে ডাকেন। রূপসার কাছে এলোমেলো কিছু কথা বলেন। রূপসা চেষ্টা করে যদি শব্দদের একসাথে এক মালায় গেঁথে কিছু পরিচিতি খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও জানে বৃথাই চেষ্টা। দিনদিন আরও ভুলে যাবেন এবং শুধুমাত্র কল্পনা মিশিয়ে এক অন্য জগতে চলে যাবেন। যেখান থেকে ফিরে আসা কখনোই সম্ভব না। তবুও চেষ্টা করাই ওদের কাজ। আবার করুণ গলায় ডাকেন "মায়া"। রূপসা জানে হাতের বাঁধন খুলে দেওয়ার জন্য বলছেন। কিন্তু বাঁধন খুললে সমস্যা বাড়ে। রূপসা মাথায় হাত রাখে দুনম্বর পেশেন্টের।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register