Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্পিতা বোস (পর্ব - ৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্পিতা বোস (পর্ব - ৩)

বৃত্ত

৭| ঝাপসা চোখে অনিমেষ দেখছেন চারদিকে অচেনা মানুষের ভীড়। তাকে কেন্দ্র করে প্রচুর কৌতূহলী চোখেরা। কিন্তু সবাই অপরিচিত। অনেক অনেক প্রশ্ন কিন্তু অনিমেষের কাছে কোনও উত্তর নেই। কিছুই মনে পড়ছেনা অনিমেষের। এ কোন জায়গা? কোথায় এসেছে? বাড়ি কোথায়? কিন্তু একটা বাড়ি ছিল তো অনিমেষের! স্ত্রী,ছেলে আর ছোট্ট মেয়ে রূপসা। কোথায় গেল? কী করতে এসেছেন এখানে? খুব দরকারি একটা কাজ ছিল, কিন্তু সেটা ঠিক কি মনে করতে পারেন না অনিমেষ। মাথাটা কেমন করে ওঠে।

৮| আজ রিহ‍্যাব থেকে ছুটি নিয়েছিল রূপসা। কিন্তু সাত‍্যকী ডেকে পাঠিয়েছে। ঘরে বসে থাকলে আরও খারাপ লাগবে ভেবেই ডেকে পাঠানো। তাছাড়া নতুন পেশেন্টটার জন‍্য রূপসার মতো একজন নার্স লাগবে। রূপসা অন্য নার্সদের মতো নয়। শুধুমাত্র দায়িত্বের কাজটুকু সারে না, মন থেকে আপনজনের মতো কাজ করে। এই রিহ‍্যাবের পেশেন্টদের জন‍্য যেটা অত্যন্ত প্রয়োজন। রূপসা এখন এখানের অলিখিত ইনচার্জ। ওর ওপর এই রিহ‍্যাবের দায়িত্ব দিয়ে সাত‍্যকী নিশ্চিন্ত থাকে। রূপসার প্রতি সাত‍্যকী রোজ একটু একটু করে দুর্বল হচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ করে না। আসলে রূপসা নিজের চারপাশে এক অদৃশ্য গণ্ডি টেনে রেখেছে যেন। সে গণ্ডি পেরিয়ে ওর মনের খবর পাওয়া মুশকিল। এই অল্প বয়সে সাত‍্যকীর যা পশার বা নামডাক, তাতে যেকোনো মেয়ের কাছে সাত‍্যকী এককথায় লোভনীয় পাত্র। কিন্তু রূপসার প্রতিই সাত‍্যকীর মনটা দুর্বল। তবে সাত‍্যকীকে রূপসা ভরসা করে। তাই আজ সকালে নিজের বিপদে সাত‍্যকীকেই ডেকেছে। এটাই বড় প্রাপ্তি। যদিও কিছুই করতে পারেনি। শুধুমাত্র মিসিং ডাইরি করানো ছাড়া। জানেনা আদৌ কখনও রূপসার বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি না। না কি আবার ছোটপিসির মতো রূপসার বাবাও হারিয়ে যাবেন। ছোটপিসিকে কখনও ভুলতে পারবেনা সাত‍্যকী। ছোট্ট সাত‍্যকীকে কত গল্প বলত। আদর করত। ছুটির দিনে দুপুরে শিশু ভোলানাথ আবৃত্তি করত দুজন। সেই ছোটপিসি কেমন বদলে গেল। একদিন পিসেমশাই দুপুরে বাড়ি এলো পিসিকে নিয়ে। জানিয়ে দিলেন পাগল বউ নিয়ে নিয়ে ঘর করবেননা। পিসিকে দেখে অবাক হয়ে গেছিল সাত‍্যকী। কথা জড়ানো। সবাইকে চিনতে পারছিল না। তারপর ধীরে ধীরে অবস্থা আরও খারাপ হয়। একটা ঘরে আটকে রাখা হতো ছোটপিসিকে। সাত‍্যকীর খুব কষ্ট হতো পিসিকে দেখলে। পিসির ঘরে যাওয়া বারণ ছিল। বাথরুমে যাওয়ার কথা বুঝতে পারত না। ঘরটা নোংরা থাকত। এমন করেই হঠাৎই একদিন কিভাবে যেন ঘর থেকে পালিয়ে গেল ছোটপিসি। খোঁজাখুঁজি সামান্যই করেছিল সবাই। আসলে বোধহয় সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু ছোটপিসির হারিয়ে যাওয়াটা দাগ ফেলেছিল সাত‍্যকীর মনে।

নিজের কাছেই যেন এক শপথ নিয়েছিল। এই রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আজ এই ডিমনেশিয়া নিয়ে স্পেশালাইজেশন করার পেছনে ঐ পিসির কষ্টগুলো রয়েছে। প্রাইভেট প্র‍্যাক্টিসের পাশে এই রিহ‍্যাব গড়ে তোলা পিসির মতো মানুষদের ভালো রাখার, ভালো করার চেষ্টা করা। যদিও অধিকাংশ রোগীই আর কখনও ভালো হবে না। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে কখনও ফিরবেন না, এটা জানে সাত‍্যকী। তবুও যতটা সম্ভব ভালো রাখার চেষ্টা করা। -- স‍্যার, আমাকে ডেকেছেন। জরুরি কিছু কারণে.. চিন্তায় ছেদ পরে রূপসার গলায়। একদিনেই মেয়েটার চোখমুখ বদলে গেছে। নাহ্ রূপসাকে কাজের মধ্যে রাখলে কিছুটা অন্যমনস্ক হবে। -- ঐ রুম নম্বর সাতে একটা নতুন পেশেন্ট এসেছে। কেস হিস্ট্রিটা একটু বুঝিয়ে দিই। তুমি একটু স্পেশাল কেয়ার নেবে। এই কেসটা অন্যরকম। রূপসাকে কেসটা বিশদে বুঝিয়ে দিতে থাকে সাত‍্যকী। রূপসাকে ভালো রাখতেই হবে সাত‍্যকীর।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register