Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে নীল নক্ষত্র

maro news
অণুগল্পে নীল নক্ষত্র

সাধু, সাধু, সাধু

কবিতাটা পড়ে কি ঘুম পেয়ে গেল নাকি? আমি তো ঘুমপাড়ানি গানের কথা কিছু লিখিনি। উলঙ্গ মানুষের কথা লিখেছি ।

আজ থেকে তিনশো বছর আগে হগ সাহেবের বাজারে উলঙ্গ পুরুষ, মহিলাকে সার বেঁধে দাঁড় করিয়ে গোহাটের গরুর মতো বেচে দেওয়া হতো।

ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর তখন রমরমা অবস্থা।আড়কাঠিদের পোয়াবারো তখন দেখে কে ! অভাব যেখানে অভিশাপ সেখানেই আড়কাঠিদের আনাগোনা, মাল পাচার হয়ে যায় দিনে রাতে। হরেক রকম মালের হরেক রকম নাম মাহাত্ম্য। ক্রীতদাস ক্রীতদাসী সেবাদাস, সেবাদাসীর সাথে উপরি পাওনা যৌন দাস দাসী। যে নামেই ডাকা হোক না কেন সবাই বাজারী মাল।।

সোনাগাজীর জহুরীর চোখ। সাইথিয়ার অমলা, যশোরের বিমলা, নদীয়ার কমলা, কুলতলীর রমলা এক রাতে পাচার হয়ে যায় হগ সাহেবের ডেরায় , সেখান থেকে রাতারাতি কাশিমপুরের সাহেবদের নীলকুঠিতে।

সুগন্ধি সাবান মেখে চান করে , ছেঁড়া শাড়ি ,বেলাউজ টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে লাল, নীল গাউন পরে সাহেবদের সাথে ফিটন চড়ে সাঁঝের বেলায় গঙ্গার পাড়ে হাওয়া খেতে যাওয়ার রোজনামচা সোনাগাজীর নখদর্পণে।

কয়দিন বাদেই তো আবার তারই মহল্লায় ভাটার টানের লাগি ফিরতের কথা তো জানাই আছে । সব কথা জানে ওই এক বুড়ি বোষ্টুমী। যাই বলো তুমি ঐ বুড়ি বোষ্টুমির মুখের ভাষায় অশ্লীল কথা ধোয়া তুলসী পাতার মতো সুন্দর হয়ে গেছে। সবাই এখন কয় ওরা তো বেবুশ্যে।

সাহেবদের ভারি বয়েই গেছে এই সব কেলো ভূতের কথা শুনতে। রোজ সন্ধ্যায় নাচা গানার মেহফিল, সাথে হুইস্কি সোডা আর মুরগি মটন। হাই শেলী, হাই নেলী, হাই সুইটি, হাই বিউটি তখন এক এক জন বঙ্গ ললনার এক একটি নতুন নাম,। ঢুলু ঢুলু চোখের পাতায় ঝাড়বাতিটার ঠিকরে পড়া নীল রোশনাইয়ের এক ধাক্কায় হারিয়ে গেছে বাংলা মায়ের অভাবী মেয়েরা। ধাক্কা বলে ধাক্কা, লাল মুখো বেবুনের ধাক্কা ।সবাই জানে এরই নাম অযোধ্যায় রাম ধাক্কা।

এত কিছুর পরেও একটাও গলি ,ঘুজি কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না ,যেখানে ক্লাইভ ষ্ট্রীটের লর্ড ক্লাইভের মতো হগ সাহেবের নামটাও জ্বলজ্বল করতো আজও। ইতিহাসের পাতায় তো সেইরকম কিছু লেখা নেই বলেই জানি তবে মনে হয় এর পেছনেও জগৎশেঠ আর মীরজাফর দুজনেরই কালো হাত কাজ করেছে।

ক্লাইভ ব্যাটা এক ধুরন্ধর শয়তান। এলিজাবেথ ম্যাভাম ক্লাইভ ব্যাটাকে হাড়ে হাড়ে চিনতে পেরেছিলেন।তাই কোম্পানির কাজ নিয়ে ওনার কোন চিন্তাই ছিল না। আর এদিকে রাতে মশা, দিনে মাছির সাথে পাল্লা দিয়ে নীলের চাষ, আর লবণের আড়তের তখন পোয়াবারো। কারোর পৌষমাস, কারোর সর্বনাশ। কারোর গলায় ফাঁসির দড়ি, কারোর গলায় রায়বাহাদুরের তকমা জরি।

পাল্লা দিয়ে গজুবাবু লালুবাবু , কালুবাবুদের বাড়বাড়ন্ত। এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ। সব কিছু কেনাবেচার খেলা রে ভাই কেনাবেচার খেলা এই হট্টমেলার দেশে।

দুষ্টু লোক মন্দ কথা কয় আড়ালে, আবভালে। কবিতা আউরায়....."বণিকের মানদন্ড দেখা দিল রাজদন্ড রুপে।"

"দেখা দিছে , দেখা দিছে*... তোর কি রে হালার বেটা হালা। তোরে কেডা এই কথা কইছে ক' দেহি আমারে।....... ভরদুপুরে সোনাগাজীর সে কি হাঁক ডাক।!

ওরে পদা, গড়গড়াহান একটু আগাইয়া দ্যান দেহি, দুইডা সুখটান দেই। সন্ধ্যা লাগলেই তো রোশনী বাঈয়েয় ঝুমুর ,ঝুমুর, নুপুর বাজার আওয়াজ, মালের ফোয়ারা, হাস্নুহানার ন্যাশা.......

তাকিয়াতে এলাইয়া বাবু কন সাধু, সাধু ,সাধু।।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register