Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

এক মাসের গল্পে পাপড়ি ভট্টাচার্য (পর্ব - ৩)

maro news
এক মাসের গল্পে পাপড়ি ভট্টাচার্য (পর্ব - ৩)

ক্যানভাসে নানা রং

আমাদের বন্ধুদের মধ্যে দোলা আর ধীরাজ বিয়ে করে দুবাই চলে গেল। দুজনে চাকরি করে। সোমার সমন্ধ করে বিয়ে হলো সাদা সিধে রুদ্রর সাথে।ও রেলের স্টাফ। থাকে বৈদ্যবাটিতে। একদিন অনন্যা ঠোঁট উল্টে সৃজনীকে বলল,সোমার মতো এত সুন্দরী উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ে কি করে এমন একটা বিয়েতে রাজি হলো ভাবা যায়না। কলেজ লাইফে কারও সঙ্গে ব্রেক আপ হয়েছে বলে কি যেমন তেমন একটা বিয়ে করে ফেলতে হবে? মনে মনে ভাবলাম ওর কথা শুনে, অনন্যা বলতে গেলে সোমার উপকার করেছে অজান্তেই।নইলে স্বরূপকে কি চিনতে পারত? দেখতে দেখতে পাড়ার সব ছেলে মেয়ে দের বিয়ে হয়ে গেল। পড়ে রইলাম আমি আর অনন্যা। অনন্যা আমাকে খোঁচায় কিরে সৃজনী তোরও সমন্ধ দেখছে নাকি? অনেক কথা চেপে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে।বলনারে, ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্টে আছে নাকি কেউ। তবে দেখিস এদের মতো হুট করে বিয়ে করে ফেলিস না।আরে লাইফটাকে এনজয় কর। ছেলেদের না চিনে না বুঝে গলায় ঝুলে পড়লেই হলো?ভাল চাকরি ঠিক আছে।আরে বাবা একটু গুড লুকিং,হ্যান্ডসাম হওয়া তো চাই।তুই কি বলিস? তবে তোরা যাই বলিস সোমার হাজব্যান্ড কে আমার একদম পছন্দ নয়। আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম - সোমা যদি খুশি থাকে তোর আমার কি এসে যায়। আমি খেয়াল করছি, অনন্যা আবার নতুন প্রেমে জড়িয়েছে। ফেসবুকে ডিয়ার ফ্রেন্ড বলে ছবি দিয়েছে। তবে ছেলেটা ফাটাফাটি দেখতে। আমি পিএইচডি করতে মুম্বাই চলে আসি। ফেসবুকের সামান্য লিন্ক ছাড়া দুবছর তেমন কোন যোগাযোগ ছিলনা।পাড়ার অনেকেই পুরোনো বাড়ি বিক্রি করে ফ্ল্যাট কিনে এদিক ওদিক চলে গেছে। সোমা আর দোলাকে ফেসবুকের ছবি পোস্ট দেখে দেখে বুঝতে পারি ওদের ছেলে মেয়ে নিয়ে জমজমাট সংসার। জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, রেস্টুরেন্ট এ খাওয়া দাওয়া হরদম চলছে। এবার একটু নিজের কথা বলি। আমি বিয়ে করেছি আমাদের ইউনিভারসিটির একজন প্রফেসরকে। প্রস্তাবটা ওঁর দিক থেকেই ছিল মায়ের খুবই পরিচিত। বেশ কয়েকবছরের সিনিয়র আমার থেকে। তবে দেখে একদম বোঝা যায়না।আমরা দিল্লিতে স্যাটলড সেও প্রায় এক বছর হয়ে গেল। দোলা,সোমাদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে।ওরা আমাকে আ্যড করেছে। অনন্যাকে রাখেনি।চ্যাট ফলো করে জানতে পারলাম অনন্যা একের পর এক বয়ফ্রেন্ড বদলাচ্ছে। ছেলেরা যেন ওর জামা কাপড়। কয়েক মাস অন্তর বদলে ফেলছে। শেষ মেষ একটা রাজপুত্র জুটল। দেখতে সুন্দর খুব। বাড়ি গাড়ি প্রচুর সম্পত্তির মালিক। বাবা আছে মা নেই।এক পিসি আছে। ও কবে বিয়ে করে ফেলেছে, কেউই জানেনা।ওরা দিল্লিতে থাকে। অনন্যা দিল্লিতে থাকে যখন একদিন ঠিক দেখা হয়ে যাবে।ও ওর বরের সঙ্গে প্রচুর আউটিং এর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে। বেশ চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নানা ট্যুরিস্ট স্পটে নানা বয়সী বাচ্চাদের ছবি। তবে দামি ক্যামেরায় নিখুঁত ছবিতে অনন্যার সাজগোজ খুব উগ্র। জমকালো শাড়ি, ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। এদিকে ব্লাউজের হাতা আনফিট। ইশ্ একদম ভাল দেখাচ্ছে না। এদিকে ফেসবুকের নানা কমেন্ট এর উত্তরের মাধ্যমে ও জানায় ওর বর সবকিছুতে সেরা।বোকা বোকা ওর পাবলিকলি করা কমেন্ট পড়ে সবাই হাসাহাসি করে। অনন্যার বাবা,মা আমার বাপের বাড়ির পাড়ায় আর থাকেননা। অনন্যার আই ডোন্ট কেয়ার মনোভাবের জন্য বাবা মাও অনেক ভুগেছেন মেয়েকে নিয়ে।ও যাদের সাথে মিশেছে তাদের কে ছাড়ার জন্য অনন্যা যে কোনো বিপদে পড়েনি এটা ওর ভালো ভাগ্য। তাই ও কলকাতা, মফস্বল ছেড়ে দিল্লির ছেলে বেছে নিল। অনন্যার বাবা কলকাতায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। সৃজনীর মা বলল, সম্ভবত ওদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়েছে। ছেলের বাড়িতে রিসেপশনের ছবি ফেসবুকে দিয়েছে ওরা। দেখতে দেখতে আরও বছর তিনেক কেটে গেল।সবাই সংসার নিয়ে ব্যস্ত।ঐ ফেসবুকের মাধ্যমে সামান্য যোগাযোগ। এখন এটাই সুবিধা।চ্যাট ম্যাসেজ পড়ে সব জানা হয়ে যায়। ছোটবেলার বন্ধু, বড়বেলার বন্ধু সবাই বছরভর খুব ব্যস্ত থাকি। তবে দুর্গা পূজা এলেই সবাই চায় একবার দেখা হোক। সবাই মিলে ঠিক হলো একটা গেট টুগেদার হবে। কলেজের বন্ধু, স্কুলের বন্ধু সবাই। স্বামী স্ত্রী আর ছেলেমেয়েরা।এই ফ্যামিলি গেট টুগেদার হবে চাঁদা তুলে ।একটা বিয়ে বাড়ি ভাড়া করে।নাচ,গান খানা পিনা নিয়ে জমজমাট জমায়েত। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মেনু থেকে অনুষ্ঠান,ক্যাটারার সব ঠিক করে ফেলল সবাই দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে। বিজয়ার দুদিন পরে একটা রবিবার।

ক্রমশঃ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register