Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

maro news
অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

ভাগ্য

দিল্লি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলো রাজধানী এক্সপ্রেস। সকাল দশটা। জানা গেলো সামনে রেললাইনে ফাটল ধরেছে। কতক্ষণে লাইন সারাই হবে তা জানা গেলো না। দিল্লি থেকে নাকি রিপেয়ার ভ্যান আসছে। আগের দিন বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ছেড়েছে ট্রেন। যাত্রীদের মধ্যে অনেক গণ্যমান্য মানুষ আছেন, হয়তো। অনেকেরই হয়তো ট্রেন থেকে নেমেই কোন জরুরী কাজ সারার কথা। সবাই তাই চিন্তিত। আমার আবার বিকেলের ফ্লাইট প্যারিস যাওয়ার।

এদিকে দেখছি একটি স্লিপার কামরা থেকে একদল ছেলে নেমে পড়ে এগিয়ে গেছে লাইনের পাশে গ্রামের খেলার মাঠে। সেখানে গ্রামের কয়েকটি ছেলে ক্রিকেট খেলছে। ওরাও ওদের সাথে যোগ দিল। গ্রামের ছেলেরাও উৎসাহে ওদের সঙ্গে খেলা শুরু করলো। শুনলাম কলকাতার কোন কলেজের একদল পড়ুয়া চলেছে এক্সকারশনে। ঘটনা যেখানে ঘটছে সেটা ট্রেনের শেষ দিক। আমিও মাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটু পরে দেখি গার্ড সাহেবও দিব্বি নেমে পড়েছেন। নিজের কামরার কাছে দাঁড়িয়ে দূর থেকে খেলা দেখছেন।

হঠাৎ ট্রেনের সামনের দিক থেকে হৈ চৈ শোনা গেলো। দিল্লি থেকে রিপেয়ার ভ্যান নাকি এসে গেছে। উৎসাহী ছেলের দল খেলা ছেড়ে চললো ইঞ্জিনের দিকে। ইঞ্জিন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফাটলের জায়গাটা। ওরা ওই দিকেই এগিয়ে গেলো। কি ভেবে আমিও ওদের সঙ্গী হলাম। দুশ্চিন্তা বিকেলের ফ্লাইট না মিস করি!

যথাস্থানে পৌছে দেখি কাজ শুরু হয়ে গেছে। এক পিস রেল লাইন নিয়ে এসেছে ওই ভ্যান। ঘন্টাখানেকেও কাজ শেষ না হওয়াতে আমি পাশে দাঁড়ানো রেলের ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশ্ন করলাম আর কতক্ষণ লাগবে। উনি উত্তরে জানালেন, মনে হচ্ছে আরো এক ঘন্টা। আমার মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া “হায় ভগবান” শুনে উনি বললেন যে উনিও ভগবানকে ডাকছেন। ওঁর মেয়ে প্যারিসে অসুস্থ। বিকেলের ফ্লাইটে ওঁর রওনা দেওয়ার কথা। ইমার্জেন্সি কল পেয়ে ওঁকে কোয়ার্টার থেকে আসতে হয়েছে।

আমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। মনে হলো অ্যাড্রিন্যালিনের প্রবাহ বেড়ে গেছে। আমি আর আমাতে নেই। ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে নিজের কামরা ফিরে বার্থে শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকলাম এই বিরাট দুর্ঘটনা থেকে কোন রকমে বেঁচে গেছি। সেই না ঘটা দুর্ঘটনার দুই সাক্ষী আবার একই ফ্লাইটে যাবো। আমি ভাগ্য মানি। আট আঙুলে পরা আংটির জোরে এক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলাম বটে, কিন্তু বিকেলের ফ্লাইটের যাত্রার শুভাশুভ তো আমার হাতের আংটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইঞ্জিনিয়ারের ভাগ্যে কি আছে আমি জানি না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register