Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

maro news
অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

মায়ের মন

বাবা মারা গেছেন অনেকদিন। তিন বোন বিবাহিত। সম্পন্ন ঘরে বিবাহ হয়েছে শহরে। গ্রামে ওরা কেউ থাকতে আসবে না। ওরা জানিয়েও দিয়েছে যে পৈতৃক সম্পত্তিতে ওদের কোনো দাবি নেই। বাকি তিন ভাই সবাই গ্রামে থাকে। বর্ধিষ্ণু গ্রাম পলাশদিহির মুখার্জি বাড়ির তিন ছেলেই গ্রামে পাকাপাকি থাকবে। বড় ভাই বিনয় পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান। মেজ ভাই বিমান চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সস্ত্রীক গ্রামের বাড়িতে থিতু হয়েছে। একমাত্র মেয়ে ব্যাঙ্গালোরে কাজ করে। জামাইও সেখানে। হয়তো একদিন ওখানেই পাকাপাকি বাসস্থান গড়ে নেবে। ছোট ভাইয়ের কাপড়ের ব্যবসা। মোটামুটি চলে যায়। মেজ ভাই এসেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সম্পত্তি ভাগ করে নিতে। তাহলে সে নিজের অংশে নিজের মনমতো বাড়ি করে নেবে। মোট জমি প্রায় বারো কাঠা।

জমির বাটোয়ারা করতে গিয়ে সমস্যা দাড়িয়েছে একশো বছরের প্রাচীন তুলসীমঞ্চ নিয়ে। সার্ভেয়ার এবং উকিল দুজনেই সমাধান দিয়েছেন তুলসীমঞ্চ ভেঙ্গে দেওয়ার। সবার প্রিয় মা রাজী নন। উনি বেঁকে বসেছেন। আর সত্যি কথা বলতে কি তিন ভাইও এই ভেঙ্গে ফেলা মেনে নিতে চাইছে না।

এই ভাবে মাস তিনেক কেটে গেলো। মেজ ভাই বাড়ি বানাতে পারছে না বলে প্রায়ই কথা শোনায় মাকে এবং দুই ভাইকে। শহুরে মেজাজটা ওকে পরিবারের অন্যদের থেকে একদম আলাদা করে দিয়েছে। ওর এই ব্যবহারে ওর স্ত্রীও খুব ইতস্তত করে। আলাদা ভাবে শাশুড়ির কাছে এসে সান্ত্বনা দেয়। মাও ভাবেন কি করা যায়। মাকে নিয়ে তো কোন সমস্যা নেই। কারণ ভাইরা নিজেরা মেনে নিয়েছে মা প্রত্যেকের কাছে পালা করে থাকবে।

একদিন মা নিজের ঘরে সবাইকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, “তোদের বাবার ব্যাঙ্কে যে টাকা আছে তা দিয়ে তুলসীমঞ্চের পাশে আমার জন্য একটা ঠাকুরঘরসহ ঘর বানিয়ে দে।” সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

একটা কথা কারোরই মাথায় এলো না মায়ের অবর্তমানে মায়ের জন্য বানানো নতুন ঘরের ভবিষ্যৎ কি হবে। স্বেচ্ছায় সবার থেকে সরে গিয়ে সবার অজান্তে এক প্রশ্ন চিহ্নের বীজ বপন করে গেলেন মা। এই কি মায়ের মন......?

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register