Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে পার্থপ্রতিম পাঁজা

maro news
অণুগল্পে পার্থপ্রতিম পাঁজা

নারীমুক্তি

"এটা কি ঘর ঝাঁট দেওয়া হচ্ছে,নাকি নেত্য হচ্ছে? শুধু তো কোমর দুলিয়ে আর ঝাড়ু বুলিয়েই চলেছিস। কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে? সব সময় ফাঁকিবাজি! এইভাবে কাজ করতে লজ্জা করে না? টাকা কি গাছে ফলে নাকি? ঠিক করে কাজ কর, নাহলে কাল থেকে ছাড়িয়ে দেব বলে দিলাম।" মালতি কিছু একটা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু চুপ করে গেল। ম্যাডামের মেজাজ সে জানে। এতদিন ধরে কাজ করলেও সত্যি সত্যি উনি আগামীকাল থেকে তাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিতে পারেন। করোনার আকালের পরে হঠাৎ করে কাজ চলে গেলে খাবে কী, রুগ্ন স্বামী, ছেলেমেয়েদের মুখেই বা কী তুলে দেবে? তাই অভিযোগটা সম্পূর্ণ মিথ্যে হলেও সেটা চুপচাপ মুখ বুজে হজম করে নেয় মালতি। কাজের মেয়ে বই তো নয়, লাথি ঝ্যাঁটা তো খেতেই হবে। এমন সময় বড় একটা হায় তুলতে তুলতে বাড়ির বৌমা কণা সেখানে হাজির। আর যায় কোথায়। গিন্নির সমস্ত রাগ সিপ্টেড হয়ে গেল তার ওপর-- "অয়, মহারানীর এবার ঘুম ভাঙলো! তা কী খাবেন, চা না কফি?" "এমন করে বলছেন কেন? জানেন তো আপনার ছেলে কত রাত করে বাড়ি ফেরে। তারপর ঘুমোতে ঘুমোতে মাঝরাত হয়ে যায়। আমি কী করবো? নিজের ছেলেকে বলুন।" "এসব বলে সুবিধা হবে না বাছা। সংসার করতে করতে চুল পাকিয়ে ফেললুম। খাবার বেলায় তো ভালোই আছো, শুধু কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা! আজকে তোমার খাওয়া বন্ধ, বোঝা গেল? এবার বাপের বাড়ি থেকে খাওয়া-দাওয়া আনবে বুঝলে? এখানে খাওয়া-দাওয়া পেতে হলে কাজকর্ম করতে হবে, সোজা কথা।" শাশুড়ির কথায় আকাশ থেকে পড়ে নতুন বৌমা। মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে! তাও আবার কাজের লোকের সামনে! কাজের মেয়ে মালতি এসব কথা শুনে মনে মনে ভাবে-- ভাগ্যিস আমি এই বাড়ির কাজের মেয়ে, বউমা নই। অন্তত খাবার খোঁটা আমাকে সহ্য করতে হয় না। কেন যে মরতে প্রেম করে এই বাড়িতে বিয়ে করতে গেছিল মেয়েটা! ভাগ্যে না জানি আরো কত দুঃখ আছে ওর...... "কিরে তোর নেত্য শেষ হলো, নাকি এখনি ধাক্কা দিতে হবে? কামচোর কোথাকার! আর নবাব নন্দিনী, কথাগুলো কি কানে ঢুকেছে, নাকি কান ধরে কথাগুলো বুঝিয়ে দিতে হবে?"-- ঝাঁঝিয়ে ওঠেন রায় গিন্নী। "টিংটং টিংটং"--দরজার বেল বেজে ওঠে। মালতি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। কয়জন হোমরা চোমরা লোক ঘরে ঢোকে। "ম্যাডাম আমরা প্রগতি সংঘ থেকে এসেছি। আমি সভাপতি, ইনি সম্পাদক। আগামী রবিবার আমাদের খেলার মাঠে নারী-প্রগতির উপরে একটা বড় উৎসব হবে। সেই উৎসবে আপনাকে সভানেত্রী হতেই হবে।" "আমাকে আবার কেন?" "আপনি হলেন সারা বাংলা নারী মুক্তি সমিতির সভানেত্রী। আপনাকে ছাড়া এত বড় সভার চেয়ারে কাউকে মানায়? দেশের নারী মুক্তিতে আপনার অবদান তো অমূল্য, অভূতপূর্ব........ " তা শুনে গর্বে গদগদ ম্যাডামের মুখের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে মালতি আর নতুন বৌমা।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register