Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গারো পাহাড়ের গদ্যে এস এম শাহনূর (পর্ব - ৩)

maro news
গারো পাহাড়ের গদ্যে এস এম শাহনূর (পর্ব - ৩)

মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য: কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

➤শৈশবকাল:

মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের বাল্যকালে লেখাপড়ার প্রতি ছিল প্রচণ্ড আগ্রহ, ৫ বৎসর বয়সে মহেশচন্দ্রের হাতে খড়ি হয়।তাঁর ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শিখে বিদ্বান হবেন, প্রচুর জ্ঞান অর্জন করবেন, কিন্তু অর্থের অভাবে সেই ইচ্ছা তাঁর পূরণ হয়নি। পিতা ‘ঈশ্বর দাস আজীবন নিজবাড়ির চতুষ্পাঠীতে নিরন্তর অধ্যাপনা করতেন। এক দিনের জন্যও জ্ঞানচর্চা থেকে বিরত হন নি। জ্যেষ্ঠভ্রাতা আনন্দচন্দ্র ভট্টাচার্য্য স্মৃতি , ব্যাকরণ ও ক্রিয়াকাণ্ডে বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। এরূপ পারিবারিক আবেষ্টনহেতু মহেশচন্দ্রের চরিত্রেও শাস্ত্রানুশীলন ও জ্ঞান বিস্তারের প্রতি একটি গভীর শ্রদ্ধা এবং প্রবল অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়।’১ প্রখ্যাত জ্যোতিষী রামায়ণ আচার্য্য কোষ্ঠি করে বলেন,” ১১ বছর পর্যন্ত মহেশের পড়ালেখা হবেনা। কিন্তু ভাগ্য হবে রাজার মত।” তাই ১০/১১বছর পর্যন্ত তিনি পড়ালেখা না করে সংসারের কাজ ও ভ্রমণ করে বেড়াতেন। হঠাৎ একদিন মনে হল সমবয়সীরা লেখাপড়া করে আমিও লেখাপড়া করব।গোপাল রায়ের অবৈতনিক পাঠশালায় ২ মাস কলাপাতায় লেখালেখি করলেন।বিপিন বাবুর স্কুলে ভর্তি হলেন কিন্তু বিদ্যালয়ে কলম চুরির মিথ্যে অপবাদে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হল।এ অপবাদ ও অপমানে তিনি ১ বছর পড়াশোনায় মন বসাতে পারেননি।সবসময় বাড়িতে বসে থাকতেন। কৈলাস বাবু স্কুলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩ বছর পড়ালেখা করলেন।বাড়িতে প্রদীপের তৈল না থাকায় তিনি শিক্ষকের বৈঠকখানায় পড়ালেখা করতেন।মহেশ বাবুর যখন জন্ম হয় তখন ঘরে প্রদীপের আলো ছিলনা।কারণ বাতি জ্বালোর মত কেরোসিনও ঘরে ছিলনা। মহেশ চন্দ্র যখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। একদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের স্কুল পরিদর্শক Mr. C B Clarke বিটঘর টোল পরিদর্শনে এসেছিলেন। ক্লাসে পরিদর্শকের সকল প্রশ্নের উত্তর একমাত্র মহেশই দিতে পেরেছিল।গ্রামের লোকজন এ প্রথমবার শান্ত বালক মহেশের উপর আস্থা স্থাপন করতে পেরেছিল।তার বোনের শ্বশুর বাড়ি শ্যামগ্রাম ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি ৭/৮ মাস পড়ালেখা করেন বলেও জানা যায়। ১৮৭১ সালের দিকে দারিদ্র্যের কারণে ভাগ্যান্বেষনে তিনি কুমিল্লা শহরে চলে আসেন।বাড়ি থেকে অন্য কোথাও যাক বাড়ির কেহই তা চাননি। ১৮৭১ -১৮৭৭ কুমিল্লায় পড়তে যাবে শুনে শিক্ষক কৈলাস চন্দ্র এবং তার মা অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।মাকে বললেন,”কুমিল্লায় পরীক্ষা আছে” আর শিক্ষক কৈলাস চন্দ্র কে বললেন,”শ্যামগ্রাম ভগ্নিপতির বাড়িতে কাজ আছে” এ কথা বলে বালক মহেশ কুমিল্লায় চলে আসেন।সেখানে তাকে অন্যের বাসায় পাচকের কাজ করতে হতো। মহেশচন্দ্রের লেখাপড়ার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে বাড়ির কর্তা তাকে প্রথমে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুল এবং পরে কুমিল্লা জেলাস্কুলে ভর্তি করে দেন। রাজা ও জমিদারদের ছাত্রবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা চালাতেন।পূজার সময় যজমানে কয়েকটি ধুতি পেতেন।তা পরে অতি কষ্টে দিন কাটাতেন।ছোটবলা গ্রামের লোকজন ও আত্মীয় স্বজন মহেশকে নিয়ে উপহাস করত।ছেলেবেলায় মহেশ খুব কৃপণ স্বভাবের ছিল।একবার তিনি ত্রিপুরা জেলা জজ F C Folwi এর কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। উত্তরে জজ সাহেব লিখলেন, “গরীব হলে লেখাপড়ার চেষ্টা না করে ব্যবসা করা উচিৎ। ” “গ্রামে নিতান্ত বালক বয়েসে দারিদ্রে জর্জরিত মহেশ চন্দ্র যজমান বাড়ীতে ভোজন ও দক্ষিণা যা পেতেন তা মাকে না দিয়ে নিজের কাছে জমা রেখে শহর থেকে খাতা -পত্র,ইত্যাদি ক্রয় করে এনে তা গ্রামে বিক্রি করে তিনি কিছুটা লাভ করতেন।লাভের অংশ দিয়ে তিনি তাঁর প্রয়োজনীয় বইপত্র কিনতেন।”
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register