Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কর্ণফুলির গল্প বলায় স্বপঞ্জয় চৌধুরী (পর্ব - ৫)

maro news
কর্ণফুলির গল্প বলায় স্বপঞ্জয় চৌধুরী (পর্ব - ৫)

পরজীবী

  পাঁচ রাত বাড়ছে খিলগাঁও ফুটওভার ব্রিজের ওপর শুয়ে আছে সেলিনা। তার গায়ে একটা অর্ধছেড়া ময়লা কাঁথা। ছেলে মেয়ে দুটোও মায়ের কাছে বসে ঝিমুচ্ছে। এরই মধ্যে সুকন্যা তার স্যালোয়ার মেখে ফেলেছে রক্ত আর প্রসাবে। বাতাসে কাচা রক্ত আর প্রসাবের মিশ্রণে এক অদ্ভূত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একটি দূরেই শুয়ে ছিল একজন পঞ্চাশোর্ধ ভিখারি। তার নাম জুলমত ফকির। ভিক্ষা করে বলে তার উপাধি ফকির নয় তার বংশের নাম ফকির। তার বাবা হাসমত ফকির ছিল তার অঞ্চলের বিরাট কবিরাজ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নয়নের ফলে তাদের আদি পেশা আজ বিলুপ্তির পথে। মানুষ এখন আর ডায়েরিয়া হলে পানি পড়া খায়না। তারা তিন আঙ্গুলের এক চিমটি লবণ আর গুড় মিশিয়ে স্যালাইন বানানো শিখে গেছে। জুলমত ফকিরের একটু আলুর দোষ আছে তাই এই ওভারব্রিজে কোনো নারী ঘুমায় না। যাও দুই একজন ঘুমায় হাতে চাক্কু নিয়া ঘুমায়। বেশি তেড়িবেড়ি করলে এক পোচে ভুড়ি চালান করে দিবে। জুলমত ফকির নাকে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে সামনে আসে। ‘ ওই মাতারি হাইগা, মুইতা দুনিয়াদারি এক কইরা ফালাইছস দেহি। বাতাসে মুতের গন্ধ’ সেলিনা আস্তে আস্তে চোখ মেলে জুলমতের দিকে তাকায়। কোন কথা বলেনা। জুলমতের তর্জন গর্জনে সুকন্যা আর সাদিবেরও লেগে আসা চোখ খুলে যায়। ‘ কি এই লাইনে নতুন, পোলাপান দুইডা কি তোমার না ভাড়া করা?’ সেলিনা কোনো কথা না বলে হু হু করে কেঁদে ওঠে। ‘ওহহো এই মাইয়া মাইনষের একখান দোষ, কিছু পারুক আর না পারুক, ফ্যাচ ফ্যাচ কইরা কানবার পারে।’ জুলমত পকেট থেকে পাঁচ টাকার একটা কয়েন বের করে বলে- “ ওই ফ্যালাই ওভারের কোনাডায় একটি পাবলিক টয়লেট আছে। আগে যাও মাইয়াডারে পাক পবিত্র কইরা আনো। গন্ধে ঘুমাইতে পারতাছি না।” সেলিনা মেয়ে সুকন্যাকে নিয়ে টয়লেটে যায়। সাথে একটা নতুন স্যালোয়ার আর কিছু টিস্যু বের করে ব্যাগ থেকে। ছেলে সাদিব বসে বসে ঝিমোয় পুটলিতে ঠ্যাক দিয়ে। জুলমত সাদিবের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে তার দিকে এগোয় সাদিবের প্যান্টের চেইন খোলার চেষ্টা করে। সাদিব সজোরে এক লাখি মারে জুলমতের বুকে। জুলমত হতকচিত হয়ে যায়। সাদিবকে একটা চড় বসিয়ে দেয়। বদমাইশ পোলা প্যান্টের চেইনটা ঠিক কইরা দিতে চাইলাম আর তুই লাত্থি মারলি। ভাবছিলাম গরম কেথার নিচে তরে শোয়ামু। সালার হিরুঞ্চু মিরুঞ্চু কই থিকা আহে। জুলমতের পিছনেই চাকু নিয়ে দাড়িয়ে ছিল চল্লিশোর্ধ এক নারী। তার নাম আসমা, তার তিনকুলে কেউ নেই স্বামী পরিত্যাক্তা, ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। জুলমতের গলায় চাক্কু তাক করে বলে- ‘ কিরে বুইরা খানকির পো- দিমুনি পোচ’, তোর কাছে কোনো বাছ বিচার নাই শালা।’ তরে যাতে এই বিরিজে না দেহি মাঙ্গির পো, ভাগ।'
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register