Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

আন্তর্জাতিক || পাক্ষিক পত্রপুট || এ উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় (ধারাবাহিক)

maro news
আন্তর্জাতিক || পাক্ষিক পত্রপুট || এ উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় (ধারাবাহিক)

একবচন বনাম বহুবচন

প্রথম পর্ব

প্রতিদিন একই কথা ভাবা ঠিক নয়। একই রকম মুখ করে বসে থাকা ঠিক নয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একঘেয়েমি মন খারাপের মূল। দুঃখ নিয়ে রোজ ভাবা ঠিক নয়। দুঃখ অনন্ত হলেও সেটা মেনে নিয়ে দুঃখ পাওয়া অনুচিত। অতিরিক্ত দুঃখ প্রীতি বিলাসিতা। আমাকে মানায় না। কার্যত বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রেই তাকে এড়িয়ে চলে। পালিয়ে যাওয়া না গেলেও, এড়িয়ে যাওয়া তো কঠিন নয়।বিশেষত তেমন দুঃখের কিছু নেই যখন। দুঃখে ডুবতে ডুবতে যারা সত্যিই দুঃখী, আলাদা করে তাদের দুঃখের কোনও উপলব্ধি নেই। তাহলে কি সুখের কথা ভাবা উচিত? সুখ ব্যক্তি নিরপেক্ষ। খুব উঁচু বাড়ির খিলানে হয়ত দুঃখ বসে থাকে। শিকারি বিড়ালের মতো হামাগুড়ি দেয় কোনও সংক্রামক হাওয়া। আমরা একবচনে যা ভাবি, বহুবচনে সেটা ঠিক নাও হতে পারে। দুঃখের চেহারা বড়ো কদর্য। খুব সাহস না থাকলে দুঃখের ধারে কাছে যাওয়া উচিত নয়। ওই আগুনের আঁচ গায়ে লাগলে ফোস্কা পড়ে যেতে পারে।আমাদের কার্যত অভাব বোধ প্রচুর। আমরা সেগুলো তৈরি করি। যেই মিটে যায়, অমনি পরের কোনও অভাব তৈরি হয়ে যায়। খিদে, আশ্রয় আর একটু পোশাক যাদের সুখের জন্যে যথেষ্ট, তাদের ওর বাইরে কোনও অভাব নেই। আবার পৃথিবীর সব সুখ যারা ভাগ করে নিয়েছে, তারা বড়ো দুঃখী। তাদের ধারে কাছে কেউ ঘেঁষতে পারে না।দেহরক্ষী ছাড়া তারা এক পাও ফেলতে পারে না। একবচনের পক্ষে দুঃখ সুখের মাপ জোক করা ঠিক নয়। তবু আজ কেবল এই ব্যাপারটার ভেতরেই মোক্ষলাভ করতে চাই। দশ টাকার দশটা ধূপ যে ঘরে ঠাকুর দেবতার বরাভয় নিয়ে চলে আসে, সে ঘরে ধূপ নিয়ে কোনও অশান্তি নেই। যে ঘরে দেবতা নিজে দামি, সে ঘরে অন্যতর ধূপের জন্যে জীবন মরণ পণ। খাবার লোক নেই।অথচ প্রচুর খাবার। নষ্ট পোশাক, নষ্ট খাবার। সেই তাদের সুখ। যারা পথের দু ধারে দাঁড়িয়ে লিমুজিন গাড়ির ভেতরে বসে থাকা দামি মানুষের জয়ধ্বনি দেয়, তারা ওতেই সুখী। কিমাষ্চর্যম! ঘরে ওদের গাদা গুচ্ছের দুঃখ গুঁতিয়ে বেড়াচ্ছে।হুঁশ নেই। তাই একবচনের জন্যে হেসে অস্থির। চালাকদের সুখ দুঃখীকে নিংড়ে নিঃস্ব করেও সুখী নয়। আর দুঃখীর দুঃখ আরও দুঃখী হবার ফাঁদে পা দেওয়া। মহাপুরুষগণ এই নিয়ে অনেক তথ্য ও তত্ত্ব দিয়েছেন। আমি কেবল এক আর বহুতে দুঃখ, দুঃখের আপেক্ষিকতা নিয়ে একটু কথা চালাচালি করছি মাত্র। আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবন চর্যার মূল উপাদান তো ওই সুখ আর দুঃখ। তাই কোনটা সুখ আর কোনটা অসুখ বুঝে নিতে পারলে একবচনের আর বহুবচনের লাভ। ডাল ভাত যার জোটে না, তার যেমন মাছ মাংসের অভাব বোধ তৈরি হয় না, তেমনই যাদের সব খাবার জোটে, তাদের খাবারেই অরুচি।প্রথমজনের দুঃখ সুখের কোনও হেরফের নেই, সে যা পায় তাতেই সুখী, আর যেটুকু না হলেই নয়, সেটুকু না পেলেই দুঃখী, তেমনটা সুখের অভাব বোধ থেকে যারা দুঃখী তাদের সঙ্গে আলাদা। মুশকিল অন্যত্র। গরিব মানুষের স্বপ্নে সুখের তাগিদ বুনে দিয়ে তাদের যারা শোষণ করছে তারা কিন্তু নিজেরাও অসুখ বাড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের কৃষ্টি এর ভেতরেই আটকে আছে। বেরুতে চেয়েও পারছেনা। দূরত্ব বাড়ছে। মানুষের মানুষের তিক্ততা বাড়ছে।বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। মানুষেরই সমাজ। অথচ সংখ্যা গরিষ্ঠ সেখানে মনুষ্য পদ বাচ্য হয়ে উঠছে না। একবচন বনাম বহুবচনের এই গোলকধাঁধায় একই চক্রে আবর্তিত হচ্ছে পুরোনো পৃথিবী।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register