Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

আন্তর্জাতিক || পাক্ষিক পত্রপুট || এ পবিত্র রায় চৌধুরী

maro news
আন্তর্জাতিক || পাক্ষিক পত্রপুট || এ পবিত্র রায় চৌধুরী

অনুবাদ ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ

উর্দু ভাষায় শ্রেষ্ঠ কবিদের মধ্যে একটি অন্যতম নাম ফয়েজ আহমদ ফয়েজ। ফয়েজের জন্ম অধুনা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ১৩ই ফেব্রুয়ারী, ১৯১১ সালে। তাঁর মৃত্যু হয় ২০শে ডিসেম্বর, ১৯৮৪ সালে। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, এই আজীবন কমিউনিস্ট কবি চারবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে ফয়েজ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর কলম শুধু গর্জে উঠেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং শেষ পর্যন্ত নিরলস আর ক্লান্তিহীন ছিল। তাঁর জন্মদিনে তাঁকে জানাই হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা এবং প্রণতি। ফয়েজ আহমদ ফয়েজের দুটি কবিতা এখানে নিবেদন করলাম ঠিক যেভাবে গঙ্গাজলে গঙ্গা পুজো করে। কবিতার অনুবাদের জন্য ঋণী হয়ে রইলাম বন্ধু ইজহার হাসান এর কাছে।

ফয়েজ আহমদ ফয়েজের দুটি কবিতা

বাংলাদেশ : ২

এভাবেই হয়ে উঠলো আমার দুঃখ দৃশ্যমান। দুঃখের ধুলো, যা আমার বুকের ভেতর বছরের পর বছর ধরে জমে স্তূপীকৃত হয়েছিল, ফুটে উঠলো আমার চোখের সামনে।

এবং তিক্ততা এত দূর এসে গড়ালো যে, আমার বন্ধুরা আমাকে বললো আমার দুচোখ ধুয়ে ফেলতে, রক্ত দিয়ে।

সবকিছু হঠাৎ আটকে গেল রক্তে। প্রত্যেকটা মুখ, প্রত্যেকটা মূর্তি চার দিকে হয়ে উঠলো লাল। রক্ত আছড়ে পড়লো সূর্যের উপর এবং ভাসিয়ে নিয়ে গেল এর সোনা সোনা রঙ।

আগ্নেয়গিরির মতো চন্দ্র উগরে দিলো রক্ত এবং রূপালি আভা এর, গেল নিভে। আকাশ আনলো বয়ে এক রক্তের সকাল। আর রাত্রি কাঁদলো শুধু রক্ত-ক্রন্দন।

বৃক্ষগুলো শক্ত হয়ে পরিণত হলো রক্তের পিলারে। সমস্ত কুসুম ভরে নিলো চক্ষু তাদের, অশ্র“তে। এবং প্রতিটি চাহনী মুহূর্তে হয়ে গেল যেন তীর;

সে-তীর বিদ্ধ করলো সমুদয় রক্ত-মূর্তি। এ রক্তের নদী বয়ে চললো শহীদদের নাম ধরে কাঁদতে কাঁদতে... দুঃখে, ক্রোধে আর ভালবেসে।

এ নদী বইতে দাও। যদি এটা শেষ হয়ে যায়, তাহলে মৃত্যুর বর্ণে ঢাকা ঘৃণা ছাড়া থাকবে না কিছুই আর। হে বন্ধুরা, এমনটি ঘটতে দিও না কেউ;

বরং ফিরিয়ে আনো আমার সমস্ত অশ্রু- এ এমন এক বন্যা, যা বিশুদ্ধ করবে আমার ধুলোয় ভরা চোখ এবং যা ধুয়ে নিয়ে যাবে আমার দুচোখ থেকে সমস্ত রক্তের দাগ।

কী দিয়ে সাজাবো আমি এ হত্যার উৎসব, নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এই- কী দিয়ে সাজাবো বলো? আমার ক্রন্দনরত রক্ত, হায়, কাড়বে কার মনোযোগ?

হাড্ডিসার শরীরে আমার রক্ত নেই বললেই চলে; যতটুকুই বা অবশিষ্ট আছে, তা দিয়ে তেলের মতো জ্বালাতে পারবে না কোনো বাতি এবং পানের পেয়ালাও ভরবে না জানি তাতে। এ রুধিরে মিটবে না কোনো আগুনের খিদে, নেভাতে পারবে না কোনো জ্বলন্ত তৃষ্ণাও।

লুটপাট হয়ে যাওয়া শরীরে আমার বড়ই অভাব রক্তের। বরং চলেছে সেখানে বয়ে শুধু এক ভয়াবহ বিষ।

যদি ফেঁড়ে ফ্যালো ধমনী আমার, পড়বে প্রতিটি ফোঁটা দিয়ে বিষ, কেউটের ছোবলে যেমন ফেনা ওঠে রক্তে। প্রতিটি ফোঁটাই হলো বহু যুগের যন্ত্রণাক্লিষ্ট আকুল আকাঙক্ষা; প্রতিটি ফোঁটাই হলো বছরের পর বছর ধরে চাপা পড়ে থাকা জ্বলন্ত সিলমোহর।

সাবধান। আমার শরীর একটা বিষের নদী। আমার নিকট থেকে থাকো দূরে। আমার শরীর মরুভূমির প্রচণ্ড তাপে শুকিয়ে যাওয়া কোনো কাঠ। তুমি যদি পোড়াও এ দেহ, দেখতে পাবে না কোনো সাইপ্রাস বৃক্ষ কিংবা জেসমিন ফুল, বরং দেখতে পাবে ক্যাক্টাসে কাঁটার মতো ফুটে থাকা কেবল আমারই হাড়গোড়। তুমি যদি একে ছুঁড়ে মারো অরণ্যের ভেতর, তাহলে তুমি যেন সকালের সুগন্ধির পরিবর্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিলে আমার ঝলসে যাওয়া আত্মার ধুলোকেই । সুতরাং দূরে থাকো আমার নিকট থেকে। কারণ আমার পিপাসা লেগেছে খুব, রক্তের ।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register