Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মেহফিল -এ- কিসসা রঞ্জনা বিশ্বাস

maro news
মেহফিল -এ- কিসসা রঞ্জনা বিশ্বাস

এবং আগস্ট

তুমি ও ওদের কথা বিশ্বাস করছো? সাধারণ মানুষের কথা? শহিদের দিকে তেরছা ভাবে তাকালো ছোট মামা। শহিদও চোখ পিটপিট করে দেখলো মামাকে। পত্রিকার সুডকু মিলাতে মিলাতে সে উত্তর দিলো  ‘ ওদের সবার কথা একই রকম হওয়া কি কাকতাল, মামা?
: সাধারণ মানুষের কথা সব সময় একই রকম হয়।
 তোমাদের মতো ইতিহাসবিদেরা যেখানে পৌছাতে পারে না সেখানে ওরা কিন্তু খুব সহজে পৌছে যায়।
: কেমন করে যে তুমি ওদের অবৈজ্ঞানিক কথা বিশ্বাস করতে পারো আমি সেটাই ভাবি।
শহিদ ছোট মামার কাছে সরে এলো।  কোন প্রশ্নটা অবৈজ্ঞানিক মামা?  শেখ মুজিবকে কেন আগস্টের ১৫ তারিখে হত্যা করা হলো? মামা হাতের বইটা টেবিলে রেখে শহিদের দিকে তাকালেন।  প্রশ্নটা অযৈৗক্তিক নয়। তবে সাধারণ মানুষ যে উত্তর তোমাকে দিচ্ছে তা অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক। এরপর মামা শহিদকে কাছে টেনে পিঠে হাত রেখে বললেন,  দেখো ভাগ্নে, তোমাকে যে লোকটির কথা ওরা বলছে সে একজন পীর। সাধারণ লোকেরা অলৌকিক শক্তিতে বেশি বিশ্বাস করে। তারা পীরের ক্ষমতা প্রমাণ করতেই এরকম কল্প-কাহিনি তৈরি করেছে।  মোস্তাক এবং ফারুকই দিনটি ঠিক করেছিলো। এখানে পীরের কোনো ভ’মিকা নেই। লোকে বলে, পীর সাহেব ফারুককে কবচ দিয়েছে আর তাই শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পেরেছে তারা! আর তুমি কিনা একথা প্রমাণ করবে! প্রমাণ করবেই বা কেমন করে? এটা প্রমাণ করতে চাওয়াইতো বোকামো।
শহিদ বলল, তুমি ঠিকই বলেছো মামা। কবচ হয় তো দেয়নি তবে কিছু একটা সে দিয়েছে। আগস্ট পনেরোর পিছনে বিশেষ রহস্য লুকিয়ে আছে। সেটাই জানতে চাই আমি।
মামা শহিদের মাথায় হাত রেখে বলল,‘ তাই বলে তুমি কুসংস্কার বিশ্বাস করবে?
শহিদ ডানে বামে তীব্র মাথা দোলালো। ‘কুসংস্কারের মধ্য থেকেই সংস্কারের পথে যেতে চাই আমি। এটা বিশ্বাস করার মতো বিষয় নয়। আমরা ১ ধরে যেমন অংক করি এটাও তাই।’
মামা তেতো স্বরে বলল,‘ কুস্ংস্কারের ভালো কোনো নিয়তি নাই।’
-     তার মানে অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস ভিত্তিহিন।?
‘নিশ্চয়ই’ টেবিল চাপড়ে উত্তর দিলেন মামা।‘ ওরা আবেগ আর কুসংস্কারের দাস।’
শহিদ নেতিবাচক মাথা নাড়ালো। ‘ দেখা যাক মামা, আপাতত পন্ডিত পিথাগোরাসের সূত্র ধরে আগাতে চাই। তিনি বলেছেন,‘ পৃথিবীর সব কিছুই সংখ্যা দিয়ে প্রমান করা যায়। যদি সেটা ঠিক হয় তবে আমিও দেখতে চাই ১৯৭৫ সালের পনেরো আগস্টের নেপথ্যে কি ছিলো? কে আসলে এই দিনটাকে বঙ্গবন্ধুর নিয়তির জন্য বেছে নিয়েছিলো এবং কেন নিয়েছিলো?’
‘ও, তাহলে তোমার মাথাটা আগেই খেয়ে নিয়েছে তোমার মেঝো মামা ।’ বইটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে বললেন ছোট মামা। শহিদ কোনো কথ বলল না ,কেবল দুই কাঁধ ঝাকালো।

মেঝো মামা সারাদিন তার ঘরেই ছিলেন। কিন্তু সারাদিনে একবারও শহিদ তার ঘরে যায়নি। সন্ধ্যার ঠিক আগে সে মেঝো মামার ঘরের দরজায় টোকা দিলো। মামা বই থেকে মুখ তুলে বললেন, ‘খোলাই আছে।’ শহিদ দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো। মামা ডাকলেন,‘ আয়। সারা দিনে যে একবারও এলি না! বিছানা দেখিয়ে শদিকে বসতে বললেন মামা। শহিদ তার হাতের নীল রঙের ডাইরি টা মামার দিকে বাড়িয়ে দিলো। আগস্ট পনেরো এর ওপর সে কিছু তথ্য নোট করেছে। সেটাই দেখাতে এসেছে মামাকে।
                             ১৫-৮-১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ
 দিনটি ছিলো শুক্রবার।
শুক্রবারের প্রতীক হচ্ছে ৬।
অধিপতি গ্রহ হলো শুক্র, শুক্র গ্রহের প্রতীকও ৬।
১৫ তারিখের মৌলিক সংখ্য(১+৫)= ৬।
সংখ্যাতত্তে¡ আগস্ট হচ্ছে  ২টি সংখ্যার মাস। ২১ জুলাই থেকে ২১ আগস্ট হচ্ছে ১ সংখ্যার মাস।
২২ আগস্ট থেকে ২২ সেপ্টেম্বর হচ্ছে ৫ সংখ্যার মাস। দুইটি মাসের যোগফল (১+৫)=৬।
এছাড়া ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এর মৌলিক সংখ্যা হচ্ছে
(১৫+৮+১৯৭৫)=(১+৫+৮+১+৯+ঁ৭+৫)=৩৬=(৩+৬)=৯।
৯ সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য। এর ভাজক ও ভাগফল যোগ করলে যোগফল হয় ৬।
সংখ্যাতত্তে¡ ৬ এবং ৯ এর রয়েছে দুর্বার আকর্ষণ।
এদিকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় ভোর ৫.৩০ থেকে ৭টার মধ্যে। ৫.৩০ মিনিট থেকে ৭টার মধ্যে একটা বিশেষ সংখ্যা রয়েছে ৬।
৫.৩০ মিনিট থেকে ৭টা পর্যন্ত মোট সময় ১ঘন্টা ৩০মিনিট= ৯০ মিনিট ।
৯০ সংখ্যাটি ১৫ দিয়ে বিভাজ্য যার ভাগফল ৬  ।
নোট বুক থেকে মামা মাথা তুলে তাকালেন।বললেন,‘ বেশ একটা তথ্য বের করেছো । এখন এটা দিয়ে কী প্রমাণ করতে চাও তুমি? দিনটি কি বঙ্গবনধুর জন্য অশুভ ছিলো?’
ঠোঁট উল্টে শহিদ বলল,‘ জানি না মামা। আমি জানতে চাই দিনটি ঠিক কাদের জন্য শুভ ছিলো? অর্থাৎ মো¯তাক, জিয়া, রশীদ, ফারুক নাকি...’ কথা শেষ করার আগেই হাত তুলে শহিদকে থামিয়ে দিলেন মামা। বললেন,‘ থাম বেটা। এতগুলো কালপ্রিটের দরকার নাই।’
‘কেনো মামা?’ চোখ পিটপিট করে তাকালো সে মামার দিকে।
: মাত্র দুইজনই যথেষ্ট।
-     ‘দুই জন?’ কপালে পাঁচটা ভাজ ফেলে সে প্রশ্ন করলো।
: হ্যাঁ। মোস্তাক আর ফারুক।
-     জিয়া, ডালিম?
: দরকার নাই। গুপ্তহত্যার প্রধান পরিকল্পনা করেছিলেন মোস্তাক আহমেদ আর গুপ্তহত্যা পরিচালনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কর্ণেল ফারুক।
শুনে উত্তেজিত হয়ে ওঠে শহিদ। ডান হাতের দুই আঙুলে তুড়ি দিয়ে বলর-‘ ইয়েস’। মামার হাত থেকে নীল নোটবুকটা নিয়ে সে বিছানার ওপরে পা তুলে বসলো। একটা পৃষ্ঠার ওপরে সে বড় বড় হরফে লিখলো ষড়যন্ত্রকারীর নাম।
                        কঐঅঘউঙকঊজ গঙঝঞঅক অঐঅগঊউ
মোস্তাকের জন্ম তারিখ লিখতে গিয়ে সে মামার দিকে তাকালো। কলম কামড়াতে লাগলো। মামা তার ভাগ্নের দিক তাকিয়ে হাসলেন।
: কী হলো রে জ্যোতিষী?
-     মোস্তাকের জন্ম তারিখ জানি না।
: আচ্ছা, গুগল মামাকে জিজ্ঞেস করি। বলেই মামা গুগলে সার্চ দিলেন। জানা গেলো মোস্তাকের জন্ম তারিখ।
জন্ম:   ৬-১১- ১৯১৮ খ্রিস্টব্দ।
দিনটি ছিলো শুক্রবার।
শুভদিন শুক্রবার।
শুক্রবারের প্রতীক হচ্ছে ৬।
তার অধিপতিগ্রহ হচ্ছে শুক্র। যার প্রতীক হচ্ছে ৬।
সংখ্যাতত্তে¡ তার প্রথম পর্যায়ের শুভ সংখ্যা ৬,১৫, ২৪। ২য় পর্য়ায়ের শুভ সংখ্যা ৩, ৯,১২, ১৮, ২১, ২৭ ও ৩০।
তার কর্ম সংখ্যা হচ্ছে তার জন্মের দিন তারিখ ও বছরের যোগসংখ্যা।
৬+১১+১৯১৮= ৬+ ১+১+১+৯+১+৮=২৭= ২+৭=৯।
৯ সংখ্যাটি ৩ দিয়ে বিভাজ্য।যার ভাজক ও ভাগফলের সমষ্টি ৬।
শহিদ হিসাব মিলানোর পরে উত্তেজিত হয়ে মামাকে ডাকলো। মামা  শহিদের হাত থেকে নোটবুকটা নিয়ে নিলেন। গভীর মনোযোগ নিয়ে দেখে বললেন,‘ তার মানে, মোস্তাকের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনটি ছিলো আদতেই শুভ দিন। তার কর্ম সংখ্যা ৯ দিয়ে  ১৫-৮-১৯৭৫ এর যোগফল ৯ দিয়ে বিভাজ্য।  তাছাড়া ৬ সংখার জাতক মোস্তাকের জন্য ৬ আর ১৫ তারিখ অত্যন্ত শুভ। বার হিসেবেও শুক্রবার তার জন্য শুভ।’ এক নিঃশ্বাসে বললেন মামা।  তার পর ঠোঁট কামড়ে বললেন,‘ এই শুভ দিনটিই তাকে প্রেসিডেন্ট করে মাত্র ৮২ দিনের ক্ষমতা দিয়েছিল।’  এরপর নোট বুকটা শহিদকে দিয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে এবার তাহলে আর এটা খচ্চরের নাড়ি নক্ষত্র বের করে ফেলো।’ বলেই তিনি গুগলে সার্চ দিলেন। সেই ফাঁকে শহিদ আর একটা পৃষ্ঠার ওপরে বড় বড় হরফে লিখলো ফারুখের নাম।
                             ঈঙখঙঘঊখ ঋঅজঙঙছ
জন্মদিন: ৯-৮-১৯৪৬খ্রিস্টাব্দ।
 জন্মবার ছিলো শুক্রবার। শুক্রবারের প্রতীক সংখ্যা ৬।
অধিপতি গ্রহ শুক্র। শুভদিন মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শুক্র।
শুভ সংখ্যা ৩, ৬, ১২, ১৫, ২১, ২৪, ও ৩০।
৯সংখ্যার লোকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয় ৩ ও ৬ সংখ্যার লোকের।
এ কারণেই মোস্তাক ও ফারুক হয়ে উঠেছিলো হরিহর আত্মা।
এবাার মামার দিকে নোটবুক ঠেলে দিলো শহিদ। মামা টেনে নিয়ে দেখলেন। শহিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তারা দুজন কিন্তু আমার আর তোমার মতো মামা ভাগ্নে।’ শহিদ হেসে উঠলো। হ্যা মামা ওরাও পড়ে ছিলো ১৫ াাগস্ট নিয়ে আর আমরাও কিন্তু...
মামা আলতো করে ভাগ্নের মাথায় চাটি মারলেন।

‘ তা হলে এই দুই কালপ্রিটের জন্য দিনটি ছিলো অত্যন্ত শুভ।” মামা বললেন। শহিদ  মামার পাশে সরে এসে বলল,‘ কিন্তু এমন নিখুত করে কোনো লোক একটা ছক তৈরি করতে পারবে না।এর পিছনে এমন এক লোাকের হাত আছে যে কিনা এ বিষয়ে দক্ষ।’ মেঝো মামা বললেন, ‘ঠিক তাই।’
কিন্তু কে সেই লোক? জানতে চাইলো শহিদ।
মামা ড্রয়ার থেকে একটা বই বের করলেন। এন্থনি ম্যাসকারেনহাস এর  লিগেছি অফ বøাড। মামা বইটি শহিদের হাতে দিয়ে  বললেন,‘ পড়ে শেষ করতে হবে।’
অতন্ত্য আগ্রহের সঙ্গে বইটা নিলো শহিদ। বইটি খুলল। মামা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,‘ ‘ এখন নয়। এই বইয়ে একজন বিশেষ লোকের কথা বলা আছে। ১৯৭৫ এর এপ্রিল মাসের দুই তারিখে ফারুখ যখন তার কাছে যায় লোকটি তখন তাকে তিন মাস অপেক্ষা করতে বলেছিলো। আর বলে ছিলো তিনটি নীতি অনুসরণ করতে।। সেই তিনটি নীতির প্রধান নীতিটা কী ছিলো সেটা জানতে এই বইটা তোমাকে পড়তে হবে।’
‘এখানে আছে সেটা?’ জানতে চাইলো শহিদ। মামা টেবিল চাপড়ে বললেন,‘ আছে। যাও। এটা শেষ করে আমরা কথা বলবো।’ বই আর নোট বুক নিয়ে শহিদ মামার ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

শহিদ স্কুল আর বই নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো সাতটা দিন। খাবার টেবিলেও মামার সােেথ তেমন কথা হতো না। আজ সন্ধ্যায় মেঝো মামার ঘরে এলো শহিদ। ‘মামা, পেয়েছি’ গ্যলিলিওর মতো চিৎকার করে উঠলো সে। মামা  তার পাশের চেয়ারটায় বসতে বললেন শহিদ কে। শহিদ চেয়ারটা টেনে মামার কাছে নিয়ে বসলো।
: বলো কী পেয়েছো?
-     লোকটার নাম।
: আর কী পেলে?
-     তিনটা নীতি।
: প্রধান নীতি কোনটা তোমার মতে?
-     ৩ নম্বরটা।
: কেনো?
-     কারণ, ৩ সংখ্যা দিয়েই ৬ সংখ্যা নিঃশেষে বিভাজ্য।
: মামা গম্ভীর হয়ে উঠলেন। তার চোখের সামনে সিড়ির ওপর যেন পড়ে থাকতে দেখলেন  সয়ং ঈশ্বরের লাশ।  শহিদ দেওয়ালে টাঙ্গানো ছবিটার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register