Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মেহফিল -এ- কিসসা রুমু আলী

maro news
মেহফিল -এ- কিসসা রুমু আলী

মায়ামুকুর

আমি কি ঘুম! হেমন্তের আলপনায় কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে, তৃপ্তির মরীচিকায়, মহুয়া-হিমে গাঢ় চুম্বনের রক্তাভা মেখে! কেননা ভাবনায় আমিতে প্রবল তুমি হয়ে উঠি, কেননা বারান্দার কিনারায় চাঁদ ঝুলে আছে স্বর্ণাভ আলোয়।
সমস্ত একত্রিত করে জেনেছি, তার প্রাণ, বিগত কান্নার চাপা স্বর।পূর্বে, যে আমি, সে অস্তিত্বহীনা! তবুও এ দৃশ্যে এক রক্তিম গোলাপ ছিল, যার মায়াসৌন্দর্য্য ছিলো, সমস্ত সৌন্দর্য্য জুড়ে ছিলো নিবিড় ঘুম। আকাশ নীল এ চিরন্তন, মেঘ ভাসমান এ চিরন্তন— তবুও কোন স্বর, সেখানে, যা স্পষ্ট হয়ে ওঠার মানসে অস্তিত্বময় আলোড়ন ওঠে!
যেমত একটি সুর ফুটে ওঠে, আবর্তিত হয়ে ভাসতে থাকে হাওয়ায়, যে সুরের মধ্যে ক্লান্তি নাই, যে সুরের মধ্যে পাখির উড়াল থাকে, যে উড়ালের মধ্যে থাকে  নির্ভার ছুঁয়ে থাকা, যে ছুঁয়ে থাকায়  রংছায়ার প্রসারতা, যে প্রসারতা পৃথিবীর মায়াজাল। ক্রমে শিকড় ছড়িয়ে বৃক্ষ, ডালে ডালে উড়ার পদ্যকথা, পাতায় পাতায় 29, শীত আবিষ্টে একেকটি পাতা চিঠির মতো, আমার উঠোনে এসে পড়ে— যে দূরত্বের ছায়া থাকে, সুরের আমন্ত্রণ থাকে, হিম জড়ানো রোমাঞ্চে ক্রমে শব্দে জেগে ওঠে, শিশিরের হিম জলছোঁয়া।
তথাপি দৃষ্টিপথের উপর বিষণ্নতার পদশব্দ ভারী হয়, শিশিরে নুনের ঘোলাটে ছায়া স্পষ্ট হয়, কেননা মিলন অভিলাষী আঁচড় ছিলো, সজল চোখ ফুটেছিলো, হাওয়ার ঝুমঝুম বৃষ্টি ঝরে হৃদয়ে,  নদীর মাতাল ঘ্রাণ ছুঁয়ে আছে ত্বকে, ফলে সেও এক মায়ামুকুর।
পাতার দোলে হাওয়ার সিম্ফনি , সম্মুখে আলো-ছায়ার নৃত্যমুদ্রা, জীবন সান্নিধ্যের সবুজ  শীতলতা  সে-শব্দকে বাধা দিয়ে যায়  ক্রমাগত। প্রকট পদশব্দে, সন্দেহ জমা পড়ে সময়ের খাঁজে, যেন, ইচ্ছাকৃত দূরত্ব সীমানার দৃশ্যমানতা, বোধের অধিক স্পষ্টতা। এ দৃশ্যে  অভিমান বেশি অপমান অভিজ্ঞানে শূন্যতা বাড়ে।
বহু পূর্বে যেমন, আজও, হাত পেতে চাওয়ার মতন প্রকাশ্য স্বরূপ নয়। শেষ সময়ের আত্মস্থে গুমরে ওঠা স্রোত স্নায়ুমোহনায় সীমারেখা টেনে  থমকে গেছিলো। হৃদয় অব্দি পৌঁছুলে, জানা যেত, পাতালজলের স্রোত ক্রমাগত আছড়ে পড়ছে মোহনায়।
সন্ধ্যাগত, একান্তে ফেরার রঙিন সব বুদ্বুদ ভাসমান, কখনো উচ্ছল, সান্দ্র, উদ্ভিন্নযৌবনা, অভিমানী শুভ্র ব্যাথা— সন্ধ্যাকাশের মগ্নস্রোত রূপরসগন্ধের রূদ্ধশ্বাস-স্তব্ধতা। আলোর তারতম্যে বৈচিত্র্যময় আকাশ, ডানা মেলে ফের উড়ছি, বুদ্বুদসকল পড়ন্তসন্ধ্যার জ্যোতি বাড়িয়ে দেয়, চোখের অনুভূতি হয়ে, কেননা সর্বভূক রঙ থেকে খুঁটে খুঁটে প্রতিটা রঙ আলাদা করে ছড়িয়ে দিয়েছি, কেননা রূপান্তর প্রকৃতির সহজাত বৈশিষ্ট্য।
'উড়া' শব্দের মধ্যে শূন্যতা আছে, শূন্যতা নিয়ে খেলা করা আছে, নির্ভার আনন্দ আছে, সেই আনন্দে মুগ্ধতাবিলাসী সহজতা আছে, সেই সহজতায় মনোলোভা অনুভবের সান্নিধ্য আছে— সেই সান্নিধ্যে  ডানা মেলেছি।
মানুষের অগোচরে জমা হয় বহুচিত্রপট, বাতাসের কন্ঠস্বর, সন্দেহ যা ইর্ষাময়, অচিকিৎস্য ক্ষতের মত বিষণ্নতার গুড়ো ছড়িয়ে যায়, ধূসরতা, মেঘসন্নিভ, পিলে চমকানো বজ্রহুুঙ্কার, সুঁচালো ফোড় অাঁকা হতে থাকে ত্বক ছিদ্র করে হৃৎপিণ্ড অব্দি।
রাত্রিনিহিত, ক্যানভাস জুড়ে হাওয়ার গোপন আঁকি, আবিষ্ট সময়ে আবিষ্কারের নেশা ছড়িয়ে— সজীব ঘনত্বে বেড়ে ওঠে নিরবতা, স্পষ্টমান কন্ঠস্বর, বাহুবিস্তার করা বুকের ওমে ঘুমিয়ে পড়ি, প্রশান্তি, শান্ত উপত্যকা— ছায়ার  নিরবতা ভেঙে, উত্তাল সমুদ্রতট, প্রবল হ-য-ব-র-ল, ধীরে, সমুদ্র গভীরতায়, আশ্চর্য শীতল ঘুম— চক্রাবর্ত বৈচিত্র্যহেম।
শূন্যতা আছে নিঃসঙ্গ নয়, প্রাণ আছে প্রফুল্ল নয়, স্বাতন্ত্র্য তবে উজ্জ্বল নয়— আলিঙ্গনহীন পৃথিবীর কাব্য থেকে কাব্যঘন পৃথিবীর অরণ্যপথে, হাঁটছি, রৌদ্র-ছায়ার আলিঙ্গনে জড়িয়ে, মৃত্তিকার হেমস্পর্শে , মগ্নস্রোতে সাঁতার কেটে— প্রকৃতির লালিত্যে জন্মবীজ, মায়াডোরে মুগ্ধ হতে শেখা, শেকড় ছড়িয়ে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ, সহজাত স্বভাবে পৃথিবীর ছায়া।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register