Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গপ্পসপ্পে মহুয়া সমাদ্দার 

maro news
গপ্পসপ্পে মহুয়া সমাদ্দার 

বাহবার্ষিকী

"সৌরভ, ডোন্ট থিংক দ‍্যাট আই অ্যাম ইউর পাপেট। আই মাস্ট ডিসাইড মাই ওন ডেস্টিনেশন। আই জাস্ট কান্ট টলারেট ইউর ইন্টার্ফারেন্স। প্লিজ লেট মি অ্যালোন।" -- একটানা বলে হাঁফাতে থাকলো ঝুমি।
"আই অ্যাম ইউর হাজব্যান্ড ঝুম। ডোন্ট ফরগেট দ‍্যাট।" -- চিৎকার করে সৌরভ বললো।
"সো হোয়াট? দিস ইস মাই লাইফ। আমার জীবনটা আমিই ঠিক করবো এবার থেকে। তোর জীবনের কোনো ব‍্যাপারেই তো আমি মাথা ঘামাই না, তবে আমার সব ব‍্যাপারে তোর এতো মাথা ব‍্যথা কিসের? " -- গলাটা এবার চড়ছে ঝুমির ও।
এটা ওদের রোজকার তরজা। সকালটা শুরুই করে কথা কাটাকাটি দিয়ে। সেই ইলেভেন থেকে প্রেম। দশ বছর প্রেমের পর দুই বাড়িতে বিয়ে নিয়ে তুমুল হুলুস্থুলুর পর বিয়ে। দুজনেই গোঁয়ার। দুজনেই চাকরি করে। সকাল দশটায় বের হয়। ওয়ান বি.এইচ.কে. একটা ফ্ল্যাট আপাতত নিয়েছে ওরা। দুজনের অফিস দুই দিক অর্থাৎ সাউথ কোলকাতা ও নর্থ কোলকাতায় হ‌ওয়ার কারণে শিয়ালদায় থাকে ওরা।
ইলেভেনে উঠে ঝুমিই সৌরভদের স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। তারপর দুজনের বন্ধুত্ব। শেষে ওরা আবিষ্কার করে যে ওরা প্রেমে পড়েছে একে অপরের। এভাবেই চলতে থাকে। এরপর ঝুমি ম‍্যাথস্-এ অনার্স এবং সৌরভ কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে আলাদা আলাদা কলেজে পড়ে। কিন্তু ওদের বন্ধুত্বটা থেকেই গেছিল। যদিও ব্রেক আপ হয়েছে কয়েক হাজার বার। তারপর আবার যে কে সেই। কি জানি কেন, কোনো মেয়ের সাথে সৌরভের বেশি মাখামাখি ঝুমি একেবারেই বরদাস্ত করতে পারতো না। আর ঝগড়া হলেই সৌরভ ইচ্ছে করে অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে ঝুমিকে আরও উত্তেজিত করতে চাইতো। আর ঝুম‌ও রেগে ফায়ার হতো। এভাবেই চলেছে ওদের প্রেমপর্ব।
দুজনের বাড়িতেও জানতো ওদের এইসব ঝামেলার কথা। তাই কোনো বাড়িতেই ওদের বিয়েটাকে সহজ ভাবে নেয়নি। দুই বাড়ির লোকেরা ধরেই নিয়েছিল যে এই বিয়ে কোনোমতেই টেঁকবার নয়। তাই জন‍্যেই কেউ চায়নি ওদের বিয়ে। সৌরভ একদিন ঝুমকে বলেওছিল, "ঝুম যখন কেউই চাইছে না তখন আমার মায়ের পছন্দের মোনালিসাকেই বিয়ে করে ফেলি। কি বলিস! ওর ফটো তো দেখেছিস ফেসবুকে। আমাদের কিন্তু হেব্বি মানাবে। তুই পারমিশন দিলে করতে পারি। শত হলেও তুই আমার প্রথম প্রেম। তাই জন‍্যেই তোর পারমিশন চাইছি। "-- ইচ্ছে করেই রাগানোর জন্য বলেছিল সৌরভ ঝুমিকে বলেছিল। কিন্তু তার খেসারত যে এভাবে দিতে হবে তা ভাবতেও পারেনি সে।
সেদিন ঝুমি সৌরভের অফিসেই এসে পড়েছিল । ওর টেবিলে তখন অনেকেই আছে। তার মধ্যে ঝুমি এসে সৌরভের জামার কলার টেনে ধরে বলেছিল, "মোনালিসাকে বিয়ে করবি না! খুব মানাবে না তোর সঙ্গে ! চল বের হ। তোর বিয়ে করাচ্ছি। "-- অতোগুলি লোকের সামনে ঝুমির যেন কোনো হুঁশ ই নেই। সবাই মুচকি মুচকি হাসছিল। সেবারে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচিয়েছিল সৌরভ। সেই দিন‌ই নাক কান একসাথে মুলেছিল। আর যাই করুক, কোনো মেয়ে নিয়ে ইয়ার্কি মারবে না ঝুমির সাথে।
তারপর দুই বাড়িতেই দুজন অনেক লড়াই যুদ্ধ করে বিয়ের ব‍্যবস্থা করেছিল। দুই বাড়িতেই শেষ  পর্যন্ত মেনে নিয়েছিল।
তারপর নতুন ফ্ল‍্যাটে, নতুন জীবনে দুজনেই সাক্ষী থেকেছে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার। ঝগড়া সর্বস্ব জীবনে সুখ যে একেবারেই নেই এমনটা ভাবলেও ডাহা ভুল করা হবে। দুজন দুজনকে ছেড়ে থাকতেও পারতো না ওরা। রাতের বেলা দুজন দুজনের বুকে মাথা রেখে সারাদিনের ঝগড়ার শেষে ভালোবাসায় মাখামাখি হতো দুজনেই।
আজ দুদিন ধরে একটু বেশি রকম ঝগড়া হচ্ছে দুজনের। ঝুমির অফিসের সুমিত ঝুমিকে "লাভ ইউ ডিয়ার" লিখে মেসেজ করেছে ঝুমিকে। এই নিয়েই ঝামেলা। ঝুমি সমানে বলছে, "বিশ্বাস কর আমার সাথে সুমিতের কোনো রকম সম্পক‌ই নেই। ও এটা পায়েল মানে ওর গার্লফ্রেন্ডকে লিখেছে। ভুল করে আমায় সেন্ড করেছে । সুমিত আমাকে "সরি" ও বলেছে তার জন্য। সুমিত আমার জাস্ট একজন কলিগ। এর বাইরে আর কোন সম্পর্ক নেই। আর নিজের গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমার মতো বিবাহিতা মেয়েকে প্রেম নিবেদন করতেই বা যাবে কেন ? বি লজিক্যাল সৌরভ। ইফ ইউ হার্ট মি ইন সাচ ওয়ে দেন আই হ‍্যাভ টু টেক আলটিমেট ডিসিশন। ইট প্রুভস দ‍্যাট ইউ জাস্ট ডোন্ট বিলিভ মি। "-- একটানা বলে সৌরভের দিকে তাকালো ঝুমি। দেখলো জানলার দিকে মুখ  ফিরিয়ে বসে আছে সৌরভ। কোনো উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ল সৌরভ।
ঝুমি অনকক্ষণ কেঁদে কেঁদে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। সকালে উঠেই মনে পড়লো আজ তো প্রথম বছরের বিবাহ বার্ষিকী। সৌরভের দিকে তাকিয়ে দেখলো তখনও ঘুমিয়ে আছে। ঝুমি রান্নাঘরে ঢুকে দুজনের টিফিন বানিয়ে সৌরভকে ডাকলো। সৌরভ বিরক্তভাবে বললো, " আমাকে ডাকাডাকির দরকার নেই। আমি একাই উঠতে পারি । ডিসগাস্টিং!"
চোখ থেকে টপটপ করে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ল ঝুমির চোখ দিয়ে  আজকের দিনটাই লাস্ট। কাল থেকে আর সে সৌরভের সাথে থাকবে না। যে সম্পর্কে কোনো বিশ্বাস নেই, কোনো সম্মান নেই, সে সম্পর্ক শুধুই একটা বোঝা। সৌরভ যখন ঝুমিকে আর চায় ই না, সেক্ষেত্রে ঝুমির ওকে বিরক্ত করা সাজে না। মায়ের কাছে ফিরে যাবে সে-- মনে মনে ভাবে ঝুমি। যদিও সবার আপত্তি সত্ত্বেও সৌরভকে বিয়ে করেছে বলে বাবার মন এখনো পায়নি সে। তবুও ফেরার জায়গা বলতে তো ওইটুকুনিই আছে ঝুমির।
স্নান করে টিফিনটুকু ব‍্যাগে ঢুকিয়ে ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে গেল ঝুমি। সৌরভ বাথরুমে আছে। রোজ বাইকে একটু এগিয়ে দেয় ঝুমিকে। আজ আর সেসব চিন্তার কোনো মানেই হয় না। অনেকটা আগেই বেরিয়েছে আজ। বাইরে বেরিয়ে দেখলো আকাশটা থমথমে মুখে আছে। যেন যখন তখন বৃষ্টি আসবে জোর। এটা শ্রাবণ মাস । আকাশটাও যেন ঝুমির মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছে খুব ভালো ভাবেই। যেন ঝুমির মতোই অজস্র কান্না লুকিয়ে রয়েছে আকাশের বুকে।
জীবনের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীটা সৌরভ ভুলেই গেলো! অথচ সৌরভ কতো কিছু প্ল্যান করেছিল! ঝুমি আর ভাবতেই পারছে না। "না! আর ভাববো না এসব! কিছুতেই না! " -- বাসে বসে বসে মনে মনে ভাবলো ঝুমি।
অফিসের এক কলিগ জয়িতা ঝুমির ভীষণ ভালো বন্ধু  ওরা দুজনেই দুজনকে প্রায় সব কথাই বলে। লাঞ্চের সময় জয়িতা বললো, "হ‍্যাপি ম‍্যারেজ অ্যানিভার্সারি ডার্লিং। আরো অনেক অনেক অ্যানিভার্সারি যেন এনজয় করতে পারি। এই নে তোর গিফ্ট আমার তরফ থেকে। " -- বলে জয়তি একটা খুব সুন্দর সিল্কের শাড়ি ঝুমিকে দিল। একটা টেবিলে ওরা দুজনে বসেছিল। ঝুমি জয়িতার হাত দুটো ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। তারপর জয়িতাকে সকালে সৌরভের মিস্- বিহেভিয়ার এবং দুদিনের সব কথা বললো । জয়িতা সব শুনে বললো , তোদের দুজন দুজনকে আরও একটু বেশি সময় দে। হয়তো সৌরভ আরেকটু সময় চায় তোর কাছ থেকে। আসলে আমরা আমাদের চাকরি নিয়ে , চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য সবসময় এতোটাই ওয়ারিড থাকি যে ঘরের সময়টুকু ও আর সেভাবে এনজয় করতে পারিনা। বি পজিটিভ ঝুম। এভরিথিং উইল বি অলরাইট। কোথাও গিয়ে কদিন ঘুরে আয় যা। দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। ডোন্ট গেট আপসেট। এনজয় দিস ভেরি ডে টু দ‍্য লিস। "-- বলতে বলতে দুজনেই কাজে ব‍্যস্ত হয়ে পড়লো।
বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় একটা শপিং মল থেকে একটা স্কাই কালারের শার্ট নিল ঝুমি সৌরভের জন্য। স্কাই কালার যে খুব প্রিয় সৌরভের! মনে মনে একটু ভয়‌ও পেল ঝুমি। যদি এর জন্য আবার অপমান করে সকালের মতো! যা হয় হোক। দেখাই যাক না কি হয়!
ভাবতে ভাবতে কখন যে ফ্ল‍্যাটের দরজার সামনে এসে পড়েছে খেয়াল-ই করেনি ঝুমি। প্রতিদিনের অভ‍্যাসবশতঃ দরজা আনলক করতে গিয়ে দেখলো দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। মানে সৌরভ ওর আগেই বাড়ি ফিরে গেছে! ঘড়িতে দেখলো সবে ছটা বাজে। এরমধ্যেই সৌরভ ফিরে গেছে! কলিং বেলে হাত দেবার আগেই দরজা খুলে গেল । সৌরভ দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো। ওমা! সৌরভ আলো জ্বালায়নি কেন ! ভেতরটা পুরো অন্ধকার। ঝুমি আলো জ্বালাতে যেতেই সৌরভ এসে ঝুমির হাত চেপে ধরল। ঝুমিকে ডাইনিং টেবিলের সামনে হাতটা টেনে নিয়ে এসে একটা দেশলাই জ্বালিয়ে টেবিলের ওপর সাজানো মোমবাতি জ্বালিয়ে দিল। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ঝুমি। ঝুমি দেখলো টেবিলের ওপর একটা দারুণ সুন্দর কেক আর তাতে লেখা "ফর মাই বিলাভেড ওয়াইফ"। একটা গোলাপ হাতে নিয়ে সৌরভ ঝুমির পায়ের কাছে বসে সেই বিয়ের আগের মতো করে বললো, " আই লাভ ইউ ঝুমি।"
একটা আংটি ঝুমির আঙ্গুলে ঢুকিয়ে ঝুমিকে জড়িয়ে ধরে বললো, "আমায় ক্ষমা করে দে ঝুম। তোকে ছেড়ে যে আমি একদম হেল্পলেস রে। এবার একটু ঝগড়া কর আমার সাথে। আজ তিনদিন ঝগড়া করিসনি। ভীষণ মিস করছি তোর ঠোঁট ফুলিয়ে ঝগড়া। "-- বলেই একটানে বুকের মধ্যে নিয়ে নিলো ঝুমিকে।
ঝুম যেন এতোক্ষণ একটা সিনেমা দেখছিল। এবার ওর দুচোখ ভেঙে যেন দুটো আস্ত সমুদ্র বেরোতে চাইছে। শুধু মুখে বললো , "এতো যদি ভালোবাসিস তো এতো কষ্ট দিলি কেন বল ! কতো কষ্ট পেয়েছি আমি জানিস! ভেবেছিস তুই একবার‌ও! "
"এটুকু কষ্ট না দিলে যে অফিস বাঙ্ক করে বৌ-এর জন্য প্রিয় খাবার এনে সব ব‍্যবস্থা করে ঘরেই ক‍্যান্ডেল-লাইট ডিনারের ব‍্যবস্থাই করতে পারতাম না রে। তোকে কষ্ট দিয়ে কি আমি ভালো ছিলাম রে পাগলী! আমি যে আর ও বেশি কষ্ট পেয়েছি রে! " -- বলেই সৌরভ ঝুমিকে আর কিচ্ছুটি বলার সুযোগ না দিয়ে ঝুমির ঠোঁটদুটোকে নিজের ঠোঁটের মধ্যে টেনে নিল। বাইরে তখন ভীষণ জোরে বৃষ্টি নেমেছে। একটা বাজ পড়ার আওয়াজ হলো কাছেপিঠেই কোথাও। ঝুমি আরও শক্ত করে সৌরভকে জড়িয়ে ধরলো।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register