Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

তন্ময় মণ্ডলের গুচ্ছ কবিতা

maro news
তন্ময় মণ্ডলের গুচ্ছ কবিতা

অবন্তিকাকে – ২

একটা পাগলাটে হাওয়া আমায় থমকে রেখেছে

এঘরে আমি অনুতাপের আগুনে একটু একটু করে পুড়ছি অবন্তিকা ...

পিছতে পিছতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে –

কতগুলো মৃত দৃশ্য – কতগুলো ঘোলাটে জলছবি আমায় ঘিরে রেখেছে।

ওগুলোকে কি যে বলি

স্মৃতি – স্বপ্ন- দুঃস্বপ্ন নাকি ...

তবে স্বপ্ন দেখা তো দূর, স্বপ্ন নামক শব্দটাই

আমায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় আজকাল।

নেশাগ্রস্থ শরীর কখনও কখনও

নিজের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করে ।

বসন্ত বলে, ‘নেশা তবে তোর সব রোগের মহাঔষধি ?’

তুমিই বল অবন্তিকা ,

যে কখনও নেশাই করেনি সে কী করে বুঝবে,

নেশাগ্রস্থ শরীরের কাছে আত্মার আত্মসমর্পণের ইতিহাস !

নিজেতো ভেঙেছি বহুদিন আগেই,

তবু চারিদিকে এত সম্পর্ক ভাঙার শব্দ

আমার তিষ্ঠোতে দেয়না অবন্তিকা।

তুমি আমায় এই যন্ত্রণাপুরী থেকে বহুদুরে

কোনো শব্দহীন সমুদ্রের কাছে নিয়ে যেতে পারো না অবন্তিকা ?

ছায়া

নদীর জলে ভেসে থাকে যে ছায়া,

আমি তাকে সমর্পিত আত্মা বলি।

কত জল

বয়ে যায়...

পাড় ভাঙে

            বাঁধ ভাঙে...

বেঁচে থাকে, থাকার চেষ্টা করে

কিছু অনাকাঙ্খিত ছায়া

কত জল শুষে নেয় কালের প্রলেপ।

রঙ লাগে, ফিকে হয়...

নিয়তিই শেষ কথা বলে

সময় সবটা জানে। ভেসে থাকা ডুবে থাকা সবই

আগুনের গান আসে, ছায়া পোড়ে

পুড়ে যায় নদীটির দুপাশের তীর

তবুও ক্ষণিক সুখে

ছায়াকে জীবন ভেবে

            আগলে রাখে

                  কিছু  নদীর শরীর...

কক্ষপথ

ফানুস হয়ে উড়ে যাচ্ছে অস্তগামী সূর্যের আলো

ঘুমচোখ দেখতে দেখতে ক্লান্ত স্বপ্নের অপমৃত্যু

নিরক্ষরেখা বরাবর হেঁটে যেতে যেতে

কোনো ফ্যারাওর পিরামিডের সামনে

থমকে যাওয়া পথিক জানে কক্ষচ্যুত হবার যন্ত্রণা

আদতে কক্ষ বলে কি সত্যিই কিছু থাকে !

নাকি সময় আমাদের কক্ষ তৈরি করে,

আর আমরাও পতঙ্গের মতো তাল মেলাই সময়ের ঘড়িতে

            টিকটিক

                  টিকটিক

                        টিকটিক ...

রেললাইন ও এক অন্ধকারের গল্প

রেললাইনের পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে থমকে দাঁড়াই

চোখ রাখি এক আশ্চর্য নগরীর চোখে।

গাজায় দম দিতে দিতে রুগ্ন ছেলেটার হাতের শিরা,

দেশের ভেতর এক অজানা দেশের মানচিত্র আঁকে...

যে ছেলেটা ভালো করে কথা বলতে শেখেনি

সেও চায়ের দোকানে

বাবার বিড়ি কিনতে আসে।

স্বাধীনতা এতগুলো বছর পেরোনো দেশ আমাদের...

দৃষ্টি অবশ হয়ে আসে।

বহুতল ফ্ল্যাটের আলো চুয়ে চুয়ে পড়ে লাইনপারের ছোট্ট খুপরিগুলোর গা বেয়ে। এ আলো অগ্রগতির আলো।

এ আলো সভ্যতার আলো।

সেই আলো গায়ে মেখে বুকে গামছা জড়ানো অষ্টাদশী গেয়ে ওঠে...

গান না আর্তনাদ! নাকি...

সভ্যতার বুকে কিছু প্রশ্নচিহ্ন থাকা ভালো।

দৃষ্টি শিথিল হয়ে আসে। আমি যেন আমার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছি।

পাশের ঘরে মায়ের প্রেমিক। দুধের শিশু ভাইটার কান্না থামাচ্ছে ক্লাস টুতে পড়া মেয়েটা। শেষ দু’মাসে কেরালা থেকে বাবা কোনো টাকা পাঠায়নি। ওদিকে খিস্তি খেউড়ের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে মাঝবয়সী মহিলা। সারাদিনের রোজগার মদে ডুবিয়ে ঘরে ফিরেছে স্বামী।

তবে এখানেও অ্যান্ড্রয়েড আছে, সালমান খান আছে, জিও ফোর জি আছে। পঁচিশে বৈশাখ আর দুর্গাপুজোয় বড় ফাংশানও হয়।

কোথাও যেন সন্ধ্যে নামছে। অদ্ভুত এক নৈশব্দ। আলো আধারীতে স্বাধীনতা চেটে চেটে খাচ্ছে পরজীবী কীট...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register