Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সাহানা ভট্টাচার্য্য (পর্ব - ৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সাহানা ভট্টাচার্য্য (পর্ব - ৭)

অস্ত্রদান - একটি কাল্পনিক কথা

পর্ব ৭ - সর্প 

"ক্রুশিও"
ভল্ডেমর্টের জাদুকাঠি থেকে বেরিয়ে এলো একটা নীলচে সবুজ আলো, হ্যারির শরীর মুচড়ে উঠলো যন্ত্রনায়। "ক্রুসিয়েটাস কার্স" বা যন্ত্রণার অভিশাপ - মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ এই কালাজাদু। তীব্ৰ বিষের মতো যন্ত্রনায় মুচড়ে ওঠে অভিশপ্তের সমস্ত শরীর-মন-অন্তরাত্মা। এর চেয়ে বুঝি মৃত্যুও শ্রেয়।
রাউলিংয়ের জাদুবিশ্বের সৃষ্টিতে সারা পৃথিবীর ছানাপোনারা মগ্ন। সরস্বতীর নাহয় পড়ার নেশা, লক্ষ্মী-গণেশও নাহয় অর্থনীতির হিসেব-নিকেশ করতে থাকে, কিন্তু তাই বলে কার্ত্তিকও? বইপত্রের ধারে মাড়ায় না যে কার্ত্তিক, সেও কিনা বসেছিল হ্যারির প্রথম খন্ড বইটা নিয়ে (শেষ করতে পারেনি যদিও, খেলা ফেলে বই শেষ করবে সে ছেলে!)! কি আছে ওতে, স্বভাবসিদ্ধ কৌতূহল দিয়েই শুরুয়াত হয়েছিল। এখন অবশ্য দুর্গামায়ের নিজেরই নেশা ধরে গেছে। তবে ওই যা হয়, জগজ্জননীর একশো কাজ , দশহাতে সামাল দেওয়া, তার ওপরে বুড়োবরের হাজার বায়নাক্কা, তাকে সামাল দিতে একলাখ ঝক্কি! মায়ের সময়ই হয়নি শেষ দুটো খন্ড পড়ার। অগত্যা কৈলাসে কলাবৌয়ের পুরোনো শাড়ী দিয়ে ইনস্টল হয়েছে বড় স্ক্রিন, ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট হয়েছে প্রজেক্টার, চলছে হ্যারি পটার এন্ড ডেথলি হাল্লোস, পার্ট টু - মুখোমুখি নায়ক-ভিলেনের লড়াই। এবছর, এই ২০১১ তেই মুক্তি পেয়েছে এ ছবি।
যন্ত্রনায় মোচড়াচ্ছে যৌবনের সায়াহ্নে পা দেওয়া হ্যারি, মৃত্যুতুল্য কষ্ট অসহনীয়, তবু সে লড়াই ছাড়ছে না, হারছে না। বাবামায়ের মৃত্যর প্রতিশোধ তাকে নিতেই হবে। কোলে রাখা পপকর্নের দিকে মায়ের কোনো নজর নেই। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে মায়ের চোখ পড়লো পাশে রাখা অস্ত্রের দিকে। বুড়ো বরের দেওয়া উপহারের মধ্যে সাপটা মায়ের প্রিয় অস্ত্র, জ্যান্ত কিনা! একদম একমুখী নিশ্চিত এই অস্ত্র, নীলকণ্ঠের বিষ এর দাঁতে, শত্রুর সামান্য ভুলে স্থিরলক্ষ্যে নিক্ষেপ করলে শত্রুনিধন অনিবার্য। দুধকলা দিয়ে পোষেন মা এই কালসাপ।
সিনেমাটা এক মুহূর্তের জন্য পজ করলেন মা। সাপের মতন লক্ষ্যস্থির বিষধর তিনি দেখেছেন বাস্তবে। মনে পড়লো কিছু বছর আগের কথা। জাহাঙ্গীরের রাজসভায় বিশ্বাসঘাতকের শাস্তির কথা। সুচারু কারুকার্যকরা হাতির দাঁতের থালায় চুপড়িতে রাখা বিষধর। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি ছিল সাপের বাক্সে হাত দিয়ে ছোবল খেয়ে পরিপূর্ণ সভায় বিষে নীল হয়ে মৃত্যু। যাতে বিশ্বাস কেউ না ভাঙে, তাই মোগল বাদশার এই কঠোর দণ্ড। সময়ের কিছু পথ বেয়ে সৈয়দ মীর জাফর আলী খান বাহাদুর, ওরফে মীরজাফরের মুখটা মনে পড়লো মায়ের। কোন ছিদ্রপথে যে ব্রিটিশদের নেমন্তন্ন করে আনলো মীরজাফর, তা বাদশাহের কানে পৌঁছায়নি। স্বাধীনদেশের সুখ ব্লটিং পেপারের মতন শুষে নিয়েছিল মীরজাফর, সাপের মতোই নিঃশব্দে। পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকতার চূড়ান্ত নিদর্শনগুলোর একটা এই কাহিনী। সিরাজের একটিমাত্র ভুল, তাঁর সোনার সাঁচ্চা জরির কাজকরা নাগরা জুতো বদলানোর ভুলের মাশুল দুশো বছর ধরে দিয়েছে ভারত।
বিষধর ধীরগতিতে মায়ের পাশ দিয়ে চলতে লাগলো তার দুধের বাটির দিকে। মায়ের মনে পড়লো চট্টগ্রামের সেই লোকটার কথা, দুপুরে যে ঘরের দাওয়ায় বসে পেয়াঁজ-কাঁচা লঙ্কা-সর্ষের তেল মেখে পান্তা ভাত খাচ্ছিলো। প্রতিবেশীদের মধ্যেই একজন, গাঁয়েরই লোক, বহুরূপী সেজে খেলা দেখায়। সেদিন সে
সেজেছিল কালী, উদ্যত খাঁড়া হাতে ভাত খেতে বসা লোকটার দিকে এগিয়ে আসতে লোকটার সন্দেহ হয়নি বিন্দুমাত্র। বহুরূপী বিপ্লবী। বিশ্বাসঘাতকের মাস্টারদাকে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি এসে শান্তিতে ভাত খেতে বসার দৃশ্য তার সহ্য হয়নি। সূর্য্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীদলের সে এক রোমাঞ্চকর যুদ্ধ, দিকে দিকে বন্দেমাতরম ধ্বনির সাহসী শোঅফ, আর তার মাঝে তিলতিল করে বেড়ে ওঠা গেরিলা বাহিনীর লড়াইতে বহুরূপীও
ছিল এক যোদ্ধা।বিষধরের মতোই সর্পিল নেত্র সেনের বিশ্বাসঘাতকতায় ধরা পড়ছিলেন মাস্টারদা। বহুরূপী খাঁড়ার এক কোপে নেত্র সেনের মাথা আলাদা করে দেয় ধড় থেকে। ভাতের থালায় রক্ত মাখা কাটা মাথা নিজে চোখে দেখেও নেত্র সেনের স্ত্রী ব্রিটিশ পুলিশের কাছে স্বামীর হত্যাকারীর বিষয়ে মুখ খোলেননি। তিনিও যে বিপ্লবী ছিলেন, সূর্যসেনের অনুগামী, বিশ্বাসঘাতক - তাঁর নিজের স্বামীর প্রতি।
মা দুর্গার আরো মনে পড়তে লাগলো একে একে, দিকে দিকে বিশ্বাসভঙ্গের গল্প। মালিক-কর্মচারী, প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী বা ভাইবোনের বিশ্বাসঘাতকতার গল্প। মনে পড়লো পদে পদে শোনা নোট জাল বা ব্যাংকলুঠের ফলস্বরূপ সর্বস্বান্ত মানুষদের হাহাকার, বধূহত্যার মতো মর্মান্তিক বিশ্বাসঘাতকতার আকুতি, আর্তনাদ।
বাটিতে আরেকটু দুধ ঢেলে মা সাপের মাথায় একটু আদর করে এসে আবার সিনেমা চালাতে রিমোট হাতে নিলেন। কি জানি, কাল যদি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়! সাপটাকে বড়'ভালোবাসেন উনি!

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register