Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

Cafe কলামে - আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব - ১৪)

maro news
Cafe কলামে - আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব - ১৪)

বিবাহঃ নারী পুরুষের যৌনমিলনের অনুমতি? - ৪

“পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা৷ এটাই ছিল প্ৰাচীন ভারতের যৌন জীবনের বিবাহের রূপ। অবশ্যই হিন্দু ধর্মের।নরক থেকে পূৰ্বপুরুষদের উদ্ধার করবার জন্যই পুত্র উৎপাদন । সেজন্য ধর্মশাস্ত্রকারগণ পুত্র উৎপাদনের প্ৰয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যেহেতু, পুত্র পিন্ডদান ও শ্রাদ্ধশান্তির দ্বারা পূর্বপুরুষদের নরক থেকে উদ্ধার করে- শাস্ত্রে কথিত আছে- সেইহেতু সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে রাজা রাজরা, মুনি ঋষিগণও বিবাহ করতেন। মুনিঋষিদের যথেষ্ট তেজ ছিল ফলে রাজারা তাদের সন্তান কামনায় তাদের স্ত্রীদের মুনিঋষিদের কাছে যৌনসংগমের জন্য পাঠাতেন। এটাও বিয়ের অন্তর্গত
সেইযুগে, বৈদিকযুগে, নরনারীর যৌনসম্পর্ক একাধিক মানুষের সাথে ঘটানো প্রচলন ছিল। মুনিঋষিরাও তেমন ছিলেন । দ্রৌপদীর পাঁচভাইকে বিয়ে করা সেইযুগে চমকিত হবার ছিলনা, চমক সৃষ্টি করেছে আজকালকার নারীবাদীরা নিজেদের স্বার্থ জয় করার অস্ত্র হিসাবে, মানুষের অনুগ্রহ পাবার উদ্দেশ্যে, নিজেকে বলি দেখানো। ক্ষতিগ্রস্থ, শোষিত, উৎপীড়িত অভিনয়। সেই সময়  গৌতমবংশীয়া জটিলা সাতটি ঋষিকে একসঙ্গে বিবাহ করেছিলেন । আবার বার্ক্ষী নামে অপর এক ঋষিকন্যা একসঙ্গে দশ ভাইকে বিবাহ করেছিলেন
বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার –
ঈ শ্ব র চ ন্দ্র বি দ্যা সা গ র প্র ণী ত। -১৯২৮ সালের প্রকাশনা' (উইকিসোর্স সংগঠনের বাংলা) থেকে মন্থব্যঃ
এ দেশে বহুবিবাহপ্রথা প্রচলিত থাকাতে, স্ত্রীজাতির যৎপরোনাস্তি ক্লেশ ও সমাজের বহুবিধ অনিষ্ট হইতেছে। রাজশাসন ব্যতিরেকে, সেই ক্লেশের ও সেই অনিষ্টের নিবারণ সম্ভাবনা নাই। এজন্য, দেশস্থ লোকে, সময়ে সময়ে, এই কুৎসিত প্রথার নিবারণপ্রার্থনায়, রাজদ্বারে আবেদন করিয়া থাকেন। প্রথমতঃ, ১৬ বৎসর পূৰ্ব্বে, শ্ৰীযুত বাবু কিশোরীচাঁদ মিত্র মহাশয়ের উদ্যোগে, বন্ধুবৰ্গসমবায় নামক সভা হইতে ভারতবর্ষীয় ব্যবস্থাপক সমাজে এক আবেদনপত্র প্রদত্ত হয়। বহুবিবাহ শাস্ত্রসম্মত কাৰ্য্য, তাহা রহিত হইলে হিন্দুদিগের ধৰ্ম্মলোপ হইবেক, অতএব এ বিষয়ে গবৰ্ণমেণ্টের হস্তক্ষেপ করা বিধেয় নহে, এই মৰ্ম্মে প্রতিকুল পক্ষ হইতেও এক আবেদনপত্র প্রদত্ত হইয়াছিল। ঐ সময়ে, এই দুই আবেদনপত্রপ্রদান ভিন্ন, এ বিষয়ের অন্য কোনও অনুষ্ঠান দেখিতে পাওয়া যায় নাই। "
বিদ্যাসাগর, নারীবাদী ছিলেন। মহিলাদের দুঃখ তিনি তার গ্রন্থে বিশদ বিস্তৃত করে বর্ণনা করেছেন। পড়লে মনে হয়, পুরুষকুল দানব ও অত্যাচারী।
শ্রীঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মার লেখা থেকে বোঝা যায় ১৯২৮ সালের অনেক আগে থেকেই বহুবিবাহ নিবারণ আন্দোলন, সমাজের উচ্চবর্গের একশ্রেণি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অন্য এক শ্রেণি বিপরীত ভাবনায় সেই উদ্যোগ নিবারণের চেষ্টায় সক্রিয় ছিল। তাদের দাবি বহু বিবাহ বন্ধ হয়ে গেলে হিন্দু ধর্ম লোপ পাবে। কিন্তু  বহু বিবাহ নিবারণ হলেকি সুবিধা বা বহু বিবাহ নারীদের বা পুরুষদের কি সব্বোনাশ করছিল তা বুঝতে পারলামনা।  ঈশ্বর চন্দ্রের জগৎটা নিতান্তই বাংলার হিন্দু বর্গের ক'জনার উপর সীমিত ছিল।
সেযুগে সাহেবরা (ইউরোপীয় সাহেবগণ) কটা দাসী রাখত, বা তাদের বিয়ে প্রথা কি ছিল তা জানা দরকার।
বুঝতে পারলাম শর্মা মহাশয়ের "বহুবিবাহপ্রথা প্রচলিত থাকাতে, সমাজে যে মহীয়সী অনিষ্টপরম্পরা ঘটিতেছে, তদ্দর্শনে তদীয় অন্তঃকরণে বহুবিবাহবিষয়ে ঘৃণা ও দ্বেষ জন্মিয়াছে;"
শ্রী যুক্ত শর্মা মহাশয়ের বিরাগের আরো ১০০ বছর পর  ইউরোপ আমেরিকাতে (নারী মুক্তির ১৯২০ সাল ধরলে ১০০ বছর) মহিলারা কি করছে চলুন দেখি।
নীচের গ্রাফটি একবার মন দিয়ে লক্ষ করুন। খুবই বিশ্বস্ত রিসার্চ বা গবেষণার সংগঠনের প্রকাশনাঃ
বুঝতে পারছেন, এসব জাতি ভারতীয় তথা এশিয়া, আফ্রিকা থেকে উন্নত, তাদের ঘরে মহিলারাই ঘর সামলায়। এবং সেখানে মহিলারা এ কাজ করেই খুশি। কিছু অতি দরদী পুরুষের চোখে নারী দুবলা, অবলা, ছাগ, ভেড়া,হরিণের মত বলি হয়। কিন্তু ধারণাটি লোকের মন গড়া। পুরুষ ছাড়া আমরা দেখেছি, কিছু মহিলা, সমাজ ধ্বংসকারী, নারীবাদ নামে স্বেচ্ছাচারীতায় নেমে বলছে নারীরা অবলা। তারা সমগ্র নারী জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেনা। সুতরাং নারী কি জিনিস বা মানুষ তা পুরুষের বোঝা মুশকিল, একমাত্র নারীরাই, বা অধিক বোঝবেন যারা অংক কষেন নারীর জীবন নিয়ে, যাপন নিয়ে,বাস্তবের সাথে  তারাই পরিসংখ্যন দিয়ে বলতে পারেন।
একটা সত্য যা আমি উপলব্ধি করেছি, যা আমি প্রাচীনদের জ্ঞান বা পুঁথি থেকে পেয়েছি, তা হল মানুষের জীবন বৈচিত্রে ভরা। স্থান, কাল, পাত্র পাত্রী, ধর্ম, রাজনীতি, পেশা,স্বাধীনতার নিরিখে কোন একসূত্র দিয়ে বাঁধা যায়না। এই গ্রহের, ভূত্বকে কোথাও এত ঠান্ডা, সেখানে জন্ম সম্ভবনা নেই লোকে অধিক বিবাহ করে। কোথাও জন্ম সম্ভাবনা এত প্রবল লোকসংখ্যা ঠেকানোর জন্যে বিয়ে রহিত করে। কোথাও এমন সব যুক্ত আছে যেখানে বহু বিবাহ  বা একজন ছেড়ে আরেকজন বিয়ে অনিবার্য হয়ে উঠছে। সুতরাং শ্রীযুক্ত শর্মার মাথাব্যাথার কারণ সঠিক ছিলনা বলেই আমার মনে হয়।
বিবাহ সংক্রান্ত ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা অনেক বিচার বা আইনি ব্যবস্থার মতো ভণ্ডামি বা নানা দোষে দুষ্টঃ যেমন পণ নেওয়া রোধ করছে, বিবাহ বিচ্ছেদ হলে খরপোষ দেবার দায় পুরুষের উপর চাপিয়ে রেখেছে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার দায় বিচ্ছেদের পর পুরুষ কেন নেবে? এটা একধরণের আইনি শোষণ নয় কি? মহিলা দুস্থ হয়ে পড়লে সরকারের উপর দায় বর্তাবে। জনগণের ন্যূনতম অধিকারগুলির দায় সরকারের। সরকার তা না করতে পেরে পুরুষের পিঠে চাপিয়ে দেয়। এটা একধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন।
নানা রকম যোজনা বানিয়ে সরকার মহিলাদের পাইয়ে দিয়ে দুর্বল বানাচ্ছে আর মহিলারা সেই সরকারের সমর্থনকে অপব্যবহার করছে। উলটো দিকে পুরুষের ঘাড়ে বিশ্ব সংসারের দায় রেখে শোষণ করে যাচ্ছে, নানা রকম উপায়ে।
আমি ধিক্কার দিই এই মানব অসভ্যতাকে।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register