Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ২০)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ২০)

তান্ত্রিক পিসেমশাই ও আমরা দুজন

৩২ পিসেমশাই বললেন, আরে বাবা ভূত পেত্নীর একটু ভালোবাসাবাসি করার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। একটু নিরালা একটু আড়াল নেই। শুধু বসন্তকাল জুড়ে হরিনাম সংকীর্তনের পালা। আর এই বসন্ত কালেই তো একটু পেত্নীর মাথায় সোহাগের হাত দিয়ে উকুন বাছতে ইচ্ছে হয়। তারও জো নেই। মানুষগুলোর হরিভক্তি যেন উছলে উঠেছে।
পিসেমশাই এর তিরানব্বই বছরের ভূত বিশেষজ্ঞ জিতেন দাদু এই বসন্তকালেই ভূতপেত্নী নিয়ে গবেষণায় মাততেন। কারণ এই বসন্তে গত বছর লাইনে বুক পেতে দিলো রমা সুন্দরী চলন্ত ট্রেনের সামনে। দেহের একভাগ এপারে আর এক ভাগ ওপারে পড়লো। রমার আত্মা ভাবলো মুন্ডু থাকা অংশেই প্রবেশ করে শয়তান মানুষকে ভয় দেখাবো। সঙ্গে সঙ্গে জিতেন দাদুর সামনেই রমার মৃত মুন্ডুযুক্ত অংশের দেহটা সোঁ সোঁ করে উড়ে গিয়ে অজানা অঞ্চলে মিশে গেলো। এই রমার আত্মা জিতেন দাদুর বিছানার পাশে রাতে কাঁদত।দাদু বলতেন, বেঁচে থাকতে দাদুকে কিছু বললিন না।একই পাড়ায় আমাদের বাড়ি। একদিন যদি আমাকে এসে তোর স্বামীর অত্যাচারের কথা আমাকে বলতিস তো দেখা যেত। তবে এখনও উপায় আছে। তুই কি জানিস তোর স্বামী তোর মৃত্যুতে খুশি না অখুশি। হাসছে না কাঁদছে? রমার মুন্ডু উত্তর দিল, না দাদু সে খুশি নয়। বরং কাঁদতে কাঁদতে বলছে, রমা, আমি ভুল করেছি। ফিরে এস। দাদু বললেন, বাঃ তাহলে ফিরে যা। আর ঘুমন্ত স্বামীর বুকে আধখানা দেহ নিয়ে আদর কর। তোকে দেখেই ভিরমি খেয়ে মরবে আর তোর সাথে মিলিত হবে কাল ভূত চতুর্দশীর রাতে। রমা দাদুর কথামত চলে গেলো হাওয়ায় উড়তে উড়তে প্রথম প্রেমিকার মত। শ্বশুরবাড়ির দরজা খুলে স্বামীর ঘরে ঢুকে রমা দেখলো, স্বামী তার ছবি বুকে নিয়ে বসে কাঁদছে হাপুস নয়নে। আহা কি ভালোবাসা। রমা বুকে শুয়ে বললো, এই তো আমি এসে গেছি। চলো যাই একসাথে। স্বামী তাকে দেখামাত্রই পগার পাড়। পপাত মেঝেতলে। আর সঙ্গে সঙ্গে হার্টফেল। রাতেই উড়ে চলে গেলো প্রাণপাখি। আর আগামীকাল ভূত চতুর্দশীর রাতে মিলিত হবে তাদের আত্মা। অপঘাতে মৃত দুইজনে ঘুরে বেড়াবে অনন্তকাল।
আর একবার, জিতেন দাদু এই বসন্তে প্রেমিক যুগলের দেহে দুটি আত্মার সন্ধান পেয়েছিলেন। তারা দেহে প্রবেশ করে অতৃপ্ত শখ পূরণ করেছিলো। এইসব ঘটনা বসন্তকালেই ঘটেছে। অন্য ঋতুর সময় তারা ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন কাজে। কিন্তু বসন্তকালে হৃদয়ে জেগে ওঠে মানুষের প্রেমজীবনের প্রতি হিংসার ভয়াল রূপ। এই প্রেমে পরাজিত বা প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রাণ যায় হাজার হাজার প্রেমিক প্রেমিকার। শুধু ভ্যালেনটাইনস ডে তে নতুন ভূত পেত্নীর তালিকায় যুক্ত হয় শত শত ব্যর্থ হৃদয়। এই তো গত বছর চোদ্দ তারিখে ফেব্রুয়ারী মাসে জিতেন দাদুর নাতনী পাড়ার জগা গুন্ডার সঙ্গে একসাথে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিলো। তারপর থেকে গবেষক ও পুরোহিত দাদু নাতনির খোঁজে দুস্তর গবেষণা করে তার আত্মাকে বন্দী করতে পেরেছেন।ভালোবাসার জন্য ভ্যালেনটাইন্সের মত দাদুও অনেক আত্মত্যাগ করছেন। মৃত প্রেমিক যুগলের মিলন ঘটানোই তার প্রধান উদ্দেশ্য। তার জন্যে দিনরাত তিনি না খেয়ে গবেষণা করেন নিরন্তর। মৃত নাতনি শুধু বলে, দাদু, আমার জগাকে ও এনে দাও।দাদু বললেন শুনবি জগা গুন্ডার কথা। নাতনি বললো শুনবো। দাদু বললেন, ওর আসল নাম গদাই। ওরা সময়মত নাম পরিবর্তন করে। শোন তাহলে তার কথাই বলি, সব ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একসাথেই বেড়ে উঠেছিল গদাই। তবু এক অন্য ছাঁচে গড়ে উঠেছিল তার জীবন যৌবন। যখন কোনো ছেলে লুকোচুরি খেলায় খুঁজে পেত আনন্দ ঠিক তখনই গদাই কারও পকেট থেকে তুলে নিত টাকা পয়সা বা কোনো খাবার। কি করে বোকা বানিয়ে অন্যকে ঠকাতে হয় তা ঠিক সে জানত। আর এই কাজেই সে আনন্দ পেত সর্বাধিক। বিধির লেখা প্রতিটি মানুষের জন্য আলাদাভাবে লেখা হয়।
যখন গদাই চোদ্দ বছরের কিশোর তখন অন্য কিশোরদের মত সে স্কুলের গন্ডিতে পা রাখে নি। একটা বাড়িতে ঢুকে সাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেলো পিসির বাড়ি। একদিন সবকিছু জানাজানি হলে গদাই বললো, আমাকে খাওয়ালে সাইকেল পেয়ে যাবি। সাইকেলের মালিক তাকে পেট ভরে খাওয়ানোর পরেও সে সাইকেল দেয় নি। শেষে মার খেয়ে শোধ করলো সাইকেলের ঋণ।
সেই শুরু চুরিবিদ্যার। তারপর থেকে সে হাত পাকিয়ে নিয়েছিলো ডাকাতির দলে। তার নাম শুনলেই এলাকার লোক ভয় করত তাকে। পুলিশ ধরেছে বহুবার। সে বলত, পুলিশের মার খাওয়ার আগে গাঁজা টেনে নিয়ে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকতাম। লাঠির আঘাত কাবু করতে পারে নি আমাকে। এইসব শুনিয়ে সে সকলের কাছে বাহাদুরি কুড়োত।
এই গদাই একদিন এক শহরের বউকে পটিয়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করত। বউটির স্বামী চাকরির জায়গায় থাকত। এই সুযোগে গদাই তার বাড়িতে ঢুকে তার বউএর সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করত। বউটাও তাকে প্রশ্রয় দিত, টাকা পয়সাও দিত। একদিন পাড়ার লোকের কাছে ধরা পড়ার পরে গদাই মার খেয়ে শহর ছাড়লো। এখন সে রিক্সা চালায়। খেটে খায়। তারপর একদিন শোনা গেলো গদাই সবকিছু ছেড়ে সাধুর বেশে ঘুরছে। মটরসাইকেল, ট্যাক্সি -র ড্রাইভারদের কাছ থেকে ঠাকুরের নামে সিঁদূর পরিয়ে টাকা আদায় করত সারাদিন। তারপর একদিন শুনলাম সে প্রেমিক হয়েছে আমার নাতনীর। হয়ত পরশপাথরের ছোঁয়ায় সোনা হয়েছে। কিন্তু তুই আমাকে কিছু না জানিয়ে লাফ দিলি বাইরের এক অজানা প্রেমিকের সাথে। ছোটো থেকে তুই মা বাবা হারা একমাত্র এই বংশের প্রদীপের সলতে। তাও তুই চলে গেলি দাদুর কথা না ভেবে। কেন একবারও কি বলতে পারতিস না তোর ভালোবাসার কথা। নাতনির আত্মা বলে উঠলো, ক্ষমা করে দাও দাদু। আর আমার প্রেমিককে এনে দাও আমার কাছে। আমি আর তাকে ছেড়ে থাকতে পারছি না। নাতনি নাছোড়বান্দা। দাদু আবার বললেন, ওর আত্মা দুষ্টু আত্মা। ওকে পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।
কিন্তু নাতনি সব শোনার পরও বললো, ওসব আমি জানি না। আমার ওকেই চাই। দাদু বললেন, ওর আত্মাটা নিম্নস্তরের। তোকে জ্বালাবে তার সঙ্গে সমাজটাকেও জ্বালাবে। ওইসব আত্মা মুক্তি পায় না সহজে। তবু তোর খুশির জন্য আমি ওকে তোর কাছে নিয়ে আসবো। নাতনির কথা অনুযায়ী দাদু তাই করলেন। এক্ষেত্রে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি দাদুকে। কারণ জগা সত্যিই ভালোবাসত তার নাতনিকে। কিন্তু দাদু বুঝতে পারেন নি নাতনি বেঁচে থাকতে । তাই এখন তিনি দুই আত্মার মিলন ঘটাতে চান যে কোনো উপায়ে। তিনি দুই আত্মাকে ঘরে বন্দী করেছেন। এখন প্রয়োজন দুটি মৃতদেহের। নামকরা বিশেষজ্ঞ তিনি। মৃতদেহ পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। হাসপাতাল থেকে পেয়ে গেলেন দুটি মৃতদেহ। তাদের কোনো অভিভাবক বা আত্মীয়স্বজন ছিলো না বা খোঁজ পাওয়া যায় নি। তাই দাদু সমস্ত আইন মান্য করে গবেষণার জন্য এই দুটি দেহ নিজের কাছে আনলেন। পরের দিন সকাল বেলা থেকে প্রায় সপ্তাহখানেক দাদুর দেখা পাওয়া গেলো না। ব্যস্ত দাদু তার গবেষণা নিয়ে।
তারপর এক সপ্তাহ পরে দাদু অন্য দেহে আত্মা প্রতিস্থাপনের কাজে সফল হলেন। নাতনি এখন সমস্ত শখ পূরণ করতে পারবে জেনে দাদুর খুব আনন্দ হলো। দুটি দেহ ঘুরেফিরে বেড়াতে লাগলো চোখের সামনে। একটা নর ও আর একটা নারীদেহ। জগা গুন্ডার আত্মা দেহ ফিরে পেয়ে শয়তানি শুরু করলো। নাতনি বোঝালো, বেশি বাড়াবাড়ি করো না। দাদু রেগে গেলো দেহ কেড়ে নেবে। সুন্দর মানুষ হও। তা না হলে কদিনের এই দেহের মায়া ছেড়ে আবার চলে যেতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহ দুটি দেখে অবাক হয়েছিলেন। তাহলে মৃত মানুষকে বাঁচানো যাবে জিতেন দাদুর গবেষণার মাধ্যমে। কিন্তু জিতেন দাদুর খোঁজে এসে পুলিশ কমিশনারসহ বিজ্ঞানীরা এসে দেখতে পেলেন জগা গুন্ডা, দাদুর গলা টিপে ধরে খুন করলো। শেষ হয়ে গেলো এক বিশাল বিশেষজ্ঞের জীবন। কমিশনার গুলি ছুঁড়লেন। সামনে এসে দাঁড়ালো প্রেয়সী, প্রিয় দাদুর নাতনির দেহ। সে মরলো আর জগা গুন্ডা ছুটে চলে এলো কমিশনারকে খুন করতে। বিন্দুমাত্র কাল বিলম্ব না করে তিনি গুলি করলেন, ভয়ঙ্কর কালপুরুষ জগা গুন্ডার দেহে। লুটিয়ে পড়লো দেহ। আর শেষ হয়ে গেলো জিতেন দাদুর গবেষণার সফলতার প্রমাণ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হায় হায় করে উঠলো এতবড় সফলতার করুণ পরিণতিতে।
পিসেমশাই বললেন, এই ঘটনাটা আমি অনেক জায়গায় বলেছি কারণ আমার তান্ত্রিক মনে এটা গভীর দাগ কেটে চলে গেছে। জিতেন দাদুর কাছে অনেক তন্ত্র মন্ত্র শিখেছি। তিনি বলতেন, নিছক ভূতকে নিয়ে ঠাট্টা করতে নেই। অথচ তিনিই ভূতের শিকার হলেন। রতন ফিসফিস করে আমাকে বললো, আপনারও এই অবস্থা হবে না তো? আমি বললাম, চুপ। পাকামি করিস না। পিসেমশাই তখন কপালভাতি আর অনুলোম বিলোম শুরু করেছেন। এখন তিনি কথা বলবেন না। প্রাণায়াম চলবে প্রায় দু ঘন্টা।
র উপর থমকা মন্ত্র লাগাবো। তোরা নিজের জায়গা ছেড়ে উঠতে পারবি না....
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register