Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

Cafe কলামে রাজদীপ ভট্টাচার্য - ৩

maro news
Cafe কলামে রাজদীপ ভট্টাচার্য - ৩

প্যাস্টেল কালার - ৩

★  জলপাইগাছের নিচে

গ্রামের নাম বাঘমারা। মসলন্দপুর স্টেশনে নেমে বাসে আধঘন্টাটাক যাওয়ার পর নেমে পনেরো মিনিট হাঁটা। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ খেরেস্তান। পথের ধারেই বড়সড় চার্চ। পেরিয়ে এসে আমরা ততক্ষণে পাকা রাস্তা ছেড়ে মেঠো পথে নেমেছি। ক্ষেত ভরা ফসল। যার বাড়িতে যাচ্ছি তিনিও আমাদের সাথে সাথেই চলছেন। রেভারেন্ড বাসুদেব কর্মকার। শূন্য দেশের বাড়িতে এই অছিলায় আমাদের সাথে নিজেরও একবার উঁকি মেরে দেখে আসা হবে।
চাষের জমি পার করে গ্রামের শুরু হল আবার। এর উঠোন, ওর আমবাগান পেরিয়ে অবশেষে পৌঁছলাম বাসুদেবদার বাড়ি। পুরনো আমলের দোতলা বাসগৃহ। বাড়ির পিছনে বাগান। অনেকগুলো প্রাচীন জলপাই গাছ। ছোটো ছোটো ফল ধরেছে তার বয়সী শাখায়। কয়েকটা আম গাছ। গোটা বাগান জুড়ে ঝরা পাতা, জমাট ছায়া।
হাঁটতে হাঁটতে আবিষ্কার করলাম বাড়ির হাতায় একটা নদী। আর বাগান পেরোলেই নদীর ঢালু চর। সেখানে ওলের চাষ হয়েছে। তারপরে মজে আসা যমুনা। জলে স্রোত যৎসামান্য। সেখানেই নৌকা বেয়ে মাছ ধরছে গ্রামের লোকজন। মাটি খুঁড়ে ওল তোলা হল। বিরাট ঝুড়ির মতো মাপ তার। ধরে বেঁধে তাকে এনে ফেললাম বাড়ির বারান্দায়।
এদিকে ততক্ষণে দাদাদের কয়েক পাত্তর চড়ানো হয়ে গেছে। বাড়ির কেয়ারটেকারের হাতে আগে থেকেই দেওয়া ছিলো রান্নার দায়িত্ব। ফলে ঝাল ঝাল মুর্গির ঝোল রেডি। বাসুদেবদার মেজাজ ফুরফুরে। বললাম "দাদা, এ বাড়ি কার হাতে তৈরী?"
"সে আমার ঠাকুর্দার আমলে হয়েছে সব। আমরা ছিলাম চট্টগ্রামের মানুষ। চাঁদ সদাগরের বংশধর। "
"তাহলে খ্রিস্টান হলেন কীভাবে? "
"সেসব ঠাকুরর্দাই হয়েছেন। আর সেই থেকে আমরা যীশুর ভক্ত। চল তোকে আমার বাপ-ঠাকুরর্দার সমাধি দেখাই"।
বাড়ির পাশেই একটা পাঁচিল তোলা ছায়াচ্ছন্ন জায়গা, এতক্ষণ খেয়াল করিনি। বাসুদেবদার সাথে চললাম সেখানেই। তাঁর বাবা-মা, ঠাকুরর্দার কবরস্থান। দু'চারটে ফুলের গাছ চারপাশে। সিমেন্টের বেদির উপর মার্বেলের ফলক। লতাগাছ বাইছে আনাচে কানাচে। সমাধির গায়ে অদ্ভুত স্নেহজড়ানো হাত বুলোতে বুলোতে নেশাতুর চোখে যেন নিজেকেই বললেন দাদা, "একদিন শালা এখানেই শুয়ে থাকব। এই জলপাইগাছের নিচে।"
মৃতজনের কাছে এলে মানুষ বড় পবিত্র হয়ে যায়। নিমেষে গা থেকে ঝরে পড়ে দিনাতিপাতের যাবতীয় গ্লানি। দুধসাদা শ্বেতপাথরের গায়ে হাত বুলোচ্ছিলেন বাসুদেবদা পরম মমতায়, আমার মনে হল যেন নিজের উদোম বুকে ছুঁয়ে যাচ্ছেন প্রতিটি আঙুলে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register