Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৪২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৪২)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৭৬
এই নাও সুতো ধরো। একটাই তো সুতো। সুতো একটাই হয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেখানে খুশি এগিয়ে যায়। তার মতো করে ছন্দে তালে। যতক্ষণ বের হচ্ছে না ঠিক আছে কিন্তু একবার বেরিয়ে পড়লে তাকে আর আটকায় কে। একটাই তো সুতো, একটাই টান। অথচ এটুকু না জানার জন্যে আমাদের কত কষ্ট। আমরা আমাদের মন নিয়ে আমাদের মতো করে কত কি যে ভেবে ফেলি। মানুষের না জানি কত কত সুতো। অথচ আমার একটিই মাত্র শিবরাত্রিরের সলতে। এমন একটা ধারণা যেন অর্থ সম্পদের প্রাচুর্যের সঙ্গে সঙ্গে সুতোর সংখ্যাও বেড়ে চলে। কিন্তু তা তো নয়। ভালো করে তাকিয়ে দেখো সুতোটা রাস্তা ধরে তোমার বাড়ির দিকেই যাচ্ছে।
সুতো মানে তো নদী। একবার চৌকাঠ পার হলেই হাওয়া। তখন আর থামা নেই। তুমিও বেরিয়ে পড়েছ। উঠোন থেকে গলা তুলেছ। রান্নাঘর থেকে মা সাড়া দিয়েছে। চোখের আড়াল হতেই সে তোমার চিন্তায় মগ্ন। কড়ায় খুন্তির আওয়াজ তার মনসংযোগে চিড় ধরাতে পারে না। গনগনে আঁচেও তার হাঁড়ি পুড়ে যায় না। অদ্ভুত এক ভারসাম্য তার সারা জীবন জুড়ে। সারাটা সকাল দুপুর বিকেল কাজের মধ্যে মধ্যে সে সুতো ছেড়ে যায়। সন্ধেবেলা বারান্দায় পা ছড়াবার ফুরসৎ পেলে তার কপালে ভাঁজ পড়ে। আসলে এ তো তার অবসর নয়। পুরোপুরিভাবে ডুবে যাওয়া তোমার ভাবনায়। রাতের রান্নাঘরে ঢোকার আগে সেই সুতো চলে যায় বাবার হাতে।
কখনও দিদির হাতে। দিদির সোয়েটারে ঘর ভুল হয়ে গেলে তোমার ছোটো বোন রাতের জানলায় দাঁড়িয়ে সুতো ছাড়ে। অনেক রাতে তোমার হদিস মেলে। তখন তো তুমি হাওয়ায় ডানা মেলেছো।
তোমাদের রান্নাঘর বদলে বদলে যায়। চাবিও। তোমারও ঠিকানা বদলায়। চৌকাঠে জানলায় কত কত নতুন মুখ। তারা অনেকেই তোমাকে চেনে না। বটগাছটার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক, পথের ঘর কেন তোমার এতো প্রিয় ------ কেউই পড়ে নি তোমাকে। চেনে না সুতোও। জানে না তোমার সঙ্গে সুতোর ভারসাম্যের কথা। তাই কখন যে সুতো আলগা হয়ে যায় তা তারা নিজেও জানে না। তুমি তো তখন পাখি। নদীপথে ডানা মেলে দিয়েছো। সারা আকাশ জুড়ে শুধুমাত্র একটা বিন্দু।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register