Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

' সামাজিক দূরত্ব ' ও ' সতর্কতা ' - আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের মরশুমে - লিখেছেন পার্থ সারথি চক্রবর্তী

maro news
' সামাজিক দূরত্ব ' ও ' সতর্কতা ' - আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের মরশুমে - লিখেছেন পার্থ সারথি চক্রবর্তী
অভিধান থেকে উঠে আসা 'লকডাউন ' শব্দটা ' গোটা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিল গত চার মাস ধরে। সময়ের দাবি মেনে আমাদের দেশকেও হাটঁতে হয় একই পথে। আর তা আমাদের দেশ তথা সমাজকে এক নতুন অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । আয়নায় যেন এক অদেখা প্রতিবিম্ব ফুটে উঠেছে এবং তার কতগুলো টুকরো টুকরো ভিন্ন চেহারা দেখা যাচ্ছে নানান ক্ষেত্রে । তার অনেকগুলো দিক আছে। আজ আমার আলোচ্য " সামাজিক দূরত্ব "। শব্দবন্ধটি শুনতে যতই সামাজিক শোনাক, তা কিন্তু আসলে আমাদেরকে বেশ খানিকটা অসামাজিক করে তুলছে । আসলে যদি দেখা যায়, ব্যাপারটায় শারীরিক ভাবে দূরত্ব বজায় রাখার কথাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে । কিন্তু এটাই বোধহয় ' পোয়েটিক জাস্টিস '। মানুষের সাথে মানুষের দুরত্ব তৈরি হচ্ছে  ' সামাজিক '। আর এই জায়গায় যত চিন্তা । জেনুইন হিউম্যান রিলেসনশিপ হল মানুষের তথা মানবসমাজের মূল ভিত্তি । সেই ভিত্তি কোথাও যেন নড়ে যাচ্ছে । আমরা হয়ে উঠছি আত্মকেন্দ্রিক । হয়তো তা সুস্থ থাকার তাগিদে,  বেঁচে থাকার তাগিদেই। কিন্তু মানবিক,  মানসিক সম্পর্ক অনেকাংশেই ধাক্কা খাচ্ছে । যতই আমরা অন্তর্জালে যুক্ত থাকি না কেন! আসলে সামনা সামনি দেখা হওয়া  বা কথা বলা আমাদের মনে যত প্রভাব ফেলে  বা একসাথে সময় কাটানো মনে যে ইতিবাচক হরমোন নিঃসৃত করে; তা থেকে আমরা বঞ্চিত থেকে যাই।
স্কুল,  কলেজ বন্ধ । সেখানকার পড়াশোনার বিকল্প অনলাইনে পড়াশোনা হতে পারে কিনা সেই বিতর্কে না গিয়েই এটা বলা যায় যে, শিশু বা কিশোরদের মধ্যে যে বিকাশ গড়ে ওঠার কথা তা কিন্তু হওয়া সম্ভব না। যে সহবত শিক্ষা,  পারস্পরিক সহযোগিতা ও আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা তাও সম্ভব হয় না । তার ফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী ।  Human Bonding সম্পর্কে আলোকপাত করলে দেখা যায় এটা একটা এমন রসায়ন যা শুধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না,  বরং  বৃহৎ অর্থে ছড়ানোর কথা গোটা সমাজে।বিভিন্ন ছোট ছোট দল, তা পরিবারের বাইরেও সমবয়সীদের মধ্যে বা বন্ধুদের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে । এই ছোট দলগুলো ও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ । কেননা এরাই কিন্তু জোড়া লেগে সমাজের এক একটা স্তম্ভ তৈরি করে । পাড়া, শহর, রাজ্য , দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এভাবেই গঠিত হয় বিশ্ব সমাজ । আর যদিও বা এত দূর ভাবতে নাও চাই,  অন্ততঃ স্থানীয় ক্ষেত্রে তার প্রভাব অবশ্যম্ভাবী । প্লেটো বলেছিলেন , মানব সমাজের ভিত্তি হলো ভালোবাসা । আর সেটা দু'তিন জনের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা সমাজে। তৈরি করে এক অদৃশ্য সামাজিক মেলবন্ধন। এই মেলবন্ধনের জায়গাটা ধাক্কা খাচ্ছে ভীষণরকম ।শুধু মানুষ মানুষে নয়, মানুষের সাথে কিছু জন্তর( তথাকথিত শব্দটা ব্যবহার করলাম বোঝার জন্য) তা গৃহপালিত বা বন্য যাই হোক না কেন; সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বন্ধনের ক্ষেত্রে । সামাজিক দূরত্বের এই বর্তমান তত্ত্ব,  যা রোগ ছড়ানো আটকানোর উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে; এক নতুন রোগের জন্ম দিচ্ছে । জমায়েত আটকানোর জন্য শেষযাত্রার ক্ষেত্রেও জনসংখ্যায় রাশ টানতে হচ্ছে,  আর তা বাধ্য হয়েই। এমনটাও শোনা যাচ্ছে যে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় লোকের অভাব ও দেখা দিচ্ছে । বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশকে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে । শেষকৃত্য করতে বাধাদানের ঘটনা ও সামনে এসেছে। সত্যি এগুলো কিন্তু ভয়ের । মুখোশ পড়া নিয়ে লঘুচালে অনেক রসিকতা হলেও পারস্পরিক মুখদর্শন না করাটাও বেশ কষ্টকর । সেটা মেনে নেওয়া গেলেও তা যেন মনের দূরত্ব বা আত্মার দূরত্ব না সৃষ্টি করে দেয়, চিন্তা ঠিক সে জায়গায় । এই শারীরিক দূরত্ব সামাজিক,  আর্থিক সমস্যা তো তৈরি করছেই, সাথে বয়ে আনছে মানসিক অস্থিরতা ও শূন্যতা। যার থেকে দেখা দিচ্ছে ' ডিপ্রেসন ' নামের এক ভয়ানক ব্যাধি । শিশুরা পর্যন্ত হয়ে উঠছে অশান্ত,  খিটখিটে । একা মানুষ আরো একা হয়ে পড়ছেন । খুব বেশি করে ভাবতে হবে আমাদের । সমাজকে, রাষ্ট্রকেও। মনে রাখতে হবে,  এই ভাইরাস হয়তো বশে আসবে একদিন । কিন্তু তা যেন আমাদের মনে, মননে কোন এমন অসুখ জন্ম না দেয় যার নিরাময় দুরূহ হয়ে পড়ে ।  সতর্কতা আবশ্যক । নাহলে উৎসবের আলো অতি সহজেই ফিকে হয়ে যেতে পারে ।
আমরা যেমন সমাজ গঠনে করেছি, তেমনি ভালোবাসার দ্বারা মানবিকতার বন্ধনে তাকে রক্ষা করাও আমাদেরই দায়িত্ব। আমাদের এর থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি যাতে আমরা একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি,  সেটাও দেখতে হবে। নইলে সভ্যতার ভিত নড়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
আবার এখনের পরিস্থিতি আরো ঘোরালো হয়ে উঠছে। কেরালায় ওনামের পর করোনা রোগীর সংখ্যায় অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। আমরা সেই একই রাস্তায় হাঁটব না তার থেকে শিক্ষা নেব, তা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। কাজেই প্রতি মুহূর্তে সাবধান থাকা আবশ্যক। দূরত্ব বজায় না রেখে অবাধ মেলামেশার ফল যে মারাত্মক হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। উৎসব হোক, কিন্তু তা যেন কখনোই স্বাস্থ্যবিধিকে লঙ্ঘন না করে! উৎসবের শেষটাও যেন আনন্দের ও শান্তির হয়, সুস্থতার হয়, এটাই একমাত্র চাওয়া।
মানুষের জন্য মানুষের তৈরি এই সভ্যতার রক্ষার দায়দায়িত্ব সব মানুষকেই নিতে হবে ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register