Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব - ২৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব - ২৮)

স্রোতের কথা

পর্ব - ২৮

(সাফারিং রুম)

‌" বুহুউউউউ....ফোর গডেসের ব্লেসিংস...একশো রকমের ভ্যারাইটির সুপারপাওয়ার...কতই না খেল দেখলাম...টুট্ টুট্‌...তাতেও রক্ষে নেই... দোসর আবার চাষীর মেয়ে...তারও আবার সুপার পাওয়ার...কত শখ্...সেও নাকি ইসপ্যামিয়ন হবে...হুঁহ্...তাদের নাকি এত্ত এত্ত পাওয়ার....যা ইসপ্যামার হিস্ট্রিতে বাপের জন্মে আগে কেউ দেখেই নি... হিহিহিহি...আর? ইসপ্যামার হিস্ট্রি তে এটাও হয়নি...যে আসার দুদিনের মধ্যেই বাই বাই ইসপ্যামা " আমরা সবাই আশংকা ভরা মন নিয়ে নীরবে... আলো ভরা, সাজানো গোছানো ইসপ্যামার রাস্তা ধরে চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছিলাম...সাফারিং রুম থুড়ি প্রফেসরস্ ডেনের দিকে... নিজেদের মধ্যে সবসময় কলকল করে কথা বলতে থাকা আমরা একদম চুপচাপ ছিলাম...আসলে আমাদের সবার মধ্যেই চাপা ভয় আর অনিশ্চয়তার নেগেটিভ ভাইবস খেলা করে বেড়াচ্ছিল। আমাদের আশপাশ দিয়ে যতজন যাতায়াত করছিল...মনে হচ্ছিল যে সবাই যেন আমাদের দিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে ফিসফিস করতে করতে যাচ্ছে...এরই মধ্যে হাওয়ায় উড়ে এল বিদ্রুপ মাখা হাসি আর কথাগুলো... না তাকিয়েও আমরা বুঝতে পারলাম...এই কথাগুলো কাদের থেকে আসতে পারে... "স্রোত... আমার কিন্তু মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে... গিয়ে আলোহাকে ঠাস্ ঠাস্ চড়িয়ে দেবো... এমনিতেই মেজাজ খচে আছে" "প্লিজ্ মিট্টি...যখন তখন রেগে গিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু করিস না...ওরা ইচ্ছে করে আমাদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে কিন্তু যাতে আমরা আবার একটা ভুল করি...আর তার ফায়দা ওরা তুলতে পারে" ‌"মিট্টি...স্রোত ঠিকই বলেছে...ইগনোর দেম...জেলাস বিচ্"...প্যাম আলোহা দের গ্রূপটার দিকে তাকিয়ে মুখ বেঁকিয়ে চুল ঝাপটালো... "ট্যাকি...ডাউনমার্কেট...স্টিংকিং মোরন... ছোটলোকের বাচ্ছা... অনিন্দিতার চামচে...এবার মজা টের পাবে..." ‌ এই সব কথা বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই আমরা আমাদের গন্তব্যের কাছে পৌঁছে গেলাম... বিশাল প্রাসাদোপম বাড়ির সামনে, তিন ধাপ পাথরের সিঁড়ি উঠে যাওয়া কালো এবনি কাঠের কারুকার্য করা বিশাল দরজা...আর বন্ধ দরজার সামনে একজন হিউম্যানয়েড রোবট ছাড়াও কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিলভিয়া... "এতজন ভীড় করে এসছো কেন??...হটো...হটো সবাই...সোত আর মিত্তিকা... শুধু তোমরা দুজন চলে এসো।" "এক্সকিউজ মি ম্যাম...আমরা সবাইও ওদের সাথে আসতে চাই প্লিজ... আমাদেরও প্রফেসরদের কিছু বলার আছে..." ডাইকো সামনে এগিয়ে এল "শাট-আপ্ " সিলভিয়া এত জোরে চিৎকার করে উঠল যে আওয়াজের একটা ওয়েভ যেন ধাক্কা মেরে আমাদের দু'পা পিছিয়ে দিল...আমরা সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে সিঁটিয়ে গেলাম। " দলবাজি হচ্ছে এখানে!! নতুন এসেই এতবড় সাহস!! তোমাদের তো এখন নিজের নিজের ক্লাসে থাকার কথা... রুটিন তো সিনথিয়া দিয়ে এসেছে...তার পরেও দলবাজি করতে চলে এসেছ এখানে!!" "বারবার একই কথা কেন বলছেন ম্যাম! বন্ধুত্বকে যে এখানে দলবাজি বলে তা তো জানতাম না ম্যাম...আমরা যাবোই " সুজির গলায় রাগ আর ক্ষোভ মাখামাখি... " তুমি...ইউ ডেয়ার!!নতুন এসে এত সাহস!!তোমাকে আমি...." ‌ "কি হয়েছে সিলভিয়া??এত চীৎকার কিসের?" বিশাল দরজাটা যেমন বন্ধ তেমনই আছে...অথচ দরজার সামনে থেকে একটা পরিচিত গলার আওয়াজ ভেসে এল...আর চমকে তাকিয়ে গলার মালিককেও দেখতে পেলাম... "না মানে...ম্যাডাম অনিন্দিতা এই নতুন ফ্লেজলিং গুলোর এত সাহস...যে দু'জন কে ডাকা হয়েছে...আর সবকটা চলে এসেছে...বলছে ওরাও নাকি বন্ধুদের সাথে থাকতে চায়...হাই প্রিস্টেস জানলে..." "ঠিক আছে, আসতে দাও ওদের" "কিন্তু ম্যাডাম!! শুধু তো দু'জনের যাওয়ার কথা... হাই প্রিস্টেস যদি আমার উপর রেগে গিয়ে আমাকে....!" "মিরান্ডা তোমাকে কিছু বললে...বোলো, আমি ওদের আসতে বলেছি..." ‌‌অনিন্দিতা আমাদের দিকে ফিরলেন... "ফ্লেজলিংস্...তোমাদের স্পিরিট টা ভালো লাগলো... তোমরা ভিতরে আসতে পারো... কিন্তু মনে রেখো ততক্ষণ মুখ খুলবেনা...যতক্ষণ না তোমাদের কিছু বলার পারমিশন দেওয়া হয়..." আমরা সবাই একসাথে বলে উঠলাম ‌‌"ইয়েস ম্যাম থ্যাংক ইউ" কেন জানি না... আমার কেমন যেন মনে হলো অনিন্দিতার আপাত গম্ভীর মুখে একটুও হাসি না থাকলেও চোখের ভিতরে একটা মজার আলো ঝিলিক দিচ্ছে। সিলভিয়ার অসম্ভব বিরক্ত আর হতভম্ব মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়েই অনিন্দিতার হাতের ইশারায় ঘড়ঘড়িয়ে খুলে যাওয়া বিশাল দরজাটা দিয়ে আমরা সবাই ভিতরে ঢুকে পড়লাম.... এত বিশাল ঘর যে হতে পারে তা আগে কখনও দেখিনি...বলা যেতে পারে এটা রোমান কলোসিয়ামের মিনি সংস্করণ। ঠিক সেরকমই চারপাশে গ্যালারি ....আর...আর অবাক চোখে দেখলাম ঠিক মাঝখানে এক বিশাল স্টেজ বা প্ল্যাটফর্ম হাওয়ায় ভাসছে!!...সেই হাওয়ায় ভাসা ঝুলন্ত স্টেজের উপর বসে আছেন প্রিস্ট টাইরেসিয়াস,প্রিস্টেস অহনা, হাই প্রিস্টেস মিরান্ডা প্রিস্টলি, প্রফেসর আদিল হাসান আর আরোএকজন মানুষ যাকে এর আগে দেখিনি... মাথার চুল কিছুটা চুড়ো করে বাঁধা আর বাকি চুল মুখের চারপাশে ঝুলছে অসম্ভব উজ্জ্বল সাদাটে আলোময় শরীরের আশেপাশে যেন আলোর বলয় পাক খাচ্ছে। সবচেয়ে অদ্ভুত মানুষটার চোখ দুটো... বিশাল পদ্মপলাশ অর্ধনিমীলিত দুটো চোখে যেন সব যুগের...সারা ব্রহ্মান্ডের সব রহস্য পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। শিশুর মত সারল্য মাখানো মুখ আর অদ্ভুত এক পোশাক পরা...যা আগে কখনো কাউকে পড়তে দেখিনি...উপরের দিকে একটা সাদা চাদরের মত জিনিস জড়ানো...আর নীচে ঐ রকম সাদা চাদরের মত পাতলা কাপড়ই অদ্ভুত ভাবে পরে আছেন উনি। (পরে জেনেছিলাম ঐ পোষাকের নাম ধুতি ও উত্তরীয়)... "চন্দ্রমৌলি"... আমার পাশ থেকে ডাইকোর কান্না মাখা কাঁপা কাঁপা ফিসফিসে গলা ভেসে এল... " আমার গ্যাগ্যার কাছে কত শুনেছি ওনার কথা....গডেস মহাকালীর কনসর্ট দেবাদিদেব মহাদেবের অংশ...তবে সবাই বলে উনিই নাকি সাক্ষাৎ মহাশিব...নিজেকে লুকিয়ে রাখেন‌ আর শুধু একজন অবতার বলে নিজের পরিচয় দেন " ‌‌ আমরা শুধু অবাক হয়ে ডাইকোর দিকে তাকিয়ে রইলাম... " আমি ভাবতেই পারছিনা আমি চন্দ্রমৌলিকে দেখছি... ওঃ গডেস " ডাইকো কাঁপা কাঁপা হাতে চোখ মুছলো... "আবার নিশ্চয়ই একটা নতুন গল্পের কেস্...বুঝলি স্রোত...তবে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো হাইফাই আদমি হবে... কিন্তু আমাদের বিচারসভায় এ কি আজ প্রধান বিচারপতি হতে এসেছে??" মিট্টির কথায় উপচে বেরিয়ে আসা হাসি কোনোরকমে চাপলাম...মিট্টিটা না .... সত্যি পারেও। " স্রোত একটা জরুরি কথা শোন্..." পিছন থেকে সমীর ফিসফিস করলো... "কাল থেকে নানান ঝামেলায় তোদের সবাইকে একটা জরুরি কথা বলতেই ভুলে গেছি...মনে হচ্ছে এখন জানলে কিছু উপকার হতেও পারে... কাল যখন ঐ অদ্ভুত মেয়েটা আমাকে আ্যাটাক করেছিল...আরে ঐ যে...যার হাত মিট্টি ছিঁড়ে দিয়েছিল... আমি যখন ওর গলা চেপে ধরে ওকে কামড়ানোর চেষ্টা করছিলাম...একটা ঘটনা ঘটেছে‌ রে " আমরা কৌতুহলে পড়ে সবাই একটু ঘন হয়ে বসলাম ওর কাছাকাছি... সমীর ওর পকেট থেকে একটা গলায় পরার...লকেট ওয়ালা লম্বা সোনালি রঙের সুন্দর দেখতে চেইন বার করলো..."ঐ পেত্নী মেয়েটা এটা গলায় পরে ছিল। যখন আমাদের মধ্যে টানাহেঁচড়া হচ্ছিল তখন কোনোভাবে এটা ওর গলা থেকে খুলে আমার হাতে জড়িয়ে থেকে গেছিল... আমি রুমে ফিরে দেখি এটা আমার হাতে জড়ানো... আমি এখানে এটা ইচ্ছে করে নিয়ে এসেছি... যদি তোদের পারমিশন না নিয়ে পাওয়ার ইউজ্ করা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়...তোরা প্রমান হিসেবে এটা দেখিয়ে বলতে পারবি...নিজেদের আর আমাদের সবাইকে ঐ অদ্ভুত ছেলেমেয়ে গুলোর হাত থেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তোরা এ কাজ করেছিস..." বলতে বলতেই সমীর চেন টা আমার হাতে তুলে দিল... "বাবারেঃ... ভূতপেত্নীদের ও কত সাজার শখ বল্!!" সুজির গলায় বিস্ময়... " কিন্তু তাতেও কি সমস্যা কমবে...ওটা যে ঐ অদ্ভুত পেত্নী মেয়েটার চেন...তার কি প্রমাণ আছে বল্?...আর...আমরা কেন ইসপ্যামার রুলের এগেইনস্টে গিয়ে নিষিদ্ধ সময়ে...মানে ভোর হওয়ার সময়ে...যখন‌ আমাদের রুমে থাকার কথা...তখন...দক্ষিণ দিকের সেই নিষিদ্ধ অঞ্চলে গেছি...তা নিয়ে তো কেস খেতেই হবে...আর রুকসানার কথা তো কিছুতেই বলা চলবে না..." প্যামের কথা গুলো আমার কানে শুধুমাত্র ঢুকলো... কিন্তু তার কোনো প্রভাবই আমার উপর পড়লো না... কারণ আমি তখন চেন সংলগ্ন ঐ লকেটটা দেখতে দেখতে বুঝতে পেরেছি যে হার্ট শেপড্ এই লকেটটা টেনে সহজেই খুলে ফেলা যায়...আর ওদের কথা শোনার ফাঁকেই ওটা টেনে খুলেও ফেলেছি... আর.. আর আমি অবাক হয়ে দেখলাম...লকেটটার দুটো‌ আধখানা হার্টে দু'জন মানুষের ছবি রয়েছে...তার মধ্যে একটা ছবি আমার খুব পরিচিত... গতকালই সেই মানুষটির সাথে আমার আলাপ হয়েছিল...'উইলি ডি'সুজা'... ইসপ্যামার চিফ হর্টিকালচারিস্ট আ্যান্ড গ্রীন কিপার...যিনি নিজের কষ্টের কথা অকপটে আমার কাছে শেয়ার করে প্রথম আলাপেই আমার উইলি আঙ্কল হয়ে উঠেছেন.... আর বাকি আধখানা লকেটের অংশে একটা আমাদেরই বয়সী ফুটফুটে সুন্দর মেয়ের হাসিমাখা নিষ্পাপ মুখের ছবি রয়েছে... যার তলায় লেখা রয়েছে 'জুহি লাভস্ ড্যাডা'.... এটা কি তবে উইলি আঙ্কলের মেয়ে জুহেতার গলার চেইন ??... কিন্তু সে তো...বহুদিন আগেই মৃত তার গলার চেইন ঐ অদ্ভুত হিংস্র অপমানবীটার গলায় কি করছিল...ওই মেয়েটা কি জুহেতার থেকে চেনটা চুরি করেছিল?? না কি অন্য কিছু... ভাবতে ভাবতেই আমার মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মত একটা চিন্তা খেলে গেল। তবে কী....তবে কী...না না এ কি অদ্ভুত অবিশ্বাস্য কথা ভাবছি আমি!!!
"স্রোতস্বিনী বসুমল্লিক....মৃত্তিকা মাহাতো...তোমরা এই ডায়াসের সামনে এসে দাঁড়াও..." আমার চিন্তার জাল ছিন্নভিন্ন করে কানের কাছে হাই প্রিস্টেসের তীক্ষ্ণ গলা বেজে উঠলো...উনি আমাদের থেকে দশ ফুট দূরত্বে বসে থাকা সত্ত্বেও...আর একটা তীব্র নীল আলোর ফোকাস আমার আর মিট্টির উপরে এসে পড়লো... আমি উঠে দাঁড়ালাম...সবার দিকে তাকিয়ে... চোখ দিয়ে সবাই কে চিন্তা করতে বারণ করে...মিট্টির দিকে তাকিয়ে হাসলাম...আর হাত বাড়িয়ে মিট্টির কাঁপতে থাকা হাতটা শক্ত করে ধরলাম... দুজনে একসাথে দৃঢ় পা ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে...মিট্টির কানে ফিসফিস করলাম... "কিচ্ছু হবে না... আমি আছি তো....."

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register