Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্য বোলো না -তে সবর্ণা দে

maro news
গদ্য বোলো না -তে সবর্ণা দে

International Women’s Day

এর আগেও আমার এক লেখাতে উল্লেখ করেছিলাম আমি কোনো বিশেষ দিন মানিনা। তবুও ‘International Women’s Day’ নিয়ে লিখতে বসলাম। 8th March এলেই ঘটা পটা করে কিছু মহিলাদের তালিকা বের হয় যারা নিজো নিজো ক্ষেত্রে নিজেদের সেরা প্রমান করেছে, বা সমাজে তাদের কাজের ছাপ রেখেছেন । তাদের নাম ছাপানো হয় , পুরস্কার দেওয়া হয়, ভালো কথা । এছাড়াও অনেক কর্ম ক্ষেত্রে মহিলাদের ফুল দেওয়া হয় , নানা জায়গায় মহিলাদের ‘International Women’s Day’ শুভেছা বার্তা পাঠানো হয়, সেটাও ভালো কথা । এসবের পেছনে মহৎ উদ্দেশ্য হলো পিছিয়ে পড়া মহিলাদের সমর্থন জোগানো বিশেষ করে সেই সব দেশে যেখানে কন্যা ভ্রূণ হত্যার সংখ্যা বেশি। কিন্তু আমি ভাবি এসব করে কি সেই পিছিয়ে পড়া মহিলাদের সত্যি সমর্থন করা যাচ্ছে , বা কন্যা ভ্রূণ হত্যা আটকানো যাচ্ছে নাকি ঘটা পটা করে ‘International Women’s Day’ পালন একটা উপহাস হয়ে যাচ্ছে।
আসি বিশেষ একটা ঘটনায়। কালীঘাট নামটা যতটা মন্দিরের সাথে জড়িত , ততটাই নিষিদ্ধ পল্লীর সাথে জড়িত। আমি যখন Engineering পড়তে ভর্তি হই , তখন সহপাঠী দের সাথে আলাপ আলোচনায় উঠে আসে বা তাদের কে আমি বলি আমার বেড়ে ওঠা কালীঘাটে। সেই ক্ষনে আমার ব্যাচের ছেলেরা আমার নাম দিয়ে দেয় মাসি। আমি হয়ে উঠি ওদের খোরাকের পাত্রী। আজ সবাই তারা দেশে বিদেশে প্রতিস্থিত , কেউ কেউ আবার সমাজ সেবাও করে। আমার গায়ের রং কালো , ওরা আমাকে কালীঘাটের কালী ও বলতে পারতো , কিন্তু ওরা বলতো কালীঘাটের মাসি। মাসি মানে মায়ের বোন , আমি কিছু ভাবেই ওদের মায়ের বোন লাগিনা , তবুও মাসি। বুঝলাম এই যোগ টা নিষিদ্ধ পল্লীর সাথে। ওখানে কিছু বয়স্ক মহিলা যারা নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলাদের মাথা তাদের মাসি বলা হয়। ওরা আমাকে রেন্ডী বা মাগী বলতে পারতো , কিন্তু কোনোদিন সামনে বলেনি। কিছু টা শিক্ষার কারণে ওরা মাসিতে আটকে গেছিলো হয়তো । কিন্তু সেই সময় আমার সেটাও খারাপ লাগতো। গোটা সমাজের সাথে, আমার ক্লাসের ছেলেদের সাথে আমিও সমান অপরাধী কারণ নিষিদ্ধ পল্লী জড়িত শব্দে আমার অপমান লাগতো , লজ্জা লাগতো। ওরা নিশ্চই আমাকে ভালো লাগানোর জন্য আমাকে মাসি বলতোনা। আজ হাসি পায়। কি বোকাই না ছিলাম আমি। বোকা কারণ আমার খারাপ লাগতো , আমার অপমানিত লাগতো। তখন ছিল বোঝা না-বোঝার বয়েস, তার সাথে যোগ ছিল অবুঝ কিছু আত্মীয় স্বজন বা লোকজনের সাথে ওঠা বসা যাদের সংস্পর্শে থেকে মনে হয়েছিল নিষিদ্ধ পল্লী মানে খারাপ মহিলা । কেউ বোঝানোর জন্য পাশে ছিলোনা। বয়েস বাড়ার সাথে সাথে নিজে থেকে বুঝেছি নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলারাও তো মানুষ। কেউ স্ব ইচ্ছায় এসেছে , বেশির ভাগকে জোর করে পাঠানো হয়েছে। তাদের ফেরত যাবার রাস্তা ছিলোনা তাই আজও দেহ বেচে তারা পেট চালায়। কিন্তু এখানেও তো সেই বিভেদ এসে যাচ্ছে। আমরা সবাই আজ কিছু না কিছু বেচে পেট চালাই । আমরা শ্রম বেচি , বুদ্ধি বেচি , আবার কেউ দেহ বেচে। যারা দেহ বেচে তাদের বলা হয় পতিতা। পতিতাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় তাদের দেহটা লোকে ছিরে খুঁড়ে খায়। আমরা যখন অফিসে কাজ করি তখন কিছু ডেলিভারির পেছনে অনেক জনের মাথা বা বুদ্ধি এবং শ্রম একসাথে কাজ করে, মানে সব কিছুই কিন্তু মিশছে হোকনা সেটা বুদ্ধি বা শ্রম । পার্থক্য শুধু একটাই , শ্রম বা বুদ্ধি দেখতে পাওয়া যায়না , তার ফলাফল দেখা যায়। দেহ টা দেখা যায়। তার মানে যে জিনিস টা দেখা যায় সেটা বাজে , নোংরা , অপবিত্র ?
কালীঘাটের পেটের ভেতর দিয়ে একটা ট্রাম লাইন গেছিলো। আস্তে আস্তে ট্রাম লাইন উঠে যাচ্ছে। তাই ট্রাম লাইন কতদিন থাকবে জানিনা। যাই হোক আমরা ছিলাম ট্রাম লাইনের এপারে , নিষিদ্ধ পল্লী ছিল ট্রাম লাইনের ওপারে , মন্দিরের কাছে। খুব ছোট্ট বেলা থেকে বলা হতো ওই দিকে তাকাবেনা। আমি ভাবতাম ভয়ঙ্কর কিছু আছে কিনা। আসলে কেউ শরীর টা ছিঁড়ে খেলে সমাজের মূল স্রোতে ফেরা যায়না। তার কারণ ছেলেরা নিষিদ্ধ পল্লী গেলেও ‘ না ছেঁড়া দেহ’ ওয়ালা বৌ খোঁজে। তার মানে কেউ শরীর ছিঁড়ে খেলে বিয়ে হবেনা। তখন কার দিনে চাকরি করা একা থাকা মহিলা, পতিতাদের সমান। তার গুন্ না খুঁজে খোঁজা হতো দোষ, সে কটা ছেলের সাথে মিশছে । এখন সমাজ আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে।
এবার প্রশ্ন আস্তে পারে এসব তো জানা কথা , তাহলে এতো জ্ঞান কেন দিচ্ছি। আসলে আমি বলতে চাইছি ‘International Women’s Day ‘ তেও এই বিভেদ তা রয়ে গেছে। সন্মান জানানো মহিলাদের তালিকায় দেখলাম না সেরকম কোনো নাম যে দেহ বেচে সংসার চালায়। আসলে সমাজের সেই ক্ষমতা নেই তাদের গুন্ যাচাই করার। সমাজ শুধু দেখবে তার কটা ক্লায়েন্ট, জামাকাপড় পড়ছে , সে কত রাতে রাস্তায় বেরুচ্ছে । আসলে সমাজ মানেই তো পুরুষ তন্ত্রের ভিড়। সমাজ দেখবেনা ওরা আছে বলে , আমরা আজও কিছু মহিলা নির্ভয়া হয়ে যায়নি। প্রতি মুহূর্তে ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে কিছু না কিছু মহিলা। আমি মনে করি নিষিদ্ধি পল্লী না থাকলে এই সংখ্যা টা আরো বেড়ে যেত। আমাকে স্বার্থ পরের মতো শোনাচ্ছে ? শোনাক। বরের হাত ধরে গাছের তলায় মিষ্টি মিষ্টি প্রেমের গান গাওয়ার থেকে এসব চিন্তা ভাবনা করা বেশি ভালো। আমি শুধু চাই এদের কেও সন্মান জানানো হোক , শুধু একদিন না , ‘International Women’s Day ‘ তে শুধু না , প্রতিদিন যেন সন্মান পায় আর চারটে সাধারণ মানুষের মতো। আর যারা এই কাজ টা করছে তারা যেন স্ব ইচ্ছায় এটা করে। কারণ তারা টাকার বিনিময় কাজ তা করছে। জোর করে দেহ ছিঁড়ে খেয়ে টাকা দেওয়া এক প্রকার ধর্ষণের সমান। বিতর্ক থাকবেই , নিষিদ্ধ পল্লী থাকবে নাকি উঠে যাওয়া উচিত। আমি বলবো নিষিদ্ধ পল্লী নাম টা তুলে দেওয়া উচিত। কেউ যদি দেহ বেচতে চায় সে স্ব ইচ্ছায় বেচুক আর সেটাকে চাকরি করার মতই সন্মান দেওয়া হোক, সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রে আমরা যে সুবিধা পেয়ে থাকি ওরাও সেটা পাক । দু দিন আগেই পড়ছিলাম খবরের কাগজে নামকরা এক ব্যক্তি মুভি বানান , তার পালিতা মেয়ে নিজের জীবিকায় নিজেকে দেহ পসারিনী বলতে কুন্ঠা বোধ করেনি (এটা সত্যি ঘটনা)। বিশ্বাস করুন খবর টা পরে ভীষণ ভালো লাগলো। হোকনা এই সাহসী মহিলার নাম ঘোষণা ‘International Women’s Day’ তে সন্মান জানানো আর বাকি মহিলাদের সাথে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register