Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় A.F.M Shebgatulla (পর্ব - ৩)

maro news
ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় A.F.M Shebgatulla (পর্ব - ৩)

সাবির সুবীর আর মাতলা নদী

পর্ব - ৩

এখন মাতলা ব্রিজ হয়েছে, আগে লোকে নৌকা করে ভুটভুটি, এমনকি ভাঁটার সময় হেঁটেই পার হতো। একটা সময় এমন ছিল, ডক ঘাটে যাবার নৌকা তো ছিলই, তাছাড়াও স্পেশাল নৌকা চলতো। এর স্পেশালিটি হচ্ছে মূল নৌকার দুই মিনিট আগে ছাড়বে আর দুই মিনিট আগে পৌঁছবে, অতিরিক্ত এক টাকা খরচ হবে তার জন্য। শুধু তাই নয়,ভাঁটার সময় কেউ নদী পেরিয়ে এলে পা ধোয়ার জন্য অতিরিক্ত এক টাকা খরচ করতে হত,যা এক রকমের অত্যাচার।শেষের দিকে মানে ২০১০ এ ব্রিজ চালু হয়। তার প্রায় বছর দশেক আগে থেকে লঞ্চ, নৌকার আনাগোনা কমতে থাকে। নব্বই বা আশির দশকের শেষের দিকে যেমন দুর দূরান্তে নৌকা চলাচল করত পরে তাদের আর দেখা যায়নি। এখন সবাই ব্রিজ পেরিয়ে যাতায়াত করে কি গোসাবা, কি বাসন্তী, বা ফুলবাড়ী বা দাহারানি।
তবে নব্বই দশকে যেমন স্পীড বোট, লঞ্চ, বা বসিরহাটের দিক থেকে বিশাল উঁচু কলসি বোঝাই নৌকা আসত তা আর দেখা যায়না।
সাবির সুবীর কাঁঠালবেড়িয়াতে যাবার পর আত্মীয়রা বেশ মজা পেয়েছে। ওরা বললো আমরা ফুলবাড়ীতে বেড়াতে যাবো। আগে নাকি নৌকা চড়ে যেতে হতো , আমরা নৌকা চড়েই যাবো। তো এক আত্মীয় জানালো এখন আর নৌকা চলেনা। ইঞ্জিন ভ্যান, বা অটো চড়ে ওখানে মাত্র আধ ঘন্টায় পৌঁছানো যায়!! ওমা সেকি টিংকু মামা কি গুল মারলো? না না টিংকু মামা ঠিক কথাই বলেছে। এক কালে ওখানে নৌকা চড়েই যেতে হতো, আর সেই রাস্তা প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি ছিল। সুন্দর সুন্দর গ্রাম পেরিয়ে তার পর পৌঁছতে হতো কুঁড়েভাঙা সেখান থেকে ফুলবাড়ী!! ঠিক হলো দুপুরে কাঁঠালবেড়িয়াতে খাওয়া দাওয়া করে বিকালে ফুলবাড়ী পৌঁছনো হবে।
সব ঠিকঠাক হয়েগেলো। দুই বিচ্ছু এবার ফুলবাড়ী গ্রামের দিকে যেতে থাকে। ওরা অটোতে করে এগোতে থাকে।কিছুটা বাসন্তী হাই ওয়ে চড়ে পরে গ্রামীণ রাস্তায় করে শেষে ওরা ফুলবাড়ী পৌঁছলো। গ্রাম বলতে যা বোঝায় এই গ্রামটা তাই। চারিদিক গরু ছাগল করছে, ধূ ধূ বাদা। বাড়িগুলো অধিকাংশ মাটির বাড়ি। গ্রামের মাঝখান থেকে খাল চলে গেছে। সুবীর সাবিরকে বললো তবে যে টিংকু মামা বলেছিল খাল ছিল দুটো পাশা পাশি , মাঝখানটায় পাড়। পরে এক গ্রামের বৃদ্ধ বলল ঠিকই শুনেছ বাবা। খালটা আগে ওরকমই ছিল। এখন মাঝখানের পাড়টা ভেঙে খালটা আরো চওড়া করা হয়েছে।
সাবির সুবীর সন্ধ্যায় আত্মীয়র বাড়িতে হালকা চা, জল খাবার খেয়ে পায়চারি করছে এমন সময় টিংকুমামার ফোন এলো!! টিংকু মামা ক্যানিং সম্মন্ধে বেশ এক্সপার্ট। টিংকু মামা জানালো আগামী কাল সকালে ফুলবাড়ীতে আসছে। শুনে সবির সুবীর তো বেশ উৎফুল্ল। ক দিন তিন জন মিলে বেশ মজা করা হবে।
দুই বিচ্ছু যে আত্মীয়র বাড়িতে উঠেছে তাদের বাড়ি মাটির দুই তলা বাড়ি। প্রথম গ্রাউন্ড ফ্লোর অবশ্যই মাটির। কিন্তু বেশ উচু। আর প্রথম তলটা কাঠের তৈরি। এটা তেতুল কাঠের তৈরি তল। উপরে খড় দিয়ে ছাওয়া। অসাধারণ মৃদু মন্দ বাতাস বয় উপরের তলায়। সামনে সবজির বাগান, পাশেই পুকুর। পুকুরের শেষে আর একটা মাটির বাড়ি। আর পাশেই খামার। গরুগুলো মাঠে চরানোর শেষে এখানে থাকে। তবে গোয়াল ঘর আছে। গরুগুলোর জন্য মশারির ব্যবস্থা আছে। সন্ধ্যায় ঘুঁটে আর খড় দিয়ে ধোঁয়া করে মশা তাড়ানো হয়। তার পর গোয়ালঘরের যে দিকটা খোলা সেখানে মশারি টাঙানো হয়। সাবির সুবীর এই ব্যবস্থা দেখে অবাক গেলো! ওরা সহর ঘেঁষা মফস্সলের ছেলে।এখানে নিঝুম রাত পড়ে। আর এমন নিপাট গ্রাম ওদের ভালো লেগে যাওয়া স্বাভাবিক!

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register