Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্য বোলো না -তে (রূপং দেহি, জয়ং দেহি) সৌরভ বর্ধন

maro news
গদ্য বোলো না -তে (রূপং দেহি, জয়ং দেহি) সৌরভ বর্ধন

ঘুম বিষয়ক আরেকটি মৃত্যু

ঘুমোতে ঘুমোতে হঠাৎ হয় কি, মনে হয় মরে যাচ্ছি আমি অথবা আরেকটু সময় আছে মৃত্যুকে জাগাবার। আমি প্রবল চেষ্টা করছি হাত-পা-মাথাসহ শরীরটাকে নাড়াতে, হয়তো পারছিও, কিন্তু শ্বাসের সাথে কী এক অমোঘ আকর্ষণ যেন শ্বাসহীন করে দেয় সেই ক্ষণ। আমি অসহায় হওয়ার চেষ্টা করি, তাও অসম্ভব হয়ে পড়ে সেসময়। কী করি! কী করি! ভাবতে ভাবতে যখন আপ্রাণ হয়ে উঠি তখন হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি আমাকে সম্বিতে ছুঁড়ে ফ্যালে। আমি চোখ মেলি; আমার জানালায় রোদ পড়েছে ---- লেখার সময় মনে হলো আমি কি পরিস্কার দেখেছি রোদটাকে! ফলে আবার আড় চোখে দেখে নিলাম ------- দেখতে দেখতে সবুজ মেহগনি পাতায় রৌদ্র নেমে আসে, তার কিছু আম পেয়ারা লেবুগাছেও ফলেছে হাসিমুখ। একদা যাহা অস্থির ছিল তাহাই এখন সুস্থির ---- অঙ্গে অঙ্গে তার পাখির কলরব। প্রজাপতিবিহীন দুটি ডানা এই রোদ্দুরে পাতায় পাতায় উড়ে বেড়াচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে পাখা। আমি ভাবলাম এখন জানলার ধারে বসেই আছি যখন, চলো লেখা যাক দু-চার লাইন। রাস্তায়ও কোনো যানজট নেই। তবে অদৃশ্য কোন্ ওজোনস্তর আটকালো আলো! এই কালো আলোকেই তো আমি রূপান্তর করি লেখায়। আমি রূপান্তরকারী। আমার অতিবেগুনী বুদ্ধি বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সাধারণ বেঁচে থাকায়। মাত্র তিনটে অণুর একটা গঠন। পৃথিবীর জল বায়ু সবুজ সবুজ সব ধরে রাখছে। আমি হাসছি আমি খেলছি গাইছি আনন্দে ছত্রখান হয়ে উঠে বসছি ধ্যানে। প্রাণে আমার কোনো ইঙ্গিত নেই। চরাচর রৌদ্রকরোজ্জ্বল। আমি নীল আকাশে একক ঠেকনো দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সকল ফাঁকফোকড় মুহ্যমান। লেখা নেই; সংসারী লেখার মতো স্থবির কলকল নেই। আছে জুতো ও ঝাঁটা বাঁধা একটি গাছের শুকনো দলমণ্ডল। আছে প্রমাণিত আর আবছায়া। আছে সন্দেহাতীত শব্দের মিম; ঘামের রেশন মেপে আমি দেখি হাতছুট কাপের ভেতর জানকারি। গুহামুখে আঁতকে আছে চাঁদ। আচ্ছা, এসব ছেড়ে দিন ধর্মাবতার, ওই দূরে দেখুন ভাটার পাঁচিলে শ্যাওলা জমেছে, লাল ইটের উপাদান খসিছে ভূমি 'পরে, তাহাকে আশ্রয় করিয়াছে বট ও পাকুড়। প্রাচীরগাত্রেই আমার সাধের মেহগনি তরতর করিতেছে, দুটি ডালে অজস্র পাতা তীরতীর কেঁপে উঠে। সে ভীষণ পবিত্র এক স্পর্শ; দিগন্ত বিস্তৃত হাওয়ার মতো নিষ্পাপ। আমি কখনও তাকে ছুঁইনি। পাশে তো জল আছে, মাটিও আছে; এখনও পৃথিবীতে বায়ু আছে, সূর্যের তাপ আছে এখনও আমার অঙ্গে অঙ্গে। আমাদের মিলন তাই জরুরি হয়ে শুনুন ধর্মাবতার, একশো চুয়াল্লিশ ধারা জারি করে দিন প্রয়োজনে। আমরা পঞ্চক, আমরা হৃদয়গাত্র খসিয়ে জেনেছি অঙ্কুরোদগমন কারে কয়! আমরা হৃদিরূপ বন্ধন খুঁচিয়ে জেনেছি আবহবিকার ও মাটি গঠন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সুস্থির দুটো স্তরের মাঝে ফিরে যাওয়া, ফিরে পাওয়া সমতল রোদের মিহিমুঠো বুক। যেখানে প্রেমিকার রূপ আকিঞ্চন করা অতি সহজ ------- মরসুমের দীর্ঘতম ঘুম যেখানে আমার গর্ভে ভেদ্যমান ----- সূক্ষ্ম চুম্বন যেখানে ঝরঝর ভেঙে পড়ছে একা : আমি সুযোগ পেতে বসে আছি সেখানে, ক্ষয়ে যাচ্ছে নিতম্বগুটি, প্রবাদপ্রতিম শ্লথে দ্রুত সেজে উঠছে অকিঞ্চিৎ পাড়, পুরনো নাব্যতা নিয়ে আমি গাছের শরীরে বৃক্ষ বদল করেছি প্রিয়। আমার হাতের জন্য অপেক্ষায় ছিল যে দোয়েল, হাত পেয়ে মরল সে। তার মৃত্যুর ভেতর ডুবে গেলো কিছু, এমন কিছু ----- যার উপযুক্ত কাব্যান্তর সম্ভব নয়। তাঁর সারাগায়ে কোনো ক্ষত নেই, পা ভাঙেনি, ডানা ছুঁটে যায়নি ----- তবে কী যে হল, শুধু সকাল হল তাই উড়তে ভুলে গেল সে, দাঁড়াতে ঘৃণা করল, নখরসহ চারটে আঙুল গুটিয়ে রাখল, যতটা সম্ভব দুই ডানা মুড়ে খুঁড়ে দিতে চাইল মাটি, টুঁ শব্দহীন সুখে। কুলতলা থেকে আমি তুলে এনে মা ওকে জল খাওয়াল, কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে জলও খেল খানিক, তারপর আবার যে কে সেই। ওকে কাঁঠালতলায় রাখলাম শিশিরভেজা ঘাসে, পা দুটো, ডানা দুটো টেনে টেনে দিলাম, তবুও কোনো হেলদোল নেই ওর। শুধু কালো চোখ দুটি একদৃষ্টে। কোথায় যে তাকিয়ে আছে, কোনো ভাষা নেই। নেকু কাব্য নেই; নির্মোহতা! ----- মাটির প্রতি এক দুর্বার মোহ সকলের থাকে। ওর বুকের পেটের হাপর তখনও উঠছে নামছে। আমি ওর সারাগায়ে বুলিয়ে দিচ্ছি হাত, বোলাতে বোলাতে অন্যান্য দোয়েলদের কাছে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলাম, কিচিমিচিতে মাথা উঁচু করে চোখ বড় করে কিন্তু নিরুত্তর। সমস্ত ক্ষমতা কোথায় হারিয়ে গেল রে! যোগ্যতমের উদবর্তন হচ্ছে কই! একটা চওড়া শ্যাওলামোড়া পাঁচিলে ওকে রাখলাম যেখানে অন্যান্যরা ছিল। মুখ থুবড়ে রইল আমার। খানিক পরে একটু ডানা ঝাঁপটানোর চেষ্টায় পড়ে গেলাম পাঁচিল থেকে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে না কোথাও, তাহলে কী হচ্ছে, কী হচ্ছে আমার, কিছুই হচ্ছে না কেন! এখানকার মাটি নরম ও ঠাণ্ডা। নাজনে আঠার গন্ধে এই ছায়া আরও রসালো হয়েছে। আঃ শান্তি, চোখ বন্ধ করো। আমার ঠোঁটের পাশ দিয়ে, চোখের পাশ দিয়ে লাল পিঁপড়ের দল উঠে আসছে; কোথায়, কোথায় আমার ডানা! ডানা দুটো একটু ঝাঁপটে দাও। যাবার আগে এই চোখ আকাশ দেখতে চায়। কিন্তু নিষ্পাপ পিঁপড়েগুলো আমাকে উপহার স্বরূপ। কতক্ষণ হল কী জানি! পিঁপড়ের কামড় আর কষ্ট দিচ্ছে না আমায়। এই তো কে যেন ধরল আমায়, আমার চোখের ওপর ঝাঁট, উহু! পিঁপড়েগুলো উধাও! এবার চোখ খুলি। এই তো সেই পাখি। আমাকে হাতে নাও ভাই, তোমার হাতের অপেক্ষায় আছি দীর্ঘকাল। এই তো লাগছে আরাম। আচ্ছা, কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায় ----- জলে! ঘাসে! ধুলোয়! রোদে! কোথায় বলো! ----- আমাকে ঘাসের ওপর বিছিয়ে দিলে আমি আকাশ ছেয়ে দেবো আমাতে আমাতে। তোমার কষ্টের নিরাময়ে আমি অন্ধকার চোখ দুটি খোলাই রাখলাম, আমাকে ছেড়ে দাও এবার। আমি অপেক্ষার ডালে গিয়ে বসি, একটু বিশ্রাম নিই। তুমি ফিরে যাও দৈনন্দিনে ----- সুগন্ধের মুক্তি হোক আমার ডানায়। প্রতিবার এমন বিচ্ছেদের পর আমি স্বভাবতই আরও রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ি। আমার মস্তিষ্কের কৈশিক ফাঁক দিয়ে চুঁইচু্ঁই করে বেড়ায় আমারই রঙিন মুখ। আমি দেখি ব্রহ্মদেশ আমারই অস্তিত্বের ফেনায় ফেনায় মগ্ন।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register