সেই দিনের পর..... দিনে দিনে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যেতে লাগলো.....অর্ক আমার কাছে আসতোই না..আর এলেও মারধোর করার জন্যই আসতো.... আমি নিজেকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করতাম...দরজা বন্ধ করে রাখতাম...কখনো বাঁচতে পারতাম...কখনো পারতাম না...
আমি যে গর্ভবতী...তা আমি নিজে থেকে এ বাড়ির কাউকে বলিনি..কাকেই বা বলবো...যাকে বলার কথা...যে আমার এই খুশীর সবচেয়ে বড়ো শরিক.....সে তো ...
এর মধ্যেই একদিন অর্ক আর বড় জা মানে ঐ পিশাচী টা দু'জনে আমার ঘরে এলো.... আমি শ্রিয়ার চুল বেঁধে দিচ্ছিলাম...অর্ক ঘরে এসে বিনা ভূমিকায় বললো...."আজ থেকে শ্রিয়া ছোটকাকুর কাছে থাকবে...তুই সৎ মা ডাইনি....ওর ক্ষতি করে দিবি"...বলে শ্রিয়াকে বললো .. "এই মেয়ে...কথা কানে ঢুকছে না?? যাঃ...উঠে যা... বেরো এখান থেকে....তুই আজ থেকে ছোট দাদুর কাছে থাকবি...."
শ্রিয়া আতঙ্কে নীল হয়ে... ওর ছোট ছোট হাত দুটো দিয়ে যতটা পারে শক্ত করে আমাকে আঁকড়ে ধরলো
আমি জানতাম...অর্ককে কিছু বলে কিছুই লাভ হবে না..কারণ ও নিজের বশে নেই.... আমি উঠে গিয়ে পিশাচীটার সামনে হাতজোড় করে বললাম....
"আমাকে দয়া করো...ঐ টুকু মেয়েটাকে অন্তত কষ্ট দিয়ো না..."
পিশাচী টা খিলখিল করে হেসে উঠে অর্কর দিকে তাকিয়ে...ঠিক যেমন চাকরবাকরকে হুকুম করে ...সেই ভাবে বললো..."যাও......চুপ করে আমার ঘরে গিয়ে বসে থাকো... আমি না বলা অবদি উঠবে না...যাওঃ"....অর্ক পোষা কুকুরের মতো মাথা নীচু করে বেরিয়ে গেল...
অর্ক বেরিয়ে যাওয়ার পর...পিশাচী টা আমার দিকে ফিরলো.....তারপর মুখে ভয়ঙ্কর ও ঘৃণ্য একটা হাসি ফুটিয়ে বললো..." কি হোলো রে মাগী ?? তুই নাকি সিংগি লগনের মেয়ে...তোর উপর নাকি দেবীর দয়া আছে...তা'লে আমার কাছে হাতজোড় করছিস যে???" বলে একটা শিহরণ জাগানো খ্যাসখেসে্ নারকীয় গলায় হেসে উঠলো......শ্রিয়া ভয় পেয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো.. আমারও পা গুলো থরথর্ করে কাঁপতে লাগলো...
"পিশাচীটা হঠাৎ হাসি থামিয়ে হিসহিস্ করে বললো..." শোন...আমরা দয়ামায়া কাউকে করি না.. আমার থেকে কিছু পেতে হলে আমাকে কিছু দিতে হবে তোকে"
আমি হাতজোড় করে বললাম..."আমার আর কি আছে.... আমার সবকিছুই তো তুমি নিয়েছ...এই ছোট শিশুটাকে অন্তত রেহাই দাও...."
পিশাচীটা খলখল করে হাসতে হাসতেই বললো....
"দিতে পারি রেহাই...এই বাচ্ছাটা যা রোগা...তার উপর বাবা ঠাকুর আবার একে কি যেন করবে... আমি না হয় এটাকে ছেড়েই দেবো....বদলে....তোর পেটের ভিতরের এইটাকে আমার চাই...." বলতে বলতেই আমার বড়'জা.... ( যে নাকি অর্কর ভাষায় এই সংসারের লক্ষ্মী ....) নিজের ছুঁচলো নখওয়ালা আঙ্গুল টা তুলে.... লালসা ভরা চোখে আমার পেটের দিকে তাকিয়ে বুভুক্ষুর মতো ঠোঁট চাটলো
একটা ঠান্ডা হিমেল স্রোত যেন আমার সর্বাঙ্গ বেয়ে বয়ে গেলো..... আমি ছিটকে সরে গিয়ে শ্রিয়া কে জড়িয়ে ধরলাম....
পিশাচী টা সেই অপার্থিব খ্যাসখেসে গলায় হাসতেই থাকলো... ধীরে ধীরে ওর মুখ টা পাল্টাতে শুরু করলো.... চোখের মনি বিলুপ্ত হয়ে... পুরো চোখটাই কালো হয়ে গেল....গোটা শরীরের রক্ত মাংস পচে গলে যেন ঝুলে ঝুলে পড়তে লাগলো.... একটা বিভৎস পচা গন্ধে চরাচর ভরে উঠলো.. ওর চুল গুলো সাপের মত হয়ে হাওয়ায় উড়তে লাগলো.....সেই ভয়ঙ্কর অবস্থায়ই আমার দিকে তাকিয়ে ওটা বলে উঠলো..
"তুই না দিলে কি হবে....আমি নিজেই বার করে নেবো....আর তিন মাস.... তারপর তোর সামনেই.....দেখ.... তোদের কি হাল করি.... আমার খিদে মিটিয়ে তবেই আমি এখান থেকে যাবো....কাউকে ছাড়বো না...."
আমি আর সহ্য করতে না পেরে শ্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে..ওর মুখ আড়াল করে নিজের ও চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম.... কিছুক্ষণ পরে চোখ খুলে দেখি...ঘরে কেউ নেই...আমরা দুজন ছাড়া....
আমি বুঝলাম...আর বাঁচার বা বাঁচানোর কোনো উপায় আমার নেই... আমার পেটের সন্তান আর এই বাচ্চা মেয়েটা যে আমাকে মা বলে মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছে... এদের কারোকেই হয়তো আমি রক্ষা করতে পারবো না... নিজের মৃত্যুর কথা তো ভাবছিই না... কি করবো....কি করা উচিত....এই ভেবে ভেবেই আতংকিত হতাশায় একটা একটা করে দিন কেটে যেতে লাগলো। তবে আমার দূর্ভাগ্য এখানেই শেষ হোলোনা.....
কয়েকদিন পর আমাকে অর্কর ছোটকাকু..... বিলেসী কে দিয়ে ডেকে পাঠালেন... আমি প্রচন্ড ভয়ে ভয়ে ও আশঙ্কায় কাঁপতে কাঁপতে ওনার ঘরে যেতেই উনি বিনা ভূমিকায় আমাকে বলে উঠলেন....
উনি নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ( আমার মতামতের কোনো প্রয়োজনই নেই ওনার )... আমাকে ওনার সাধনসঙ্গিনী করার....আমরা দুজন মিলে একসাথে তন্ত্র সাধনা করবো.... আমার মধ্যে উনি এমন কিছু লক্ষণ দেখেছেন....যেটা তন্ত্র সাধনার কাজে লাগালে উনি নাকি এক মহাপিশাচ শক্তিকে আয়ত্ত করতে পারবেন....সেই শক্তি নাকি পৃথিবীর যত আরাম বিলাসিতা আর ক্ষমতা আমাদের দুজনকে দিতে পারবে.....এগুলো আমাকে বলার একটাই উদ্দেশ্য... আমি যেন মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করি....
আমার ঘৃণায়,রাগে গা একেবারে গুলিয়ে উঠলো....সেই রাগ এবং ঘৃণা সাময়িক ভাবে আমার ভয়কেও ছাপিয়ে গেল...
আমি ঘৃণা উগরানো গলায় বললাম....
"আপনার বয়স তো কিছু কম হয়নি ছোটকাকা.... এখনো এত লোভ....এত আকাঙ্ক্ষা আপনার??এই যে বলছেন যত আরাম বিলাসিতা ক্ষমতা সব আপনি পাবেন...সেসব কতদিনই বা ভোগ করতে পারবেন আপনি?? একদিন তো এই পৃথিবীর মায়া কাটাতে হবে.... আপনার কি পরকালেরও ভয় নেই ?? আমি আপনার কন্যাসমা....আমাকে এইভাবে কুপ্রস্তাব দিতে আপনার একটুও বাঁধলো না??? লজ্জা করলো না...???"
উনি খাটে বসে ছিলেন...উঠে এলেন....এসে আমার ডান গালে এত জোরে একটা চড় মারলেন... আমি চোখে অন্ধকার দেখে ছিটকে পড়তে যাচ্ছিলাম...তার আগেই উনি আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে পড়ে যাওয়া থেকে আটকালেন....
"শোন রে মাগী...জ্ঞান দেওয়ার জন্য তোকে এখানে ডাকিনি....কি করবো তাই জানাতে ডেকেছি....আর এই বুড়ো তোর ঐ জোয়ান.. বশ হওয়া পাঁঠা বরের চেয়ে বেশি তাকত রাখে....সে প্রথম দিন যখন তোকে...... তখনই তুই বুঝবি......তখন এই বুড়োর কাছেই রাতদিন......."
বলে উনি চোখ আর হাত দিয়ে একটি অত্যন্ত অশ্লীল ভঙ্গি করলেন....
আমার রাগে, লজ্জায়, ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠলো... আমি কোনোরকমে উগরে আসা বমির ভাব সংবরণ করলাম....
উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন.... বললেন....
"যাঃ....যেটা বললাম সেটা কর্.... মনকে তৈরী কর... তিনমাস পর...তোর পেটের টাকে কর্ণপিশাচীকে ভোগ দিয়ে... তোকে মুক্ত করে আমার ক্রিয়া শুরু হবে...যদি পালাবার চেষ্টা করিস...বা কাউকে কিছু বলার চেষ্টা করিস...তো.. তার দাম আগে তুই যেটাকে মেয়ে বলিস...সে আগে আর তারপর তুই মেটাবি....যাঃ বেরো মাগি..."
সেদিনের পর আমি নিজেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিলাম.... আমি একটা কথাই নিজের মনে বারংবার বলছিলাম... আমি জ্ঞানতঃ কোনো অন্যায় কোনো পাপ কখনো করি নি...নিজে কষ্ট পেয়েও অন্যকে কষ্টের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে গেছি.....সবসময় ধর্মের পথে, আলোর পথে থাকার কথা ভেবেছি....আজ যদি আমার সাথে এতবড় অধর্ম অত্যাচার হয়ে থাকে...তার প্রতিকার ঈশ্বরকেই করতে হবে...তবে ঐ শয়তান টার নোংরা পরিকল্পনা কে আমি কিছুতেই সফল হতে দেবো না... প্রয়োজন হলে....নিজেকে.....
আমি পালানোর কোনো চেষ্টা করিনি... এটুকু আমি বুঝেই ছিলাম যে তাতে লাভ কিছুই হবেনা...উল্টে বিপদ বাড়বে.... আমার বাইরে বেরোনো বলতে ছিল সন্ধেবেলা ঐ ভাঙ্গা মন্দিরে গিয়ে...বিবর্ণ কালী মূর্তির সামনে প্রদীপ টুকু জ্বালানো আর ফুলটুকু সাজানো.... ইদানিং আমি শ্রিয়াকে বাড়িতে একা রেখে যেতে সাহস পেতাম না...আমার সাথেই নিয়ে যেতাম.....প্রথম ক'দিন বুঝতাম আমাকে কেউ অনুসরণ করছে... একবার বিলেসীর এক ঝলক বোধহয় দেখতেও পেয়েছিলাম.... কিন্তু কয়েকদিন পর সেটা বন্ধ হয়ে গেছিল....অপর পক্ষ বোধহয় বুঝেছিল... আমি পালাবো না...শ্রিয়াকে নিয়ে তো নয়ই...তাই নিশ্চিন্ত হয়েছিল।
সেদিনও আমি মন্দিরের বাইরের একটা পরিষ্কার জায়গায় শ্রিয়া কে বসিয়ে রেখে... মা কালীর সামনে কেঁদে মাথা কুটে কুটে নিজের মরণ কামনা করে... যখন বেরোলাম....তখন ভরসন্ধ্যে...
0 Comments.