Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

এক মাসের গপ্পো - সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব- ৩)

maro news
এক মাসের গপ্পো - সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব- ৩)

মুখী - ৩

আমার ধারণা যে কত ভূল ছিল....তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেলাম... সেদিন ই সেদিন সন্ধ্যায় আমি শ্রিয়াকে পড়াতে বসেছিলাম... হঠাৎ অর্ক ঘরে ঢুকলো...কোনো ভূমিকা না করেই আমাকে জিজ্ঞাসা করলো...."চিন্ময়ী তোমার এতবড় সাহস যে তুমি বৌদিকে অপমান করেছ??" আমি অর্কর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম....এ কোন অর্ক?? গত তিনমাস ধরে আমি যে অর্ককে দেখে আসছি..সে যেন সম্পূর্ণ অন্য কেউ!! অর্কর রক্ত জমা মুখ আর টকটকে লাল ঘোলাটে চোখ দেখে যেন আমার ভিতরটা এক বিজাতীয় আতঙ্কে শিউরে উঠলো.... আমি সবে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলাম...তার আগেই অর্ক আমার চুলের মুঠি ধরে খাট থেকে আমাকে হিঁচড়ে নামালো... আমি টাল সামলাতে না পেরে উল্টে পড়ে গেলাম....আর সামলানোর আগেই অর্ক আমাকে একটা সজোরে লাথি মারলো....আমি ঘরের এককোনে ছিটকে পড়ে কুঁকড়ে গেলাম.... শ্রিয়া চিৎকার করে কেঁদে উঠলো...."বাপি তুমি মা'কে মারছো কেন??"....অর্ক ঘোলাটে চোখে "আর একটা কথা বললে তোকেও মেরে ফেলবো, তোর আসল মা'র কাছে পাঠিয়ে দেবো...দেখবি??" বলতে বলতে শয়তানী হাসি হাসতে হাসতে শ্রিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো.... আমি কোনোমতে অসহ্য যন্ত্রণায় কাঁপতে থাকা শরীর টাকে তুলে অর্ক আর শ্রিয়ার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালাম...অর্ক কে কড়া গলায় বললাম..." আমাকে যা করছো করো... বাচ্চাটার গায়ে বিনাদোষে হাত দেবে না " অর্ক লাল লাল চোখে খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল.... সে রাতে শ্রিয়া কে কোনোমতে খাইয়ে নিজে অভূক্ত রইলাম....কেউ এলো না, দেখলোও না... অনেক রাতে আমি অবসন্ন আতংকিত শরীর মন নিয়ে বেরিয়ে...অর্ক কোথায় আছে খুঁজতে চেষ্টা করলাম.... খুঁজে পেলামও....অর্ক বড়'জা র (নাকি ঐ ভয়ঙ্কর পিশাচীটা বলবো?) ঘরে তার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে আছে....আমাকে পিশাচী টা দেখতে পেল....মুখে একটা ঘৃণ্য বিদ্রূপের হাসি ফুটিয়ে....আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে অর্ককে আরো বেশি জোরে জড়িয়ে ধরলো... আমি কাঁপতে কাঁপতে টলতে টলতে ফিরে এলাম.. আমার শরীর টা কিরকম অস্থির করছিলো... ভীষন গা গুলোচ্ছিল.... ঘরে এসে জানলার পাশে দাঁড়ালাম....মুখ থেকে একগাদা টক জল উগড়ে দিলাম...তারপর ভাবতে লাগলাম আমি এখন কি করবো... আমার সাথে যা হচ্ছে...সেটা তো কাউকে বললেও কেউ বিশ্বাসও করবে না...আর বলবোই বা কাকে... আমার আছে টা কে?? যাওয়ার ও কোনো জায়গা নেই...তাও যদি লোকের বাড়ি কাজ করেও খাই...এই নিষ্পাপ শিশুটা....যে আমাকে মায়ের জায়গা দিয়েছে.. আমার স্বামী...যে পিশাচীর বশে...আর ঐ ঘরে শুয়ে থাকা অসহায় পঙ্গু বৃদ্ধাটা...এদের কি হবে??... কিন্তু আমি কি করবো....এই অসম লড়াই আমি কিভাবে লড়বো.... ভাবতে ভাবতেই মাথাটা ঘুরে আমি অচৈতন্য হয়ে পড়ে গেলাম... পরদিন সকালে দেখলাম শ্রিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি...বাচ্ছাটা অনবরত কাঁদছে আর কচি কচি হাত দিয়ে আমার মুখে জল দেওয়ার চেষ্টা করছে ওর দিকে তাকিয়ে আমার মনে একটু জোর এল... আমি ভাবলাম সব শেষ হওয়ার আগে আমি একটু তো চেষ্টা করি.... দুপুরে লুকিয়ে শাশুড়ি মার ঘরে গেলাম... ওনাকে কোনোমতে সজাগ করে আমি জিজ্ঞেস করলাম ওনার বড় পুত্রবধূর আর ছোট দেওরের সত্যি টা উনি জানেন কি না.... উনি অসুস্থ জড়ানো গলায় যা বললেন...শুনে আমি পাথর হয়ে গেলাম... উনি একদিন মাঝরাতে অসুস্থ ছেলেকে দেখতে গিয়ে দেখেন ঐ সাংঘাতিক পিশাচিনী তার সেই ভয়ঙ্কর রূপে তাঁর ছেলের... নিজের স্বামীর রক্ত খাচ্ছে....ঐ দৃশ্য দেখে উনি ভয়ে পালাতে যাচ্ছিলেন... তখনই পিশাচিনী টা তাকে দেখে তেড়ে আসে আর উনি সিঁড়ি থেকে পড়ে যান... তারপর কোনোরকম তন্ত্র মন্ত্র করে ওনা কে পঙ্গু বানিয়ে...ওনার মুখও সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়... উনি বহুদিন কথা বলতে পারতেন না...তবে আজকাল ওরা ওনাকে আর বিশেষ পাত্তা দেয়না ..তাই হয়তো মন্ত্রের জোর কমার ফলে কিছুটা কথা উনি বলতে পারেন.. উনি আমাকে ঈশারায় নাতনীকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বললেন...এ ও বোঝাতে চাইলেন..... অর্কর আগের স্ত্রীকেও ওরাই মেরেছে....আর উনি এটাও জানেন...এর পিছনে ওনার ছোট দেবরেরও হাত আছে.... উনি বারবার ঈশারায় আমাকে পালিয়ে যেতে বললেন... আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম....এখন এটাই আমার পরিবার...এই ভয়ঙ্কর বিপদে আমার পরিবারের বাকি সদস্যদের ফেলে রেখে আমি যেতে পারবো না....তাতে যদি আমার অপশক্তির হাতে অপমৃত্যু হয়...হোক... সারা জীবন দুঃখে কেটেছে....তাতেও যদি ঈশ্বরের শখ না মেটে...তাহলে উনি যা চান তাই হোক.... শাশুড়ি মার ঘর থেকে বেরোনোর সময়ই যেন মনে হোলো একটা ছায়া কে চট্ করে সরে যেতে দেখলাম এবং আমার দেখাটা যে অমূলক ছিল না তার প্রমাণও সন্ধেবেলা পেলাম... সন্ধ্যায় অর্ক আমাকে প্রচন্ড মারলো...ওর বক্তব্য ওকে নাকি বৌদি জানিয়েছে... আজ আমি শাশুড়ি মার ঘরে গিয়ে ওনাকে আরো অসুস্থ করে দিয়েছি... "হারামজাদি.... আমার বৌদি এতদিন মায়ের এত সেবা করলো... আমার মাকে বাঁচিয়ে রেখেছে...আর তুই ডাইনি...আমার মাকে মারার চেষ্টা করছিস..." হাজার যন্ত্রণাতেও আমার হাসি পেল.... হায়রে অর্ক ... যদি জানতে কে যে সত্যি ই ডাইনি... অর্ক হয়তো আমায় ঐ দিন মেরেই ফেলতো.... কিন্তু হঠাৎ ছোট খুড়শ্বশুর এসে অর্ক কে বাঁধা দিলেন... আমি অবাক হয়ে দেখলাম উনি অর্ককে ঘরের বউ কে মারার জন্য ভীষন বকাবকি করলেন....এমন কি বড়'জা অবদি মুখ বেঁকিয়ে "আদিখ্যেতা" বলে চলে গেল... পরদিন আমি ভাবলাম... একবার শেষ চেষ্টা করে দেখি....ছোট খুড়শ্বশুর কাল যখন অর্ক কে আটকালেন.... উনি ইচ্ছে করলে যে ঐ পিশাচীনি কে আটকাতে পারেন....সেটা অন্ততঃ আমি বুঝতে পেরেছিলাম... ভাবলাম একবার দেখি,যদি ওনার দয়া হয়.... আমার তো কোনো দোষ নেই....আসলে যে কোন মানুষই ডুবে যাওয়ার আগে খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চায়....না হলে আমি এটা ভাবলাম কি করে.... ঐ ঘৃণ্য মানুষ টা....যে সব অশান্তির মূল....যে নিজের পরিবারের সর্বনাশ করতে চায়... একটা নিষ্পাপ ফুলের মতো শিশুকে পর্যন্ত ছাড়ে না... সে আমাকে দয়া করবে...!!! আমি যখন ছোট কাকার ঘরে গেলাম... উনি শুয়ে শুয়ে পা নাচাচ্ছিলেন...আমাকে দেখে আধশোয়া হয়ে বললেন....."আররেএএ কি ভাগ্য আমার.... সুন্দরী নিজে যেচে আমার কাছে এসেছে!!!" আমি কোনো ভনিতা না করে হাত জোড় করে বললাম..."ছোটকাকা দয়া করুন.... আমার থেকে আগে এটা আপনার পরিবার....এই পরিবারের সবাই... অর্ক আপনাকে কত শ্রদ্ধা করে...আর আপনি.....দয়া করুন ছোট কাকা... ইতিমধ্যেই অনেক সর্বনাশ হয়ে গেছে...আর হওয়া থেকে আটকান.... একমাত্র আপনিই পারেন ঐ ভয়ঙ্কর পিশাচিনীর হাত থেকে এই পরিবারটাকে বাঁচাতে...দয়া করুন..." "বদলে আমি কি পাবো??" আমার প্রশ্নটা বুঝতে একটু সময় লাগলো... "আপনি যা চান..... আমি কথা দিচ্ছি আমি অর্ককে বলে সব কিছু আপনার নামে করে দিতে বলবো.... আপনি বললে আমরা এখান থেকে সবাই চলে যাবো...সব আপনার থাকবে......" আমি কথা শেষ করার আগেই উনি হুংকার দিয়ে উঠলেন.... "চুপ মাগী...... ভিখিরির বেটির বড় বড় কথা.... আমার জিনিস আমাকেই তোরা কি দিবি ?? আমার বাপ টা ছিল হারামি.... আমার বাড়ি থেকে পালানোর সুযোগ নিয়ে সব আমার দাদার নামে করে দিয়েছিল....তার খেসারতও দিয়েছে.... চোখের সামনে বড় ছেলের যন্ত্রণার মৃত্যু দেখতে দেখতে নিজেও মরেছে....বড় ভাইয়ের বড় ছেলেটাকেও নিকেশ করেছি....বাকি আছে ছোটো টা....তোর সোয়ামী...সেও কর্ণ পিশাচীর খাদ্য হোলো বলে....আর ওর মেয়েটাকে তো আমি কুমারী অবস্থায় পিশাচ দেবতার ভোগে চড়াবো...তবে তুই তোর রূপযৌবন দিয়ে আমাকে খুশী করে দিলে..তোর প্রাণ টা আমি ভিক্ষে দিয়ে দেবো...." বলতে বলতেই ছোটকাকা একটা জঘন্য ঘিনঘিনে হাসি হাসতে হাসতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন... "আমি চাইছিলাম তুই নিজে থেকে আমার কাছে আসবি....তাই তো কাল তোকে বাঁচানোর খেলা টা খেললাম....." আমি ক্রমশঃ পিছোতে পিছোতে একসময় দেওয়ালে ধাক্কা খেলাম.... অনুভব করলাম আমার আর পিছোনোর জায়গা নেই.....এই নোংরা শয়তান টা আমার সর্বনাশ করেই ছাড়বে.... আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আর কি করবো বুঝে ওঠার আগেই আমার কাঁধে অনুভব করলাম শয়তানটার নোংরা স্পর্শ....আর তারপরেই একটা আর্তনাদ শুনে চমকে তাকিয়ে দেখি শয়তান টা ঘরের একটা কোনে ছিটকে পড়েছে... আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে শয়তান টা বলে উঠলো... "হারামজাদি.....আগে বলিসনি কেন তুই গর্ভবতী??" আমি নিঃশ্বাস নিতেও ভূলে গেলাম.... আমি... আমি মা হতে চলেছি.... মেয়েদের কাছে এর থেকে আনন্দের সম্মানের আর কি আছে... কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এটা খুশীর না আশংকার সেটাই তো বুঝতে পারছি না... আমার ভাবনার মধ্যেই শয়তান টা আমার কাছে এসে দাঁড়ালো....আঙুল নেড়ে বললো... "আমার গুরুর নিষেধ আছে....তাই তোর গর্ভের তিনমাস অবদি তুই বেঁচে গেলি.... তিনমাস পর তোর গভ্ভের বাচ্চাকে বের করে এনে তোর সামনেই কর্ণ পিশাচীর খাবার করবো...আর তোকে...." বলতে বলতেই একটা উন্মাদের মতো হাসতে শুরু করলো অর্কর প্রিয় ছোটকাকা....... আর আমি কোনোমতে দরজা খুলে হাঁফাতে হাঁফাতে আর অন্ধের মতো হোঁচট খেতে খেতে আমার ঘরে ফিরে এসে খাটের উপর শরীরটাকে ছুঁড়ে দিয়ে অচেতন হয়ে গেলাম।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register