Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদকীয়

maro news
সম্পাদকীয়

আকাশ দেখারও রকমফের আছে

ছোটবেলায় মা একটা কথা বারবার বলতো, "আকাশ দেখারও রকমফের আছে"| আকাশ দেখা? সে আবার কি জিনিস? আকাশ তো দেখতেই পাই, হয়তো পাইনা, স্কুলবাসে যেতে যেতে চেষ্টা করে দেখতাম, জল-রং নিয়ে বসে ময়ূরপঙ্খী নীল নাকি অল্প অল্প মেঘে ঢাকা ধূসর-নীলের একটা অদ্ভুত রসায়ন, সেটা বুঝতেই অনেক সময় লাগতো। পদার্থবিদ্যা বোঝাতো আলোর প্রতিসরণ, বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা সূর্যের আলো অনেকটাই নীল, এবং আমাদের চোখ বেগুনী আলোর চেয়ে নীল আলোতে কিছুটা বেশি সংবেদনশীল তাই আকাশটি নীল দেখা যায়। এ তো গেলো পদার্থবিদ্যার কথা, কিন্ত ক্লাসে বসে পেন্সিল চিবোতে চিবোতে 'তারে জমিন পর'-এর ঈশানের মতো আমরাও হয়তো আকাশ নীল দেখার সব রহস্য সবসময় অনাবৃত হোক সেটা কখনোই চাইতাম না। টেলিস্কোপ দিয়ে রাতের আকাশ যেমন লাগতো, ঠিক তার থেকে অনেক অনেক আলাদা লাগতো বিড়লা তারামণ্ডলে গিয়ে আকাশ দেখার রং।প্লাস্টিকের প্যালেটে জলরং গুলতে গুলতে প্রুশিয়ান নীল আর কোবাল্ট বা ধাতুজাতীয় নীল রঙের আকাশ দেখাটা আবার অন্যরকম ছিল। কাজেই রকমফের সবসময়ই ছিল, আছে, আবার থাকবেও। ছাদ থেকে আকাশ দেখা অনেকটাই উজ্জ্বল, বিকেলে যখন আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে টিয়াপাখি অথবা মাঝেমাঝে মাছরাঙার ঝাঁক এয়ারপোর্টের কাছে উড়ে যেতো তখন তাদের ডানার ঝটপটানিতে আকাশের রং কখনো সবুজ, কখনো গাঢ় নীল অথবা বেগুনী আর লালের একটা মায়াময় স্নিগ্ধতা ধারণ করতো। আকাশ দেখার রকমফের হতো, বৃষ্টির বিকেলগুলো যখন কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে এসে ঝমঝমিয়ে গা-ভিজিয়ে একরাশ বকুল ফুলের শুভেচ্ছা জানাতো, তখন হঠাৎ হাওয়ায় চুলগুলো বিস্রস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়তো গালের দুপাশে, ঝড়-জলের ফাঁক দিয়ে অন্য একটা আসমানী রং দেখা যেতো, একটা আসমানী রঙের পাঞ্জাবি, যখন চোখ নামিয়ে বুঝতে পারতাম আকাশ দেখতে দেখতে বড় হয়ে গিয়েছি অনেকটাই। শৈশবের জলছবি, কৈশোরের মেঘ-চাপা দীর্ঘশ্বাস, নচিকেতার নীলাঞ্জনা, আর রূপমের মন-দামাল 'নীল রং ছিলো ভীষণ প্রিয়' তো আকাশের রকমফের বুঝিয়েই দিয়েছিলো, এখনো দেয়।বড় হয়ে ওঠার আকাশটা হয়তো একেবারেই অন্যরকম।রং থাকে, দেখতে পাইনা সবসময়, খুঁজতেও সময় লাগে, সেই আকাশে যুদ্ধ হয়, কাড়াকাড়ি হয়, ধাতব বস্তুর সংঘাত হয়, আর ভালোবাসা না পেয়ে আকাশটা গুটিগুটি পায়ে দূরে সরে যায়। চাকরি সূত্রে এখনো আকাশ দেখি, ক্লাসের ফাঁকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন থেকেও আকাশ দেখা যায়, তবে সেটা মুঠোফোনে বন্দি, অন্তর্জালে বোতাম টিপে টিপে জানতে হয় আকাশের কতরকম রং আবিষ্কৃত হচ্ছে রোজ, কোনাচেভাবে দেখবো, নাকি প্যানোরামিক ভিউ দেখবো, নাকি ফটোগ্রাফির নিপুণ কারিগরীতে শিখে নেবো তিনটে আখাম্বা গগনচুম্বী স্থাপত্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিশেষভাবে মাথাটা উঁচু করে তাকিয়ে থাকবো, কোনো এক মন্ত্রবলে যদি আকাশ দেখার কোনো রকমফের ঘটে।যদি কোনোভাবে রাজারহাটের আকাশটা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় আমার স্বপ্নের দার্জিলিংয়ের আকাশটার সাথে। আমরা সাহিত্য হৈচৈ-এ প্রত্যেক শনিবার নিয়ে আসছি সেই মন-ভালো করার আকাশ, ছোট্ট বন্ধুদের জন্যে তো অবশ্যই, আর সব্বাই যারা যারা ছোট্টবেলাগুলোকে আবার ফিরে পেতে চাও। তোমাদের গল্প, বায়না, কবিতা, আঁকা, ভালোলাগা, মন্দলাগা, দুষ্টুমি সবকিছুর জন্যে আছি আমরা টীম টেকটাচটক শনিবারের 'হৈচৈ' নিয়ে। মেইল করো: sreesup@gmail.com techtouchtalk@gmail.com

শ্রীতন্বী চক্রবর্তী

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register