Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব - ৩১)

maro news
সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব - ৩১)

একত্রিশ 

সেদিন সন্ধ্যাবেলাতেই আমায় রিলিজ করে দেওয়া হল হসপিটাল থেকে। হসপিটালটার নাম হল "কুইকহিল "। আগে কোনোদিনও নাম শুনিনি। ছোট খাটো কিন্তু খুব সাজানো গোছানো। আসলে এটা একটা নার্সিং হোম, লেকটাউন ই অবস্থিত। কোমরের ট্রাকশন খুলে আমাকে এল. এস বেল্ট পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক রেস্ট্রিকশন মেনে চলতে বলা হয়েছে। আমি হাঁটতে পারছিনা। বা হাত ভাঙা বলে একটা চার পায়ার ওয়াকিং এড দেওয়া হয়েছে। আমাকে হুইলচেয়ারেই নামানো হল। কোমরের ব্যথাটা ভালোই অনুভব করছি। নিজের ওপর করুনা হচ্ছে আবার রাগও হচ্ছে। রাগ হওয়ার কারণ আমার এই দুরবস্থা তো যেচে দেখে আসা। শ্রেয়ান এর কথা মনে পড়লেই নিজের কষ্ট ভুলে যাচ্ছি। আমায় নিতে এসেছে লুলিয়া আর বাল্মীকি। আসলে রিলেটিভ হিসাবে লুলিয়ার ফোন নাম্বারটাই দেওয়া হয়েছিল। তাই তাকেই এসে সই সাবুদ করে আমায় রিলিজ করতে হয়েছে। আমার খুব লজ্জা লাগছে। আমার জন্য ভদ্রমহিলাকে কত ভোগান্তি সহ্য করতে হল। আমার কথা মত বাল্মীকি আলমারি থেকে ক্যাশ টাকা বের করে নিয়ে এসেছিলো। সব হিসেব চুকিয়ে ট্যাক্সি করে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আমার কোনো মেডিক্লেম নেই। কোম্পানির পলিসিও অ্যাভেল করিনা তাই নিজের পকেটের উপরি নির্ভর করতে হয়। আমার অনেক গাফিলতির মধ্যে এটাও একটা। আমি অবশেষে বাড়ি ফিরলাম সঙ্গে লুলিয়াও এলো। বাল্মীকি সব অরেঞ্জমেন্ট করেই রেখেছিল। মানে বিছানাটা পড়ি পাটি করে দুটো এক্সট্রা বালিশ রেখেছে। খাটের পাশে উরিনে পটও রেখেছে একটা। লুলিয়া বললো, " আমি তালে চলি মিঃ চৌধুরী। নিজের খেয়াল রাখবেন। আমি আসবো রোজ।আমি কিন্তু ট্রেন্ড নার্স। "আমি আপত্তি জানিয়ে বললাম, "আপনাকে কষ্ট করে আসতে হবে না। আমার তো ক্রাইসিস পিরিয়ড কেটে গেছে। তাছাড়া আমি তো এখন অনেকটা ভালো আর দেখাশোনার জন্য বাল্মীকি তো আছেই "লুলিয়া নাছোড়বান্দা বলে, "কেন আপনার কি আপত্তি আছে? "আমি হার মেনে বললাম "আচ্ছা আপনি যা ভালো বুঝবেন করবেন "। লুলিয়ার ছেলে একা আছে বলে চলে গেল। আমি বাল্মীকিকে ল্যাপটপ টা নামিয়ে দিতে বললাম। শ্রেয়ান ঘরে নেই ভাবতেই খারাপ লাগছে। ও যদিও অনেক সময় ই থাকে না। তবে সেই না থাকা আর এখনকার না থাকার মধ্যে বিরাট ফারাক আর এখনকার না থাকার কারণটা কষ্ট দায়ক। সিডিটা ল্যাপটপের মধ্যেই ছিল। অন করে দেখলাম আমার আন্দাজ একেবারে ঠিক। ছাব্বিশ টাই ফোল্ডার আছে। আর জায়গা গুলির নাম আ থেকে Z পর্যন্ত সবকটি লেটার দিয়েই আছে। কিন্তু ফোল্ডারগুলোতে ঢোকার আগে কবিতার মানে খুঁজে বের করতে হবে। প্রথমে কবিতাটা পরে আপাতত রোমান্টিক বলে মনে হয়। চিঠিগুলোর হদিস পেয়েছি। ওগুলো হল ইংলিশ আলফাবেটের ছাব্বিশটা অক্ষর। কিন্তু মনে হচ্ছে সব লেটার এর কথা বলা হচ্ছে না। যেই লেটার গুলো কোনো কিছুতে নেই সেই লেটার গুলোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কিসের মধ্যে নেই? ওটাই হেয়ালি মেহনতের গান আবার কি? আট সেকেন্ডের কথাটাও খটকা লাগছে। আট সেকেন্ড কমাতে হবে। কিন্তু কার থেকে? আবার ভাবলাম কবিতাটা। খটকা গুলো নিয়েই ভাবতে হবে। দাঁড়িয়ে, চিঠি, গান, মেহনতের গান, আট সেকেন্ড। এগুলো একটা ওয়ার্ড ডকুমেন্ট খুলে লিখে ফেললাম। চিঠিটা বুঝেগেছি। ডিলিট করে দিলাম দাঁড়িয়ে গান। হঠাৎ হসপিটালে শুয়ে থাকার সময় জাতীয় সংগীতের কথা মনে এল। গানটা শুনেও আমি দাঁড়াতে পারিনি। মেহনত টা ইংলিশে MEHNAT লিখেছি। মাথায় মাথায় বিদ্যুতের মতো খেলে গেল ওটা যদি জাম্বল ওয়ার্ড হয় তালে হবে ANTHEM। তার মানে ভারতের ন্যাশনাল আন্থেম এর কথা বলা হয়েছে কি? আরে তাই তো !জীবনের শেষ মিনিটে। এক মিনিট হয় ষাট সেকেন্ডে। তার থেকে আট সেকেন্ড কমালে হয় বাহান্ন সেকেন্ড। ইউরেকা !ভারতের জাতীয় সংগীতের ডিউরেশন তো বাহান্ন সেকেন্ডই হয়। আমি উত্তেজনার বসে উঠে বসলাম। তার মানে দাঁড়াচ্ছে "জনগণমন অধিনায়ক "এর মধ্যে যে লেটার গুলো নেই সেগুলোর কথাই বলা হয়েছে। তাহলে ন্যাশনাল আন্থেমের ইংলিশ ভার্সান খুলে দেখতে হয়। নেট ঘেটে যে ইংলিশ ভার্সান টা গ্রহণযোগ্য মনে হল একটা কাগজে লিখে ফেললাম। ইংলিশ ভার্সানটা হল :- Jana Gana Mana Adhinayaka jaya he Bharata Bhagya Vidhata Punjabo Sindhu Gujrat Maratha Dravida Utkala Banga Vindhya Himachala Yamuna ganga Uchchalla Jaladhi Taranga Tava Subha name Jage Tava Subha Ashisa Mage Gahe Tava Jaya gatha Jana Gana Mangala Dayaka Jaya he Bharat Bhagya Vidhata Jaya he, jaya he, jaya he Jaya Jaya Jaya Jaya he বোঝা যাচ্ছে ন্যাশনাল আন্থেমের মধ্যে F, O, Q, W, X, এবং Z এই লেটার গুলো নেই। বাংলা কবিতাটায় এটা বা ওটা নাই বা ধরলাম কথাটার তাৎপর্য বুঝতে হবে। আবার ভাবতে বসলাম। ভেবে বের করলাম 'a টা বা o টা নাই বা ধরলাম এই কথাটাই হেয়ালি করে লিখতে চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ উপরের ছটি লেটার থেকে o বাদ যাবে। অর্থাৎ আমার দরকারি লেটার গুলো হল F, Q, W, X, যে "ইয়েস !আই গট ইট !বলে আমি উত্তেজনাবশত বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। বাল্মীকি আমার চিৎকার শুনে ছুটে এসে গোল গোল চোখ করে বললো "একই দাদাবাবু তোমার কোমর !"

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register