Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

Cafe কলামে পূর্বা দাস - ৩

maro news
Cafe কলামে পূর্বা দাস - ৩

প্রান্তজন

ওরা...

বছর দুয়েকের জন্য যখন রুখা সুখা এই পশ্চিমী শহরে স্থানান্তরিত হতে হলো, পরিজনরা হা হা করে উঠেছিল। আহারে! মেয়েটা একা অতদূরে, সাথে আবার ছোট ছেলে... কিন্তু আমি সাংঘাতিক ধুরন্ধর। সারাদিনে ঘন্টা কয়েকের রান্না, ব্যাস - কাজ শেষ। ছেলে স্কুলে পাঠশালায় থাকার সময় টা অনেকখানি। কাজেই আমার মাঠে-ময়দানে চড়ে বেড়ানোর সময়ও অনায়াসে হাতে এসে যায়। দূর দেশে প্রতিনিয়ত লৌকিকতার দায়ও থাকেনা। আর সাবেকী কাজকর্মের ভার আমি ঝুড়ি ভরে নামিয়ে রেখে এসেছিলাম। দুবছরে সেদিকে অন্ধ থাকবো এই প্রতিজ্ঞায়।
কোটা শহরটাকে আমি অলিতে-গলিতে খুঁজেছি। সুঁচের ছোট ছোট ফোড়ের মত যত্নে বুনেছি মগজে। প্রতিদিন আলাদা আলাদা বাজারে সবজি,ফল কিনতাম। অহেতুক হাটুরে গল্প জুড়তাম বাজারী লোকেদের সাথে। মিছিমিছি ঝগড়া করতে করতে জেনে নিতাম ওদের ঘর দুয়ার, সকাল সন্ধ্যার হাল হকিকত।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হত শহর ছাড়িয়ে আরো একটু ছড়িয়ে দিতে আমার চলিষ্ণু মন কে।কোটা শহরের পূবপ্রান্তের ছোট্ট রেলস্টেশন দখনিয়া তালাও ছাড়িয়ে হাইওয়ে চলে গেছে বাঢ়া জেলার দিকে। বেশ কিছুটা জায়গায় প্রচুর আমগাছ। মার্চ মাস।বৃষ্টি হয়নি। তাই মুুকুলের গর্ব অটুট। পাশেই কাঁটাওয়ালা খেজুর গাছের সারি। আর একটু এগোতে দেখি, রাস্তার দুপাশে মাঝে মাঝে ছোট ছোট তাঁবু পেতে বাস করছে বেশ কিছু লোকজন। কারা এরা? রাজস্হানের অসংখ্য উপজাতিদের কথা কিছুটা নেটের দৌলতে কিছুটা ঐতিহাসিক ডক্টর মথুরালাল শর্মার বই থেকে জেনেছি। বানজারা কি? নাকি গাঢ়ড়িয়া লোহার? থামাও অটো। রমজানী অটোওয়ালা আমার মেজাজ মর্জির খবর রাখে। বিনাবাক্যে অনুবর্তী হয়। একটু অতিরিক্ত সতর্ক থাকে শুধু। কারন চাচা নিজেও জানেনা এরা কারা। সামনে যাদের পেলাম, নিজেদের পরিচয় দিল যুগী সম্প্রদায়ের নামে। বাঁশ চিরে টোকরি বানায় এরা। এটাই নাকি বহুযুগের জীবিকা এদের। তিন চারটে তাঁবুতে মোটামুটি সবাই একই পরিবারের। কথা হল রেখা আর ওর মর্দ শাহরুখ ওরফে রামনিবাসের সাথে। বছরের আটমাস ওরা এখানেই থাকে। বর্ষাটুকু কাটিয়ে আসে আরো পশ্চিমে। যথার্থ পরিযায়ী।এই অঞ্চলে বৃষ্টিতে কি অবস্হা হয় তা জানি। মাটির জলধারণের ক্ষমতা কম। একটু বৃষ্টিতেই জল উঠে আসে মাটির ওপর। সাথে যতরকম পোকামাকড়, সাপ, বিচ্ছু। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নগ্ন মাটির ওপর থাকা অসম্ভব। শেঠজী থাকে শহরের ভিতরে। লরি বোঝাই বাঁশ পাঠিয়ে দেন তিনিই। এখানে আর জঙ্গল কোথায় যে ওরা বাঁশ পাবে! কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আসে হাইওয়ের ওপাড় থেকে। তারপর দিনভর চলে টোকরি বানানো। রান্না খাওয়ার জন্য জল আনে রাস্তার কল থেকে। তিনটে ইঁটের চুলাতে কুড়োন কাঠকুটো জ্বেলে রান্না করছিল রেখার নিজের বোন সুরমাইয়া। একরত্তি একটা বাচ্চা ওর। বয়স এখনও বছর পোরেনি। আরেকটা ছেলে বছর দুয়েকের। রেখার তিনটে বাচ্চা। দুই ছেলে দাদা দাদীর কাছে থাকে যোধপুরের ওদিকে। মেয়েকে এনেছে এখানে কয়েকদিন হল। তিনজনেই যায় সরকারী স্কুলে। নাঃ , আধার কার্ড, ভোটার কার্ড বা অন্য কোনরকম পরিচয়পত্র নেই ওদের। বাচ্চাদের জন্মপত্রীও নেই। আমি একটা টোকরি কিনতে চাইলাম। বলল, দেওয়া যাবে না। গুনে নিয়ে যাবে শেঠজী মাত্র অর্ধেক দামে। হঠাৎ হইহই করে একদল তরুণ মারুতি ভ্যান থেকে নামে। হাতে রেফ্রিজারেটেড পোলিওর বাক্স। পাঁচ বছরের নীচে পোলিও খাওয়ানো চাই সবাইকে। আর বাকী সব? পোলিওর দু ফোঁটার সাথে যে আরো দু গ্লাস জল লাগে বাচ্চাটার, তার কি? স্বাস্হ্যকেন্দ্রের দরজা বন্ধ ওদের জন্য। হবু মায়েদের জন্য নেই কোন ব্যাবস্হা। শেঠজীর কাছে হপ্তাউশুল না পাওয়া গেলে চুলা জ্বলে না। পয়সা ছাড়া দোকানে একদানা গেঁহু ও মিলবে না।
কারা এরা? মানুষ? না -মানুষ? না অন্য কিছু আরো? উত্তরটা খুঁজছি। কারো জানা থাকলে জানাবেন। ধণ্যবাদ অগ্রিমে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register