Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মেহেফিল -এ- শায়র প্রভাত মণ্ডল (গুচ্ছকবিতা)

maro news
মেহেফিল -এ- শায়র প্রভাত মণ্ডল (গুচ্ছকবিতা)

১. বাবু ওগো তুমি

আকাশটা আজও সেই , ওরই জায়গাতে প্রভাতেও সূর্যটা ওঠে , নদীটাও আজ সেই , ধীর গতি বহমান ফুলগুলো রোজই প্রাতে ফোটে ।
কে বলেছে পাল্টেছে , রাজনীতি আজ শুধু পাল্টেছে গায়ে রাঙা জামা , লাল-সবুজ আরও , রঙ যত ছিল মিশে গেছে গেরুয়াতে আজ রাঙা মামা ।
পান্থ পথিক আজও , পথিকই তো আছে চাষের ক্ষেতে আজও সেই এক চাষা , বেকার ছেলেরা আজও অলিতে গলিতে খুঁজে ফেরে বারে বারে মিছে শত আশা ।
বাবু ওগো তুমি , আছো একই দামি সিংহাসনেতে সেই তুমিই তো আছো , আমরা পাশার চাল , তোমাদেরই কাছে আমাদেরই ধন নিয়ে মহাসুখে বাঁচো ।
 

২. সুলগ্না

সুলগ্না তখন সবে প্রথম শ্রেণি , নিকানো উঠোনের পূব কোণটাতে খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ঘর ওদের , বিদ‍্যুৎ হীন গাঁ'এর সেই ঘরে সাঁঝবেলা পড়তে বসে হঠাৎ বে-খেয়ালে খেলো লণ্ঠনের ছ‍্যাকা । ওর পিতা বাকরূদ্ধ , কণ‍্যার ব‍্যথা তার চোখে-মুখে স্পষ্ট , মনের নীল আকাশটা দিগন্তব‍্যপী কালো মেঘে ছেয়ে গেলো , যেন সন্ধ‍্যা বেলায় খসে পড়া তারা ।
ক্রমে সভ‍্য জগতের সীমানা বেড়ে গেল , সুলগ্না আজ আঠারো অতিক্রান্ত , সভ‍্যতার হাতছানি সুলগ্নাদের গাঁ'কেও সমৃদ্ধ করেছে , ওর পিতার বয়সের ছাপ বোঝা যায় চশমার পুরু কাঁচে , তবে সেদিন সুলগ্নার পরীক্ষার দিনে ওর পিতা ওর সাথে যাবার পথে শহুরে রাস্তার মোরে মোরে লম্পট ছেলেগুলোর প্রতি পিতার চোখ পড়ল ।
সুলগ্নার সমস্ত শরীরটাকে যেন লম্পটগুলো অধ‍্যায়ন করছে , ওর শরীর রূপী সমস্ত আকাশটার চাঁদ আর তারাগুলোকে যেন নিমেষে গ্ৰাস করতে চায় । সুলগ্নার পিতার চশমার কাঁচটা মুহূর্তে ঝাঁপসা হয়ে ওঠে । জীবন্ত নদীটাতে ভাঁটার টান , সবুজের সমারোহে আজ ইমারতের পাহাড় , তাই ওর পিতা বুঝতে পারে , এসবই সভ‍্যতার পরিণতি , আমার বয়স বেড়েছে বলেই আজ চশমার পুরু কাঁচে ঝাপসা চোখে সবই ভুল দেখলাম ।
                 সুলগ্না ! তুমি আজ আঠারো অতিক্রান্ত ।
 

৩. মনটারে প্রশ্ন করি

মনটারে প্রশ্ন করি, স্বপ্নে ধরি, কাকন পরা তোর দুটো হাত! মাগো তুই জন্ম দিলি, কষ্ট পেলি, দেখালি আমায় নতুন প্রভাত।
কেউ বলে রঙিন ভুবন, মানব জনম, সুখের চয়ন জীবন মোদের! মাগো তুই কাঁদিস যখন, বুঝি তখন, বৃষ্টি ঝরে ঝাঁপসা রোদের।
যতবার সুখটা আসে, ব‍্যথার পাশে, ফুটে ওঠে তোর হাসি মুখ! হৃদয়ে কান্না এলে, চোখের জলে, লুকিয়ে কাঁদে তোর ভাঙা বুক।
 

৪. বিজয়া

দশমীর বিদায় যে আজ নয়তো বিদায় বিষন্নতার করুণ ছাপ , মায়ের ওই পদধ্বনি লুকালো বুঝি এবে অসূর করবে আবারও পাপ ।
কারোবা জন্মদাত্রী রইবে পড়ে পথের ধারে চালচুলো হীন ছোট্ট ঘরে , ছেলে তখন বাবু সেজে মঞ্চ পরে কণ্ঠ সেধে মাতৃভক্তি গাইবে ভরে ।
কারও আবার জন্মদাতা পালক পিতা লাঠি হাতে ভিক্ষা মাগে পথে পথে , ছেলে তখন নিজের ছেলেকে শিক্ষা যে দেয় বাবা-মা'কে রাখো বিজয় রথে ।
এ সমাজ বুঝবে কবে গাইবে ভবে জন্মদাত্রীর আগমনী গান , দেবতা মন্দিরে নয় স্বর্গেতে নয় জীবৎকালে গৃহেই তো তার অধিষ্ঠান ।
 

৫. অবহেলা

তোমাদের কাছে ভাঙাটাই বুঝি খেলা ! নিবিড় অনন্ত আলোকের মেলায় সজ্জিত জীবনের স্বপ্নগুলো তার প্রাপ্তির বিয়োগে লজ্জিত , এই অপ্রাপ্তির জীবন মেলা ।
তোমাদের ঘৃণার সুপ্তরাশি ! অলক্ষে দাঁড়ায়ে আজি , হাসি হাসি মুখ করে বিশ্বপালক মোরে , একি সুধা দিতেছে ভরে , মোর চারিধারে সুনীল জলরাশি ।
যারে করিছ আজ অপমান অবহেলা , ক্ষুদ্র বৃক্ষ ভাবি , ঠেলিছ পায়ে পায়ে দেখা হবে একদিন , জীবন পথের বাঁয়ে , সেদিন বনস্পতি তোমা ভরাবে জীবন মেলা ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register