Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পবাজে মৃদুল শ্রীমানী

maro news
গল্পবাজে মৃদুল শ্রীমানী

ন হন‍্যতে

চণ্ডালবৃত্তিতে আত্মনিয়োগ করেছেন একসময়ের সসাগরা পৃথিবীর অধীশ্বর রাজা হরিশচন্দ্র। সমস্ত রাজ‍্য দান করে এখন কাশীতে। কাশী তো মহাদেবের ত্রিশূলের উপর, অর্থাৎ, পৃথিবীর বাইরে। তাই রাজ‍্য ত‍্যাগ করার পর, বিতাড়িত রাজা হরিশচন্দ্র কাশীতে। সন্তান রোহিতাশ্ব সর্পাঘাতে মরেছে। মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে সৎকার করতে এসেছে চাকরানী মা, এককালের মহারাণী শৈব‍্যা। স্বামী চণ্ডাল বৃত্তি করলেও স্ত্রীর চোখ ঠিক স্বামীকে চেনে। স্ত্রীর চোখের কাছে নিজেকে লুকোনো যায় না। তারপর সাধু চন্দ্রধরের কথা মনে পড়ে। সাধু মানে ব‍্যবসায়ী। সৌদাগর। তো মনসার লক্ষ্য চাঁদ সাধুর হাতে পুজো পাবেন। চাঁদ দেবাদিদেব মহেশের পূজক। তিনি কেন চ‍্যাং মুড়ি কানিকে পূজা করবেন? ব‍্যাস! মনসার রোষানলে পড়ে চাঁদের ব‍্যবসা ডুবল, ছেলেরা মরল। পুরাণ উপপুরাণ জুড়ে ক্ষমতাহাসিলের কতো না গল্প। বিপরীতে ভগবান বুদ্ধ যুক্তির কথা বলেন। মানুষকে ভিতর থেকে যুক্তিপরম্পরা বুঝতে সাহায্য করেন। কিশা গোতমী এসেছেন মহাত্মার কাছে। মৃত সন্তানকে কোলে করে। প্রভু বাঁচিয়ে দাও। চিরকাল ভগবানের কানের কাছে ওই কান্না। তুমি বাঁচিয়ে দাও। যে মরণশীল মানুষকে সাধারণ লোকে জ্ঞানী ভেবেছে, তাঁকে ভগবান আখ্যায়িত করে তাঁর কাছেও মানুষের ওই কান্না। আমার আপনজনকে বাঁচিয়ে দাও। অথচ মানুষ একবার মরলে, সে আর ফেরে না কখনো। বুদ্ধ কিশা গোতমীকে মৃত্যুহীন গৃহ থেকে একমুষ্টি শ্বেত সর্ষপ চেয়ে আনতে বলেন। একমুঠো রাই সরষে। কিশা গোতমী বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে উপলব্ধি করতে পারে মৃত‍্যু একটা সার্বভৌম সত‍্য। কোনও বাড়ি তার একতিয়ারের বাইরে নেই। মরণ এসে কড়া নাড়ছে ঠাকুরের দুয়োরে। কাশি নয়, কাশিপুরের বাগান বাড়িতে ঠাকুর। ঢোঁক গিলতে কষ্ট। দুটি খেতেও যদি না পান, বাঁচবেন কি করে। বাঁচতে আকুল বছর পঞ্চাশের লোকটি। ডাক্তার দেখানোর সুবিধার জন‍্য কলকাতার ধারে পাশে এসে থাকা। বড় পাশ করা, বেশি ভিজিটের ডাক্তাররা দক্ষিণেশ্বরে যাবেন না। ঠাকুর বুঝে গেছেন। ক্লিষ্ট চোখে জানলা দিয়ে তাকান। কালী মাছ ধরছে। ও কালী, প্রাণীহত‍্যা করিস না বাবা। কালী, সকলের আদরের কালী বেদান্তী বলে, ন হন‍্যতে হন‍্যমানে শরীরে। ঠাকুর হাসেন। বলেন, তবু মারিস না। বোম মেরে, তরোয়াল উঁচিয়ে যাঁরা গণতান্ত্রিক পরিসরকে কুক্ষিগত করতে চাইছেন, তাঁদের সতর্ক করছি। গুণ্ডামি প্রকাশে, অস্ত্র প্রদর্শনে বিরত হোন। এই মাসটা এপ্রিল, হিটলারের মাস। এই মাসে তার জন্ম আর এই মাসেই তার মৃত্যু। মাটির নিচে ঢুকে ইভা ব্রাউনকে সদ‍্য বিয়ে করে তাকে সাথে নিয়ে আত্মহত্যা করেন হিটলার। আর চিরকালের জন‍্য অমানুষের তালিকার উপর দিকে নাম রয়ে গেল। স্ট‍্যালিনের বিপুল ব্রোঞ্জ মূর্তির গলায় শিকল বেঁধে হিঁচড়ে নামিয়েছেন বিরক্ত মানুষ। যে সোভিয়েত রক্ষা করার ছুতোয় স্ট‍্যালিন অজস্র সহকর্মীদের হত‍্যা করেছেন, সেই সাধের সোভিয়েত‌ও টেঁকে নি। নরপিশাচের মৃতদেহ টেনে বের করে জঞ্জালের মধ‍্যে ছুঁড়ে ফেলেছেন বিরক্ত রাশিয়ান নাগরিক। সুতরাং সাবধান হোন। অত‍্যাচারী শেষ কথা বলে না। বলে সৎ ও সচেতন মানুষ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register