Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কর্ণফুলির গল্প বলায় আবদুল বাতেন

maro news
কর্ণফুলির গল্প বলায় আবদুল বাতেন

বদলা

শফিক সাহেব দ্রুত তাঁর প্যান্টের গুসি ডাবল জি লেদার বেল্ট খোলেন। ইমিগ্রেশনের সব কাজ আগেই শেষ হয়েছে। এখন কেবল একটার পর একটা ল্যাগেজ ধরার পালা। দানিয়েল আর জর্জ নতুন কেনা আইফোনের স্ক্রিনে ডুবে থাকে। বাবার দিকে ভ্রুক্ষেপ করার মত সময় তাঁদের নেই। ফ্রেন্ডস আর ফলোয়ারদের লাইক কমেন্টেসের বন্যায় ভেসে চলে। তাঁরা দুই ডুড। একজন ফেইসবুক সেলিব্রেটি। আর অন্যজন টিক টকের। হঠাৎ শফিক সাহেব বেল্ট দিয়ে দানিয়েলের পিঠে সপাং করে একটা চাবুক বসান। পলকে দানিয়েলের হাত থেকে আইফোন ছিটকে পড়ে। সে সাপে কামড়ানো ঘোড়ার মত লাফিয়ে ওঠে। ও মাই ঘোস-বলে ককিয়ে ওঠে। জর্জ কিছু বুঝে ওঠার আগেই শফিক সাহেব তাঁকেও একটা বারি লাগান। জর্জের পিঠ ফেটে যেতে চায়। হোয়াট দ্য ফাক-বলে আর্তনাদ করে ওঠে, সে। তিনি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দুই শয়তান ছেলেকে সমানে পিটাতে থাকেন।
ছেলেরা শফিক সাহেবকে অনেক কাঁদিয়েছে। তাঁকে নানাভাবে অপদস্থ করেছে। কিন্তু প্রবাসে তিনি টু শব্দটি করতে পারেননি। সব জ্বালা যন্ত্রণা অন্তরে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রেখেছেন। তাঁদেরকে শুধু মানুষ করার জন্য তিনি এতদিন বিদেশের মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন। কিন্তু ছেলেরা মানুষ হওয়ার পরিবর্তে পশু হতে থাকে। এডাল্ট হয়েছে বলে তাঁরা প্রায় রুমে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসে। উবার ইটসে অর্ডার দিয়ে রাতের পর রাত হল্লা করে। হাউজে মিলাদ মাহফিলের দিনে খুব ডিস্টার্ব ফিল করে, তাঁরা! ব্লুটুথ স্পিকারে ধূম ধারাক্কা গান বাজায়। আগরবাতির গন্ধে তাঁদের নাকি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে! আর জিকিরের শব্দ ছন্দে তাঁদের দুই কানে তালা লেগে যায়! অথচ ড্রিংকস আর গাঁজার দুর্গন্ধে তিনি তাঁদের রুমে পা ফেলতে পারতেন না। একবার রাগের চোটে ছেলেদের দুইটা চড় মারলে তাঁরা পুলিশ কল করে। পরনে লুঙ্গি আর খালি পায়ে ব্যাক ডেটেড শফিক সাহেবকে পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়। ডোন্ট কেয়ার ছেলেরা তাঁকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ে। তারপর থেকে তিনি বোবা কালা অন্ধের মত জীবন যাপন করতে থাকেন। বাঙালি কমিউনিটির কোন প্রোগ্রামে তিনি আর সহাস্যে মুখ দেখাতে পারেননি।
শফিক সাহেব আজ আর তাঁদের ছেড়ে কথা বলবেন না। বাংলার মাটিতে তিনি একজন পিতার অপমানের বদলা নেবেন। সুদাসলে প্রতিশোধ তুলবেন। তাঁদের শায়েস্তা করতেই তিনি ভুলিয়ে ভালিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে নিয়ে এসেছেন। এখানে কে শফিক সাহেবকে আটকাবে? কোন প্রশাসন তাঁর হাতে হ্যান্ডকাফ লাগাবে? বাংলাদেশ তাঁর জন্মভূমি। আমার সোনার বাংলা-তাঁর শিরা উপশিরায়, শ্বাস প্রশ্বাসে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জান্তিক বিমান বন্দরের বাইরে কয়েক মিনিটে অনেক মানুষ জমায়েত হয়। সব শুনে জড়ো হওয়া লোকজন ছেলেদের আরো রক্তাক্ত করতে শফিক সাহেবকে উৎসাহিত করে। বদমাশদুটোকে পিটাতে পিটাতে তাঁর বেল্ট ছিঁড়ে যায়। পরিশ্রান্ত শফিক সাহেব হ্যান্ডব্যাগ থেকে কি কি সব কাগজপত্র বের করেন। ফড়ফড় করে দুই ছেলের কানাডিয়ান পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট, আইডি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেন। ড্রাইভার সহ ল্যাগেজগুলো ধরাধরি করে গাড়িতে তোলেন। ঘামে ভেজা তিনি সিটে বসেই মা হারানো শিশুর মত কান্নায় ভেঙে পড়েন। হতবিহ্বল দানিয়েল আর জর্জ চুপচাপ বাবার হাত ধরে বসে থাকে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register