Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুজিত চট্টোপাধ্যায় (অন্তিম পর্ব)

maro news
কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুজিত চট্টোপাধ্যায় (অন্তিম পর্ব)

নীলচে সুখ 

জীবন থেমে থাকে না , পরিবর্তন আনে। কালের নিয়মে। ফেলে আসা সময়, পিছুটান রেখে যায় স্মৃতির এলবাম। কর্মময় ব্যস্ত জীবনে মায়ার বাঁধন। সঙ্গে আছে দায়দায়িত্ব , কর্তব্য আর অধিকার অনধিকারের বিচিত্র টানাপোড়েন। তারই মাঝে খুঁজে ফেরে , হাঁতড়ে বেড়ায় মন , একটুকরো সুখের অঙ্গন। কেজানে সেই সুখের কী রঙ।
চার বন্ধুর ইদানীং বিশেষ দেখাসাক্ষাৎ হয় না। জীবন জীবিকার তাগিদে সবাই ব্যস্ত। ফোন আসে কখনোসখনো। কথা হয়। কথা হয় ঠিকই , তবে সেই কথায় আগের মাত্রাহীন উচ্ছ্বলার উত্তাপ নেই। মাপকষা গতানুগতিক বাঁধাছকের নিয়মমাফিক কথপোকথন । তারুণ্য বড়ো ক্ষণস্থায়ী। যতক্ষণ থাকে , তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না। হারিয়ে যাবার পর যা থাকে , তা শুধুই গল্প।
মানালি আর নীলের মাঝে একটা অন্য রকম সম্পর্ক হয়তো এসেছিল। তবে তা ভাললাগা। তার বেশি কিছু নয়। হয়তো । ভালবাসা পরিনতি খোঁজে। পরিনতি চেয়ে থাকে ভবিষ্যতের দিকে। জীবন তো গানিতিক নিয়মের দাসত্ব করে না। সে চলে তার নিজস্বতায়। তাইতো সব জীবন একই রকম নয়।
মানালি এখন কানাডায়। ওর স্বামী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। চাকরির সূত্রে আপাতত সেখানেই সেটেল্ড। কাজেই ওর সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
ব্রজেশ গায়ক হতে চেয়েছিল। হয়নি। বাবা হঠাৎই মারা যাবার পর , পারিবারিক ব্যবসা সামলাতে ব্যস্ত। একমাত্র সন্তান কিনা ।
তন্ময় শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখতো। এখন নিজেই কোচিং সেন্টার খুলে , সেই স্বপ্ন পুরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
দীপেন হারিয়ে গেল। মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল। কেউ বলে প্রেমের আঘাত , কেউ বলে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা। হতাশা। প্রত্যাশা কিংবা নিজস্ব যোগ্যতার প্রতি প্রবল বিশ্বাস , সে-ও তো প্রেম।
নীল , টিভি সিরিয়ালে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে। আশায় বুক বেঁধে আছে , একদিন নায়ক হবে। হয়তো হবে । সুখের স্বপ্ন উড়ান , আর সুখের ঘরে বাস কিছুতেই এককথা নয়।
রাত তখন কত জানা নেই। নীলের জানবার ইচ্ছেও নেই। নীলচে সুখ রিসর্ট ঘুমিয়ে পরেছে। কেবল বারান্দার কয়েকটি আলো , জ্বালা আছে। জ্বালা আছে নীলচে সুখ লেখা গ্লোসাইনবোর্ড। বাকি সব অন্ধকার। লনের চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল নীল।রুমার ডাকে ঘুম ভেঙে গেল।,,,,,,,,, একি, এখানেই এইভাবে সারারাত বসে থাকবে নাকি। চলো, ঘরে চলো। উঠে এসো। চলো। রুমা, নীলের হাত ধরে টেনে , তাকে তোলবার চেষ্টা করলো। পারলো না। নীল, রুমার হাতটা চেপে ধরলো,, অনুনয়ের সুরে বললো ,,, একটু বসবে , আমার কাছে । একটু সময়,, প্লিজ,, বসবে ?? রুমা হাই তুলে হালকা গলায় বললো ,,, ছেলেটা ঘরে একা ঘুমিয়ে রয়েছে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে কাউকে দেখতে না পেলে কান্নাকাটি করবে, ভয় পাবে। প্লিজ , ঘরে চলো। তোমার সব কথা শুনবো, কাল সকালে। এখন শোবে চলো। নীল , রুমার চোখের দিকে তাকিয়ে , ওর মন বোঝার চেষ্টা করলো। তারপর সামান্য আওয়াজ করে হাসলো । রুমা , নীলের মুখের দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে সামনের চেয়ারে ধপাস করে বসেই বললো,,, হাসলে যে,,, কী বোঝাতে চাইছো তুমি , আমি তোমায় এভয়েড করছি ? _ তাই , বললাম কী ? _ সব কথা উচ্চারণ করতে হয় না। অন্যভাবেও বুঝিয়ে দেওয়া যায় । যাকগে , কী বলবে বলো। নীল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ,,, নাহঃ থাক,, _ কেন , থাকবে কেন , বলইনা শুনি,, নতুন করে প্রেম নিবেদন করবে নাকি ? দেখো বাবা। কেন যে শুধুশুধু এইসব মাল ফাল খেতে গেলে , জানিনা। নীল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো , ঘরে চলো। ছেলেটা একা আছে।
কখনো কখনও মেনে নেওয়া কিংবা মানিয়ে নেওয়াও সুখ । এডজাস্টমেন্ট। স্বপ্ন আর বাস্তব কিছুতেই মেলে না। দুস্তর দূরত্ব এই দুয়ের মাঝে। দুরত্বের মাঝেই যন্ত্রণার ঘর। দিগন্তের স্পর্শ পাওয়া অবাস্তব। সে কেবলই দুরত্বের নির্মম মায়াজাল।
মানালি কে নিয়ে ও যে কল্পনার আলপনা আঁকেনি , এমন বললে নিতান্তই তঞ্চকতা করা হবে। মানালির মনের কথা ওর জানা নেই। তবে আন্দাজ করতে পারে। হয়তো সেও,,, মনে মনে,, নির্জন বৃষ্টি ভেজা মায়াবী চাঁদনী রাতের পাহাড়ি পথে , তার হাতের ছোঁয়া সুখস্মৃতি , এখনো যে অমলিন।
স্মৃতি পিছুটান। তার হাত থেকে বোধকরি কারোরই রেহাই পাবার যো নেই। মুশকিল সেখানেই , যখন অতীত , বর্তমানের ঘরে উঁকি দেয় , কিন্তু ধরা দেয় না। তার পালিয়ে বেড়াতেই সুখ। ধরা ছোঁয়ার অনেক বাইরে। আলতো পায়ে তার কেবলই নিঃশব্দ যাওয়া আসা। মনের আঙ্গিনায় আলোছায়ায় লুকোচুরি। বাতাসে ফিসফিস করে কে যেন বলে,,, আমি ছিলাম , আমি আছি , আমি থাকবো , মনের অতলান্ত গভীরে , নিভৃত একান্তে । বড়ো জানতে ইচ্ছে করে । ওগো সুখ,,,, তোমার কী রঙ ?? শেষ নাহি রে , শেষ কথা কে বলবে ?

সমাপ্ত

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register