Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব - ১৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব - ১৭)

অমৃতায়ণ

তাঁর হাসি সদা রহস্যময়। কখনো তা ছিল মজ্জাগত ব্যঙ্গ তো কখনো তা নিছক যৌবনের প্রতিফলন। আমরা এখন চিলেকোঠায় বন্দি। চারমাস নয়, দেখতে দেখতে ছয়মাস আমাদের কেটে গেল।
যৌবনে ফিরে যাওয়া যায় একমাত্র যখন রচয়িতা তার শেষ কলমটুকর আঁচড় দেয় খাতায়। তাকে অনেকটা বাদ দিতে হয় জীবন থেকে ভাষা, মানুষ, সংলাপ, ব্যর্থ চুম্বনের ইতিহাস।
এই ধূসর কলকাতা শহরের রোজকার সাধারণ আকাশ এখন অপৃথিবী বা অতিপৃথিবীর অন্তরীক্ষ হয়ে উঠল কেমন করে? দূর নীলাভ জন্মান্তরের মতো লাগে এ অলৌকিক। এই শহরের পথে রাস্তা পার হতে পারে হাঁস? কেন পারে না? ওই যে সুদূর আকাশের গা-ছোঁয়া বাড়ি ওর জানালার আলো কি কোনো মাটিহীন মানুষের চোখের জল - যা ফসফরাসের মতো জ্বলজ্বল করছে! যে জীবনকে চিনি না তাকে নিয়ে আমি শেষ লেখায় হাত দিলাম, অবশ্য এ লেখার কোনো শুরু নেই, না আছে শেষ। লিখতে লিখতে পাশে তার আধখোলা ডায়রির পাতায় রাক্ষসনক্ষত্রের আলোয় ভরে আছে ক'টা লাইন - নষ্ট কী? এ প্রশ্ন অবান্তর কেননা কোনো কিছুর ভালো মন্দ নেই। নষ্ট করে দেওয়ার মধ্যে শুধুমাত্র নতুনত্ব আছে। অপরদিকে অপাঠ্য মানুষের আছে নষ্ট লৌকিকতা। পারিজাত এসে গেছে ততক্ষণে । আমাদের হাতে চাযের কাপ।
পাঠক আমাকে ক্ষমা করবেন, আপনার সঙ্গে আমার মনস্তত্ত্বিক সম্পর্ক নয়। আমি ভ্রাম্যমাণ শব্দহীন ভাষা - আপনার স্নায়ুর বিদ্যুৎ বেগ আমার বধির, অন্ধ ও শূন্যতার জীবনে এক একটি হৃদস্পন্দন।
আমি পাঠ করি আপনার কন্ঠে জীবন, যে জীবনের মাঠে ঘাস মাটি জড়িয়ে দেখেছি বহুদিন আগে উড়ে আসা শীতের হাঁস - কুরুক্ষেত্রে যেখানে ভীষ্ম শরশয্যায় শুয়ে আছেন এবং হিমালয় থেকে গঙ্গা দেবী তাঁর সন্তানের তত্ত্বাবধানের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন একদল সাদা হাঁস, তখন শীতকাল। আপনার চারপাশে মৃতদেহের মতো লোভী হৃৎপিণ্ড গ্রাস করার জন্য কেঁপে কেঁপে উঠছে। সাবধান আবেগ বর্জন করুন । ভূমিতে অর্জুন নিক্ষেপ করেছেন তির এবং সেখান থেকে উঠে আসছে জল আর আকাশে উড়ে যাচ্ছে রাতের সাদা হাঁস তখন।
- এখান দিয়েই তো সুলগ্না যাতায়াত করে ?
অর্জুন প্রশ্ন করে ভীষ্মের মতো এই সময়ের আদি কথাকারকে - কী সে বস্তু যে প্রায়ই অপমানিত হয় কিন্তু কখনো সম্মানিত হয় না? উত্তর - আদালত।
- উঁহু , জনতার আদালত। - সুলগ্না পুলিশের কাছে নাকি ডায়েরি করিয়েছে!
বাইরে এখন আকাশ নীল , হৃদয়ে ভয় আর জীবনের রহস্য মাখা হাসি ঝুলে আছে ঠোঁটে। কোনো কন্ঠ নেই -ইতিহাস কথা কয় উৎপলকুমার বসুর ভাষায় - " মেগালিন খাওয়ার বিরুদ্ধতা এবং কাকাসাহেব কালেলকর নাকি ভয় পাচ্ছেন ভারতবর্ষে ওই জিনিসের প্রকোপ কীসের প্রকোপ? বিরুদ্ধাচরণ করা কি কেউ ঠেকাতে পারে? ধর্ম এক্সট্যসি এবং রাসায়নিক এক্সট্যসিতে তফাত কী? কিন্তু এ নিয়ে বেশি কথা বলা চলে না। সুতরাং নির্বাক। "
নির্বাক কোথায়? এই তো আমি তোমার ভিতরে প্রবেশ করে ফেলেছি ! ঠিক এ প্রশ্ন আপনাকে নয় আবার অনেকটা আপনাকে। কিন্তু কুকুর ও মানুষের স্বতন্ত্র ও অনিশ্চিত অবস্থান বুঝে নিয়ে আমি বা আমরা শেষকালে ওই হোটেল -সংসারের ভিতর না যাওয়াটাই ভালো বিবেচনায় অন্য কুকুরদের সঙ্গে কলেজ মাঠের দিকে দৌড়তে থাকি?
সদাভ্রাম্যমান'কে আপনি নিয়ম মেনে চলতে বলছেন? বাস থেকে নেমে হাঁটতে বলছেন? নাকি ঠিক সময় চাইছেন বেজে উঠুক বাড়ি ফেরার কলিং বেল ? জলের মধ্যে চশমা ভাসিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মনোলেখকের মন, আর সুলগ্নার অন্ধকার চলাফেরা - নেই কোনো বস্তুর মতো ভাষা, চলন। কথন রচনা করে যায় অন্তর বিভঙ্গে , এই সেই নৃত্যরত অভিঘাত, চেষ্টা করেই যাচ্ছি কিন্তু আমি হায়, লিখতে বসেছি একটা পোস্টার নিয়ে- যা একজনের নষ্ট হওয়ার ইতিবাচক ভবিষ্যৎ! নিকট স্মৃতি সব সময়ই দূর স্মৃতিকে অবজ্ঞা করে । সে যেন খোদিত পাথর সময় ধুয়ে যাবে না। কুয়াশা মুছে ফেলে তার অক্ষরগুলি নিশ্চয়ই শরীর হয়ে যাবে। - নাকি শরীরের জন্য সবটুকু? পারিজাত হাসছে
কেউ-না-কেউ পড়ে ফেলবে। আজ অথবা কাল কিন্তু তৃতীয় দিন থেকে খেলা দূর স্মৃতির নিয়ন্ত্রণে। এ আখ্যান আমার নয়, তোমার অমৃতা - এ "আমাদের" শুধু, কথাকার এখন আমাদের স্পন্দন। আমি ভালোবাসি এই সেপ্টেম্বর মাস। গ্রীষ্ম এখনো সরে যায়নি -অথচ ভোরবেলায় হিম কখনো কখনো ছুঁয়ে যায় চাষের খেত । এখন গরম বেশি নয়। শীতও মৃদু।
জীবনের একটা অপর স্থান থাকে। যে স্থান স্পন্দিত বাস্তব চেতনার গোপন গৃহকোণ। এই অন্য পৃথিবীর খোঁজ থেকেই আমাদের সচেতন সভ্যতা। সৃষ্টির মান্যতা দিতে দিতে কোথায় হারিয়ে গেছে 'আপন'পাঠ ও ভাষা। সেই চলনক্রিয়ার সামনে দাঁড়াতে আমাদের অস্বস্তি হয় খুব। মনের সরলরেখা তৈরি করতে করতে শুকিয়ে যেতে থাকে হৃদয় মৌচাকের কুঠুরির মধু। ভাবতে হয় বারবার এই মুহূর্তের ছিটে লাগা রঙ বিভঙ্গ তৈরি করতে থাকা ক্যানভাস । একে কি ধরনের দেহ বলব - আখ্যানের নস্টালজিয়া নাকি পৃথিবীর- আমি যেন বার বার জেগে উঠি মেট্রো, ধর্মতলা, গড়িয়া, পাটুলির যাতায়াতের পথে - লোকের কথায়, হকারের ডাকে, পিকনিক - যাত্রীদের হাসিঠাট্টায়, কলহবিবাদে, থুথু- ছিটানো ক্রোধে ও অনন্ত কোলাহলে। মিথ্যুককে পাশে নিয়ে হাঁটি! আমি সেই বযে়সে পৌঁছে গেছি যখন সমবযে়সিদের সঙ্গে দেখা হলে শরীর কেমন,কোন নার্সিং হোম জোচ্চোর, কোন্ সার্জেনের অপারেশনের সময় হাত কাঁপে ইত্যাদি কেচ্ছাকারবার ছাড়া আর কিছু লেনদেন থাকে না। তবে এখন শুধু কি সুলগ্না, ছোটো, রথীনের আল-বাল কথা মনে পড়ে না? পড়ে, পড়ে! সেজন্যই তো লিখে উঠতে হবে মনের মধ্যে বিষাক্ত মৌচাকের ইতিহাস ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register