Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গারো পাহাড়ের গদ্যে নুসরাত রীপা

maro news
গারো পাহাড়ের গদ্যে নুসরাত রীপা

হাসি নিয়ে

হাসি কত প্রকার? মুচকি হাসি, অট্টহাসি, খিলখিল হাসি, চাপা হাসি, বক্র হাসি,লাজুক হাসি, সরল হাসি,গর্বের হাসি, প্রশংসার হাসি, কাষ্ঠ হাসি, উপহাসের হাসি-- আঙুলে গুনলে আরো ধরণ পাওয়া যাবে হাসির!
কিন্তু হাসির ধরণ গুনছি কেন?
কারণ হাসি আমাদের অনুভূতি প্রকাশের একটা মাধ্যম এবং সুখের বা আনন্দের হাসি (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে) সংক্রামক। অর্থাৎ সুখের হাসি অন্যদের মনেও সুখ সঞ্চার করে। যেমন অন্যের দুঃখ আমাদের মনে বিষন্নতা ছড়িয়ে দেয়!
সুখের অংশীদার সকলেই হতে চায়। কিন্তু দুঃখ? না কেউ দুঃখের অংশীদার হতে চায় না। যদিও সুখ আর দুঃখ দুটিতে পাশাপাশি থাকে কিন্তু সুখের দরজায় মস্ত লাইন। দুঃখের দুয়ার ফাঁকা!
ধরুন আজ একজনার খুব মন খারাপ। মন খারাপ হবার অসংখ্য কারণ চারপাশে বিদ্যমান। তো মন খারাপ নিয়ে তিনি অফিসে গেলেন কিংবা কলেজ বা ভার্সিটি,দেখবেন তার চুপচাপ ভাব দেখে কেউ আর কাছে ঘেঁষছে না। দু একজন যদিবা আসছে, শুধাচ্ছে, কী খবর? যখনই শুনবে মন খারাপ টুপ করে কেটে পড়বে। কেউ কেউ অবশ্য সৌজন্যতার খাতিরে প্রশ্ন করবে- কী হয়েছে? কিন্তু উত্তর শোনার আগ্রহ শূন্য ভাগ। এবং একটু খানি শুনেই আন্দাজে দুটো স্বান্ত্বনার বাণী ঝেড়ে পালাবে।
আবার ধরুন, আজ একজনার খুব খুশির একটা দিন। জন্মদিন হতে পারে, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হতে পারে, অফিসে বসের প্রশংসা হতে পারে কিংবা ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার কারণেও মন খুশিতে ঝলমল। আজ অকারণেই ঠোঁটের কোণে হাসি। আপনমনে গুনগুন সুর বেরিয়ে আসছে নিজেরই অজান্তে। আর তখন দেখা যাবে কারণে-অকারণে সুপরিচিত জন এবং অল্প পরিচিত জনও তাকে হাই-হ্যালো করছে! খবর কী জানতে চাইছে। পাশে এসে বসছে। না চাইলেও আজ তার সঙ্গীর অভাব হচ্ছে না!
আসলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জীবন ই সমস্যা জর্জরিত। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে একগাদা সমস্যা নিয়ে আবার প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যায় আরো নতুন কতগুলো সমস্যা সাথে নিয়ে। এত সব সমস্যার ভিড়ে আমাদের আনন্দ, সুখ সব চাপা পড়ে যায়। চাপা পড়ে যায় অসংখ্য স্বপ্ন। আমাদের মনের ভেতরের মনে সব সময়ই একটা দুঃখ বোধ গভীর রাতে নিঃশব্দে বয়ে যাওয়া বাতাসের মতো অবিরাম প্রবাহিত। দুঃখবোধের যণ্ত্রণা বইতে বইতে আমরা ক্লান্ত। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের অসংখ্য অপ্রাপ্তি ও অসংগতি দেখে দেখে, পেয়ে পেয়ে আমরা বিরক্ত। তাইতো আজকাল কমেডি নাটকের দর্শক বেশি। হালকা উপন্যাসের পাঠক বেশি। নিজের দৈনন্দিন জীবনের এত এত চাপ বহন করে বাড়তি কোনো চাপ আর কেউ নিতে চায় না। পৃথিবীতে সবাই সুখ খোঁজে। সুখের পেছনে ছুটে। কাজেই বুকে যত দুঃখই থাক সেটা চাপা দিয়ে ঠোঁটে একটা হাসি ঝুলিয়ে এক একটা দিন পার করে দেওয়াটাই কর্তব্য ।
মানুষ যত সাথীহীন হয় তার দুঃখবোধও তত বাড়ে। দুঃখীর সাথী কেউ হয় না। কিন্তু এ সমাজে তো একা টিকে থাকা যায় না। টিকতে হলে আমাদেরকে আর দশজনের সাথে কম - বেশি মিশতে হবে। কেউ কারো কষ্ট বোঝে না। কেউ কারো কষ্ট নিয়ে মাথাও ঘামায় না।
তাই আপন আপন দুঃখগুলো খুব গোপনে লুকিয়ে রেখে শুধুই হাসুন। হাসলে সঙ্গীর অভাব হবে না। সঙ্গী থাকলে পথ যত কঠিনই হোক পেরোতে সহজ হবে।
তবে হাসির আরো অনেক উপকারিতাও আছে। যেমন হাসলে শরীর সুস্থ থাকে। হাসলে হার্ট ভালো থাকে, প্রেসার নিয়ণ্ত্রনে থাকে, চেহারায় সজীবতা বৃদ্ধি পায়, বার্ধক্য দেরিতে আসে,লোকজন ভালোবাসে! আপনি যত ভালোমানুষই হোন না কেন, আপনার মুখ গোমড়া হলে লোকজন আপনাকে ভালোবাসবে না। এটা পরীক্ষিত সত্য! আর হাসি মুখে অনেক কঠিন কাজও করিয়ে নেওয়া যায়!
সবচে' বড় কথা হাসলে ট্রেস বা চাপ কমে। ছোট্ট একটা জীবনে এত চাপ নেওয়ার দরকারই বা কী!
তাই আসুন দুঃখ ভুলে হাসি। হাসলে সারা জগত আপনার, আমার সাথে হাসবে-----
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register