Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব - ১৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব - ১৪)

অমৃতায়ণ

পাঁচ নম্বর বাস স্ট্যান্ড থেকে নেমে এগিয়ে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। মাথার মধ্যে সেই মুখগুলো বার বার ফিরে আসছে - ফিরে আসছে - সুলগ্না কে চেনেন! একটা গভীর অন্ধকার গোটা সময়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছ । আমি আর পারিজাত এই কালো অতলের সীমানায় হেঁটে চলা দুটো মাত্র । বাস স্ট্যান্ড থেকে বেরোলেই বড় রাস্তা, - বাস স্ট্যান্ডে ঢুকছে বার হচ্ছে । কোথায় আমি ঠিক এখন - জানি না । এমন সময় ক্ষিপ্ত বেগে একটি বাস স্ট্যান্ডের দিকে বাঁক নিতেই - হঠাৎ হ্যঁচকা একটা টান। আআ ! কে রে..
- তোর দাদু রে গান্ডু! বাসটা তো গায়ে উঠে যেতো রে। ভাবনা আগে না জীবন আগে কে জানে.. - ও জ্যোতি তুই! - যাক চিনতে পারলি , যেভাবে জীবন মরণ এক করে ভাবছিস ... আদপে এই জগতে আছিস কিনা কে জানে! - যারা এ জগতে আছে, তাদের কে কি দেখে বুঝতে পারিস এই জগতেই তারা আছে? এমন সময় পাশে দাঁড়িয়ে গেছিলো অনেক লোক - একজন বিড়ি ধরালো - ফসস্ ! বলে গেলাম - এতগুলো লোকের মধ্যে থেকে কি করে ধরে নিচ্ছিস এখানেই সবাই রয়েছে অর্থাৎ জগতে! - বুঝতে পারছি না কিছুই তোর কথা। কপালে হাত ছোঁয়ালো আমার । - কি দেখলি ? - দেখলাম জ্বর এসেছে কি না? - কিইই! মানে ... - নাআআ, মানে জ্বর এলেই শুনেছি লোকে এমন ভুল বকে
গড়িয়ার সমস্ত দোকান পাট এখন খুলে গেছে, হাজার হাজার তার আর ইলেকট্রিক চুঁইয়ে আলোর থেকে সরে এসে বাস ক্যন্টিনের ঠিক পিছন দিকে এসে দাঁড়ালাম। কন্ডাক্টরেরা এইখানে ভিড় করে চা খাচ্ছে - তাদের সারাদিনের ঘাম, শরীর আর অর্থের লেনদেন নিয়ে এক একটা নতুন নতু্ন কাহিনী তৈরি হচ্ছে । কান না পাতলেও শোনা যায় - মানুষের মুখগুলো কিভাবে একই রকম হয়ে উঠেছে ওদের কাছে - আরোহীর দেহের মধ্যে শুধু মাত্র টাকার গন্ধ । এই টাকার গন্ধ আর শরীরের গন্ধ এক এক রকমভাবে আসছে। পোস্টারের মধ্যে কি লেখা থাকতে পারে - যার জন্য একটি মেয়ে মুখ দেখানোর সাহস পাবে না। এটা তো শিশুর পক্ষেও জানা অনুমেয় । কিন্তু মুখ দেখাতে পারছে না তা তো নয় - .... ওই ... কিরে - হ্যাঁ, ভাই বল বল - কি হয়েছে বল তো! সমস্যা কোনও?
এখানে আরও একটা কথা বলা দরকার। জ্যোতি - র পুরো নাম জ্যোতিষ্মান ভট্টাচার্য। ও আমাদের কলেজেই পড়ে । সুলগ্না জ্যোতি কে চেনে খুব ভালো করে , আর কলেজের যে কোনও সামাজিক কাজে বলগা ছেঁড়া ঘোড়ার মতো দৌড়তে পারে। কিন্তু মজা আর রহস্য নাকি কোনও ভয় - ফোনটা আমাকে করা হলো, পারিজাতকে শোনানোর জন্য - কিন্তু যে সবচেয়ে বেশি দেওয়াল পাঠে সক্রিয় তাকে বলা হলো না ! 'একটা কথা বলা দরকার' বললাম না - এই সেই দরকারি কথা - জ্যোতি দেওয়াল পড়তে ভালোবাসে। বই পড়ার চেয়ে শতগুণ বেশি - ছোটবেলায় একবার ম্যনহোলে ঢুকে যাওয়া , নেহাত রোগা প্যটকা - তাই - না হলে সোজা টালি নালায় চলে যেতো। এতদিন হেসেছি - আজ আমাদের এই অলৌকিক সখটাকেই ব্যবহার করতে হবে।
- সুলগ্নার সঙ্গে তোর শেষ কবে কথা হয়েছে রে? সুলগ্না নামটা শুনতে শরীরের এমন কোনও গভীর রসকেন্দ্রে জ্যোতির ধাক্কা দিলো যেখান থেকে ছিটকে এলো - 'মঞ্জু বিকচ কুসুম-পুঞ্জ মধুপ শব্দ গঞ্জি গুঞ্জ কুঞ্জর-গতি গঞ্জি গমন মঞ্জুল কুলনারী।।' সময়টা কি পাল্টে যাচ্ছে ঘড়িতে ? হাতের দিকে তাকালাম। রাস্তার ওপার দিয়ে আর কিছুক্ষণ পরেই অমৃতা কম্পিউটার ক্লাসে যাবে। ওপারে অনেক আলোরগন্ধ এপারে আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে একটা কালো পর্দা। অমৃতার গায়ে আজ নিশ্চয়ই নীল চুড়িদার বিরাট করে বাঁধা বেণী । আমার মধ্যেও প্রবেশ করছে সময় একটা যুগ বদলের।অনুভূতিও।তাই লৌকিক কাব্যের নায়ক নায়িকা ধীরে ধীরে কান্ত কান্তা সম্পর্কের বাইরে আরাধ্য হয়ে উঠতে থাকে।'আমি তারে ভালোবাসি অস্থি মাংস সহ' এই রক্তমাংসের প্রেম অ-লৌকিক,ঐশ্বর্য রূপে পরিণত হয়।শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে কৃষ্ণদাস কবিরাজ লিখলেন, "হ্লাদিনীর সার প্রেম,প্রেমসার ভাব। ভাবের পরম কাষ্ঠা - নাম মহাভাব।। মহাভাবস্বরূপা - শ্রীরাধাঠাকুরাণী। সর্বগুণখনি কৃষ্ণকান্তাশিরোমণি।।"
পরিবর্তন হয়েছে আমাদের ভাব,ভাবনা। সত্তার বিকাশ আর সাহিত্যে শ্রীমতীর বিবর্তনের ইতিহাস সমৃদ্ধতর হয়েছে পাঠপ্রয়াসে,তত্ত্বভাবনায়।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register