Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক অনুবাদ গল্পে পূর্বা দাস (পর্ব - ৫)

maro news
ধারাবাহিক অনুবাদ গল্পে পূর্বা দাস (পর্ব - ৫)

যুদ্ধের প্রহর 

" হারা হেত্তা..." সৈনিকটি দুর্বল স্বরে কিছু বলতে চাইল।
"হ্যাঁ... হ্যাঁ... বল..." কুঞ্জ প্রায় দৌড়ে ওর বিছানার পাশে পৌঁছে যায়।
"হারা হেত্তা... হন থনি..." আবারও ঠোঁট নড়ে তার। শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে চেটে নেয় একবার। এটুকু কথা বলার। ধ ক লেই শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়েছে।
" হরে... কি?" কুঞ্জ র নিষ্পাপ কৌতুহল।
"হারা হেত্তা..." এবারে লোকটি খুব আস্তে আস্তে হাতের আঙ্গুলগুলো জড়ো করে মুখের কাছে নিয়ে আসে। কুঞ্জর মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায়। লোকটি খাবার চাইছে। অবশ্যই ক্ষুধার্ত সে...
কুঞ্জ দৌড়য় রান্নাঘরের দিকে। ভাতের হাড়ি থেকে বড় এক বাটি ভাত তুলে নেয়।
"কি করছিস! কি করছিস!" মা আঁতকে ওঠে। "এইতো খেয়ে ঘরে গেলি। আবার..."
কুঞ্জ দেখে বাবাও ওর দিকে কেমন সতর্ক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
"সৈনিকটির ঘুম ভেঙেছে। ও খাবার চাইছে। "
একথা শুনে বাবা-মা দুজনেই বরফের মতো আরষ্ট হয়ে গেল। যেন খাবারের আসনের সাথে ওদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয়েছে। কুঞ্জ আর সময় নষ্ট করে না। বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। চটজলদি ও নিজের ঘরে ঢুকে লোকটির পাশে বসে পড়ে। নরম আঠালো চালের ভাতের বাটি এগিয়ে দেয় ওর দিকে। লোকটি প্রায় ছিনিয়ে নেয় বাটিটা কুঞ্জর হাত থেকে আর বুভুক্ষের মত খাওয়া শুরু করে। কুঞ্জ দেখে লোকটি বাটি শুদ্ধ মুখে ঢেলে দিচ্ছে ভাত। সামান্য ভয় পেয়ে কুঞ্জ একটু সরে দাঁড়ায়।
কিন্তু এভাবে খেতে গিয়ে লোকটির গলায় ভাত আটকে যায় আর ভয়ংকরভাবে কাশতে শুরু করে। কুঞ্জ ভেবে পায় না কি করবে। ছোটবেলায় গলায় কিছু আটকালে, মা যা করত, সেভাবেই ও লোকটির পিঠে চাপড় দিতে থাকে। মনে মনে প্রার্থনা করে যেন ভাতগুলো ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়না। লোকটির শ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। মুখের রং ঘোর বেগুনি। কুঞ্জ ভাবে, এবারে... এবারে সব শেষ।
"উফ! কি জ্বালা!" মা দৌড়ে এসেছে এক গ্লাস জল নিয়ে। লোকটির ঘাড়টা উঁচু করে ধরে জলটা খাইয়ে দেয় ওকে। লোকটি প্রবল প্রত্যাশায় ঢোক গেলে এবং একটুক্ষণের মধ্যেই তার কাশিও থেমে যায়।
" ওঃ ভগবান! আমি ভাবলাম সত্যিই বোধহয় ও শেষ হয়ে গেল।" কুঞ্জ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
"একবার ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি, তাতেও তো শান্তি হয়নি দেখছি তোর।" মার চোখ থেকে কুঞ্জর উপর রাগ আর বিরক্তি ঝরছে। "দয়া করে একটু সাবধানে রাখ ওকে। মুখে শুধু বড় বড় কথা বললেই হয় না, সেটা করে দেখাতে হয় বুঝলি! ঘুমোতে চললাম আমি।" মা চলে যেতে কুঞ্জ নিজের মনেই হাসে। একটু আগেই না মাতৃদেবী বলেছিলেন লোকটিকে ঘাড় থেকে বিদায় করতে? মায়েরা এরকমই হয়।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register