মুক্তগদ্যে দীপঙ্কর দে

প্যালেষ্টাইন: নিজ দেশে পরবাসী-এক অত্যাচারিত জাতি

প্যালেষ্টাইন-ইজরায়েল সংঘাত বা এক তরফা আগ্রাসন ইজরায়েলর প্যালেষ্টাইনদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ
৭৫বৎসর ধরে তার কোন সমাধান হচ্ছেনা ও আমেরিকার দাদাগিরির জন্য কোন সমাধান করা যাচ্ছে না।প্যালেষ্টাইনীয়ারা ৭৫ বৎসর ধরে নিজ ভূমিতে পরবাসী। কি অপরাধ তাদের! ইজরায়েলের চোখ রাঙানিতে পরাধীন একটি জাতি যউগ যুগ ধরে।এখনও স্বাধীন রাষ্ট্র করে দিল না রাষ্ট্রসঙ্গ। প্রতিদিন কিছু হলেই বোমা বন্দুক নিয়ে ইজরায়েলর পুলিশ -সৈন্য প্যালেষ্টাইন এলাকায় ঠুকে আক্রমণ করে ২-৫ জনকে মেরে /১০-১৫ জনকে ধরে কারাগারে বন্দি করে রাখে বিনা বিচারে বছরের পর বছর। চোখের সামনে মৃত্যু , ঘরবাড়ি ধ্বংশ, বাসস্থানের কোন ঠিকানায নেই!১৯৪৮ সনে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদীদের জন্য জোর করে প্যালেষ্টাইনদের তাড়িয়ে ইজরায়েল রাষ্ট্র তৈরি করে রাষ্ট্রসঙ্গ, কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা না রেখে।ধীরে ধীরে ইজরায়েল গায়ের জোড়ে /ভয় দেখিয়ে(আমেরিকার সমর্থনে) তাড়িয়ে প্যালেষ্টাইনদের ভূখণ্ড দখল করতে করতে আজ করুন অবস্হা। তারই পরিনতি আজ এই অবস্থা। ওদের থাকবার আজ কোন জায়গা নেই।
এর পেছনে এক নির্যাতন/অত্যাচারের এক লম্বা ইতিহাস:১৯৪৭ সনে রাষ্ট্রসংঘ প্যালেষ্টাইনকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ,১৯৪৮ সনের আগে ইজরায়েল বলে কিছু ছিল না।ইউরোপে রাজতন্ত্র ইহুদিদের অত্যাচার ও নির্যাতন করতো। তাতে জিয়ানবাদী আন্দোলন তৈরি হলো,দাবি উঠলো “আমরা জায়নের মাটিতে ফিরে যাবো,তাতে বিট্রিশদের সমর্থন ছিল। তারপর নাৎসি হিটলার ইহুদিদের গনহত্যা শুরু করলো ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ইহুদিদের জন্য একটা নিরাপদ রাষ্ট্র প্রয়োজন পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলো দাবি তুললো।১৯৪৮ সন নব ঘটিত রাষ্ট্রসংঘ ঘোষণা করলো ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা হবে। তখন ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ইহুদিদের জন্য ৭০ ভাগ ভূমি ছাড়তে বাধ্য করা হয় প্যালেষ্টাইনদের। তাই ১৯৪৮ সনে ১৪ মে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়। তাতে প্যালেস্তাইনের নতুন রাষ্ট্রের নাই কোন সিকৃতি, নাই কোন সীমানা। কিছুই করলো না রাষ্ট্র সঙ্ঘ।কিন্তু আরব রাষ্ট্ররা এধরনের সিধান্ত মেনে নিতে পারলো না।তারপর আরব রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ হয় ইজরায়েলের, ৭০শতাংশ ভূমি ইজরায়েল দখল করে। আরবরা পরাজিত হয় এই যুদ্ধে।তাতে “গাঁজা “অঞ্চল মিশর দখলে রাখে আর “পশ্চিম পাড়” জর্ডান দখলে রাখে।এই দুইটি অঞ্চলে প্যালেস্তাইনিদের শরনার্থীর মত গাদাগাদি ভাবে জায়গা হলো। ১৯৬৭ সনে একযোগে পার্শ্ববর্তী আরব -সব রাষ্ট্রে ইজরায়েল আক্রমন করে বসে ও সমস্ত গাঁজা ও পশ্চিমপাড় দখল করে নেয়। এখন সব অঞ্চল ইজরায়েলের অধিকৃত।প্যালষ্টাইন একটি ইজরায়েল এর উপনিবেশ রাজ্যে পরিণত হলো।এখন প্যালেষ্টাইনদের কি ধরনের পরাধীনভাবে বাস করছে বুঝা যাচ্ছে- অনেকটা খোলা আকাশের নিচে জেলখানা। একদিকে আরব সাগর, পাশে মিশর( একমাত্র যাওয়ার গেট রাফাহ শহর) আর চারিদিকে পাঁচিল তুলা ইজরায়েল।সীমান্ত প্যালেষ্টাইনদের এই হল ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্র। একসময় ইয়াসিস আরাফাতের নেতৃত্বে প্যালেস্তাইনীদের জন্য বিশ্বজনমত তৈরি হয়েছিল। জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সমূহ প্রত্যক্ষমদত করতো।ভারত জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলো ও প্যালেস্তাইনীদের পিতৃভূমির রক্ষার সংগ্রামকে সমর্থন করতো। এখন ভারতের বিদেশ নীতি অনেকটা মার্কিন যুদ্ধনীতির তল্পিবাহক।কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রসংঘের “যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনা” প্রস্তাবকে ভারত সমর্থন করেনি ( মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের নীতির পক্ষে মতদান)। আমাদের ভারতের বিদেশনীতি এমন ছিল না।আগে আমরা বিদেশনীতি নিয়ে গর্ববোধ করতাম। ইন্দিরা গান্ধীর এই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের পুরোধায় ছিলেন।
যারা (বুদ্ধিজীবী! দেশী/বিদেশি)আজ বলছে হামাসরাও সমদোষী! ,হামাস কি শুধুই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন! তাদের ৭৫ বছর ধরে পিতৃভূমি উদ্ধা্রের জন‌্য উপনিবেশবাদী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্যালেস্তাইনিদের রক্তঝরা সংগ্রামকে তাহলে অস্বীকার করা হয়। এখন ইজরায়েল যে এই ধ্বংশযজ্ঞ চালাচ্ছে , তা দেখেও চুপ কেন ? প্যালেস্তাইনিদের উপর যুগ যুগ ধরে এত অত্যাচার, নির্যাতন বিরুদ্ধে সশস্র প্রতিরোধকে কখনই সন্ত্রাসী আক্রমন বলা যায় না।
তাই প্যালেষ্টাইনরা জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে- “এটা আমাদের পিতৃপুরুষের জায়গা”। “হে বিশ্ব বিচার চাই। বিচার, শুধু থাকবার অধিকার চাই। এটা আমাদের জন্মগত অধিকার।কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।” কে তাদের এই অধিকার দিয়েছে প্যালেষ্টাইনদের এভাবে নৃশংস ভাবে হত্যা করার?তার বিচার কে করবে?
এই অমানবিক বোমাবর্ষন (২০হাজার টন বোমা ৭ দিনে) গাঁজা উপত্যকায় (২২ লাখ লোকের বাসস্থান)একটা ১০লাখ লোকের শহর -গাজা সিটি (তার জনঘনত্ব ৩৬,৩০০/বর্গকিমি)ধূলিতে মিশিয়ে দিয়েছে ।হাজার হাজার লাশ রাস্তায় পরে রয়েছে!![ “পশ্চিম পাড়” লোকসংখ্যা ৩০লক্ষ।এর ভিতর উত্তোজনা ছড়িয়ে দিতে ৫ লাখ উগ্র ইহুদীদের জোর করে এখানে বসতি স্থাপন করিয়েছে ইজরায়েল।]
কতবড় নরখাদক হলে হাসপাতালে বোমাবর্ষন করে ৫০০ জন প্যালেষ্টাইনকে হত্যা, নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় যাত্রীগাড়িতে বোমাবর্ষন করে ৭০জনকে খুন! এ কোন সভ্য বিশ্ব !!এখন
(২৫ অক্টোবর)পর্যন্ত ২৮০০ জন নিহত,১১০০০ আহত,১০০০জন কংক্রিটের নিচে চাপা পরে আছে।২লাখ লোক গৃহহারা। জল, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ঔষধ নেই -আহতদের চিকিৎসা হচ্ছে না।৭মিনিটে একটি শিশু মারা যাচ্ছে। নরকের বাসস্থান তৈরি করেছে!
এখন পর্যন্ত যা খবর গাঁজায় ৯২৮৩ জন প্যালেস্টাইন নিহত হয়েছে। ১৫ লক্ষ প্যালেস্টাইন বাস্তূচূত্য,এর ভিতর ৭ লক্ষ শরনার্থীর রাষ্ট্র সঙ্ঘ পরিচালিত ১৫০ টি কেম্পে অতি কষ্টে দিনযাপন করছে। মারাত্মক ফসফরাস বোমা ব্যবহার করছে ইজরায়েল গাঁজায় মৃত্যুপুরী তৈরি করতে।ওদের উদ্দেশ্য পুরো গাঁজা অ্ঞ্চল থেকে প্যালেষ্টাইনদের তাড়িয়ে দিয়ে ইজরায়েল দখলে নেওয়া।

এখানে মার্কিনীদের ইজরায়েল পক্ষে যুদ্ধবাজ ভূমিকার কথা এখানে বলতেই হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরবে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়বাদী শক্তি জোরদার হচ্ছিল। তাই আমেরিকার এই অঞ্চলে একটি পুলিশ ম্যান রাষ্ট্র দরকার হয়ে পড়লো। আমেরিকার সঙ্গে একটি গোপন আঁতাত হলো ইজরায়েলর।ইজরায়েলকে জমি দেওয়া হবে,অস্ত্র দেয়া হবে বিনিময়ে আরব রাষ্ট্রগুলোকে ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে রাখবে। তার প্রক্রিয়ায় চলচ্ছএ চলচ্ছে ।এখন পর্যন্ত যা খবর: আমেরিকা ২টি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে,২ হাজার সেন্য পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যুদ্ধের মাঝে বাইডেন তেল আভিভ এসে কি বললো: হামাস সন্ত্রাসবাদী দল, ইজরায়েল নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার সাহায্য করা হবে।একটি কথা বললো না ইজরায়েল যে গাঁজায় ধ্বংশলীলা চালাচ্ছে। হাজার হাজার শিশু বোমাবর্ষনে মারা যাচ্ছে। এভাবেই সারাবিশ্ব মার্কিনরা আগ্রাসন মারফত বর্বতা করে যাচ্ছে আর মুক্তিকামী জনগনের স্বাধীনতা হরন করে পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ করছে।
এর ভিতর পুরো গাঁজা অ্ঞ্চল দখল নিয়েছে ইজরায়েল,প্যালেষ্টাইনদের ভাগ্য শুধু ইজরায়েল হাতে মৃত্যু।

এভাবে বিশ্ব জনমত চুপ থাকতে পারে না। প্রতিবাদ জানতেই হবে। নরপিশাচ ইজরায়েল ও আমেরিকা তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। প্যালেষ্টাইনদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তৈরি করে দিতে হবে যাতে ওরা শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।