মার্গে অনন্য সম্মান চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১১১
বিষয় – ভৌতিক

ঋণ পরিশোধ

সময়টা ছিল শ্রাবণ মাসের রাত্রি। তখন প্রায় সাড়ে আটটা হবে। বাস থেকে নেমে বাড়ি যেতে প্রায় এক কিলোমিটারের পথ। বাস স্ট্যান্ড নির্জন প্রান্তরে, চারিদিক খাঁ-খাঁ,কেউ কোথাও নেই। একেই রাত্রি,তারপর অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। উপায় না দেখে সুশান্ত হাঁটা দিল। লাল মাটির রাস্তা, রাস্তার দু’পাশে গাছপালা, মাঠের পর মাঠ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজ ধানের ক্ষেত। মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ও শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক শোনা যাচ্ছে। ভয় যে লাগছে না সুশান্তের তা নয়। ঠাকুর নাম জপ করতে করতে সে এগিয়ে চলেছে।
কিছুক্ষণ হাঁটতে না হাঁটতে একজন বাইক নিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ালো। বাইকের আলোকচ্ছটায় প্রথমে দেখতে অসুবিধা হলেও,গলার আওয়াজে চিনতে ভুল হয়নি সুশান্তের। আরে সুমন যে,তুই এত রাত্রিতে এখানে! কোথাও যাচ্ছিস নাকি? না না তোর জন্য এলাম,কাকিমা চিন্তা করছে তোর দেরি দেখে তাই।এই ঝড়-জলের রাত্রিতে তুই ফিরবি কিভাবে! সেইজন্য আমি তোকে নিতে এলাম। নে নে গাড়িতে উঠে পড় আর দেরি করিস না তো, একেবারেই কাকভেজা হয়ে ভিজে গেছিস,ঠাণ্ডা লেগে যাবে যে!
দুই বন্ধুতে গাড়িতে চেপে গল্প করতে করতে কখন যে বাড়ির সামনে এসে গেছে খেয়াল নেই। সুশান্তকে বাইক থেকে নামানোর পর,সুমন সুশান্তের হাতে দুই হাজার টাকার নোট দিয়ে বাই বলে চলে গেল।
সুশান্ত দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে মা দরজা খোলো বলতে থাকে। মা দরজা খুলেই জিজ্ঞেস করল সুশান্তকে,কিরে সাইকেল কই? তুই কি এতটা পথ হেঁটে এলি নাকি? ভেজা জামা-কাপড়গুলো ছেড়ে তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে নে। হাত পা ধোয়ার পর টাওয়েল নিয়ে মুছতে মুছতে মাকে বলল– সুমনের বাইকে এলাম মা। মা শুনে তো হতবাক, আঁতকে উঠে বলল,কি বলছিস তুই ! সুমন তোকে দিয়ে গেল!তুই ঠিক বলছিস তো? কেন মা কি হয়েছে তুমি বিশ্বাস করছ না কেন? আমি তো তোমাকে কখনো কোনদিন মিথ্যা কথা বলিনি! বিস্ময় চোখে মা বললেন,ও,ও কিছু না,তুই এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে নে তো।
খাওয়া শেষ হলে মা বলতে আরম্ভ করলেন, জানিস আজ সুমন সুইসাইড করেছে। আজ সকালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মারা গেছে। মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে সুশান্ত নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল। আতঙ্কে তার সর্বাঙ্গ কাঁপতে লাগলো। তারপর আর কিছু মনে নেই।
ঠান্ডা জলের স্পর্শে সুশান্ত চোখ খুললে,একছুটে ভেজা জামার পকেটে গিয়ে দেখে টাকাটা আছে কিনা। সেখানে গিয়ে ভিজে যাওয়া দুই হাজার টাকার নোটটা পকেট থেকে আস্তে আস্তে সুশান্ত বের করে দেখতে থাকে–

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।