সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে চার অক্ষর (পর্ব – ১১)

রাজপুত্রের গল্প

১১

প্রায় আট ফুট রকম উঁচু দুটো গাম্বাট বাকু নিজেদের মধ্যে ধস্তাধস্তি করছে। নাহ, দৃশ্যত সেটা খুব স্বর্গীয় নয় কিন্তু রাজপুত্র হলপ করে বলতে পারে, বাকু মোড়ল বাদ দিয়ে স্টেডিয়াম এর সবাই এই দৃশ্য দেখে যথেষ্ট পুলকিত। এতদিন রাজপুত্র যেটা করতো সেটাকে মধ্যস্থতা বলে। আজকে রাজপুত্র যেটা করলো সেটা হচ্ছে কাঠি করা। “কার গায়ের জোর বেশি, ঠিক করতে পারছিস না? নে, তাহলে ক্যালাকেলি করে মর!” রাজপুত্র ঠিক করেই ফেলেছে এবার থেকে দেরাতে যা সমস্যা আসবে সব মিটবে ফুলটু অ্যাকশন দিয়ে। হ্যাঁ, বাকু মোড়লের পছন্দ নয় বোঝাই যাচ্ছে সেটা কিন্তু এদিকে রাজপুত্র নিজেই চাইছে অশান্তির আগুন লাগাতে। প্রাণ সংশয় হতেই পারে কিন্তু সেই অন্ধকারে আশার একপিস মোমবাতি হচ্ছে, বাকু মোড়ল বিরক্ত হয়ে যদি রাজপুত্রকে তাড়িয়ে দেয়। স্কুলে পড়াকালীন রাজপুত্রের এক খুব বদমেজাজি আর খুব বোরিং ইতিহাসের টিচার ছিলেন। রাজপুত্র ছিল তাঁর প্রাত্যহিক নিশানা। প্রথম শাস্তি কান ধরে দাঁড়ানো, দ্বিতীয় শাস্তি হাঁটু মুড়ে বসা আর সবচেয়ে এক্সট্রিম শাস্তি ছিল ক্লাসের বাইরে বের করে দেওয়া। রাজপুত্রের কাছে মেঘ না চাইতে জল ছিল সেই এক্সট্রিম শাস্তি। রাজপুত্র নিজের কাঙ্খিত শাস্তি পেতে এক্সট্রিম ঘটনা ঘটাতে কসুর করতো না। আজকের খেলা অনেকটা সেরকমই।
দুশোঊনোআশি আর তিনশোসাতষট্টি দুজনের ভেতর এখন খালি হাতে ঠেলাঠেলি চলছে কে কাকে রাজপুত্রের তৈরি করে দেওয়া গোলদাগের বাইরে নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারে। যে ট্যারা বেঁকা গোলের বাইরে পা দেবে সে পাবে পরাজিতের তকমা এবং “কম সেরা” শিরোপা। প্রায় কুড়ি মিনিট হতে যায়, দাগের বাইরে নিয়ে যাওয়া তো দূরের গল্প, কেউ কাউকে এখনো অব্দি একচুল-ও ঠেলা ঠেলি করে সরাতে পারেনি। থেকে থেকে গাম্বাট দুটো “রাহহহহ!” “রাহহহহ!” করে মুখ থেকে শব্দ বার করছে। লাভের লাভ কিছুই নয় শুধু গোটা বাকুরাজ্যে আজ অনন্য সার্কাস।
আধ ঘণ্টার মাথায় রাজপুত্র বোর হতে শুরু করলো। কাঁহাতক ফ্রক পরা দৈত্যের ঠেলাঠেলি দেখা যায়? রাজপুত্র বাকু মোড়লকে ভিড়ের মধ্যে খোঁজবার চেষ্টা করেও পেলো না। কে জানে কোথায় মরতে গেছে? তিনশোসাতষট্টি আর দুশোঊনোআশির যা অবস্থা তাতে করে এরকম আরও একঘণ্টা চলবে। সিগারেট ধরাবে বলে স্টেডিয়াম এর একটু বাইরে এলো রাজপুত্র। একা একা নয়, পেছন পেছন আলমারি-ও এলো অবধারিত ভাবে। সিগারেটে একটা যত্নের টান দিলো রাজপুত্র। আহা শনি মহারাজ একেবারে মুখের সামনের আকাশে। এই ছাই ছাই মিমাসের মাটি থেকে কালো আকাশ জুড়ে স্বয়ং শনি। কি গ্ল্যামার গ্রহটার! শনির দিক করে রাজপুত্র কিছুটা ধোঁয়া ছাড়লো। রাজপুত্রের মনে পড়লো বাকু মোড়লের ঘরের দেওয়ালে টাঙানো ছবিটার কথা। অন্তরীক্ষে শনি, সাদায় কালোয়। আঁকাটা বেশ সুন্দর। বাকু মোড়ল লোকটা বেশ ঘোড়েল।কোথা থেকে ছবিটা জোগাড় করেছে ভগবান জানে। ছোট হয়ে ফুরিয়ে যাওয়া সিগারেটটা ফেলে রাজপুত্র স্টেডিয়ামের দিকে এগোনোর জন্য পেছন ফিরতে যাবে এমন সময় রাজপুত্র নিজের কোনাকুনি একটু দুরে একটা নীল আলো দেখতে পেলো। অদ্ভুত ব্যপার হচ্ছে আলোটা স্থির নয় এগিয়ে আসছে ক্রমশ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিজের কোমরের কাছে রাজপুত্র একটা ঠাণ্ডা ধাতব কিছুর অস্তিত্ব টের পেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরতে রাজপুত্র দেখলো, আলমারির ভেতর থেকে চেনের মতন একটা লম্বা জিনিস বেরিয়ে রাজপুত্রের প্যান্টের সঙ্গে আটকে আছে। মাথায় বাড়তি কোনো চিন্তা আসবার আগেই রাজপুত্র টের পেলো আলমারি চেন সমেত তাকে পেছনের দিকে টানছে । সামনে দ্রুত এগিয়ে আসা নীল আলোর বলয়। রাজপুত্র আতঙ্কের চোটে আলমারির শরীর থেকে বেরনো চেনটা খপাৎ করে ধরতে ধরতে নতুন করে টের পেলো তার গা হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। চেনটাও আচমকা বরফের থেকেও যেন ঠাণ্ডা। চারিদিকে কোথা থেকে নীল রঙের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এতো আলো চারিদিকে, রজপুত্র আর চোখ খুলে রাখতে পারলো না।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।