গল্পেরা জোনাকি তে বিবেকানন্দ ত্রিপাঠী

বীরপুর গ্রামের দুই যুবক অমর ও সমর বেতাল শহরের বাড়িতে বাড়িতে দরজায় দরজায় ধাক্কা মারছে কোন কাজের সন্ধানে।বাড়ি থেকে যা সংস্থান নিয়ে বেরিয়েছিল তা শেষ হয়ে গেল।বাড়ি ফিরে যাবে সেই টাকাও নেই।কি করবে এই চিন্তায় যখন তাদের মাথায় হাত ঠিক তখনই রেলপুলে আশ্রয় নেওয়া এক বুড়ো মানুষের সাথে দেখা।সেই বুড়ো দুই যুবকের কাছে সব জেনে বললেন তোমরা আমার সাথে থাকতে পার।কাজও করতে পার।
বুড়োর কথা শুনে অমর ও সমর ভাবল যাক,এবার আমাদের ভাগ্য হয়ত ফিরবে।অমরের কিছুটা বিশ্বাস হলেও সমরের খটকা লাগছে।রেলপুলের নিচে যিনি বাস করেন তিনি আমাদের কি ব্যবস্থা করবেন।
সেই রাতটা ওরা ওই বুড়োর কাছেই থেকে গেল।অমর ভাবছিল নিজের পেটটা যদি কোন রকমে ভরে সেই ব্যবস্থা হয়ে গেলেও অনেক
পরের দিন সকালে বুড়ো সুকনো মুড়ি আর চা এর ব্যবস্থা করলেন।ওটা খাওয়া হয়ে গেলে বললেন,চল এবার আমরা কাজে যাব।
রেলপুল থেকে প্রায় দু কিলোমিটার দূরে একটি জমির কাছে হাজির হল তারা।অমর দেখল,ওখানে সারি সারি কচু চাষ হয়েছে।সেই কচু বাগান যত্ন করার কাজ করেন ওই বুড়ো।
কচু বাগানে এসে বুড়ো দুই যুবককে দুটি লোহার পাত ধরিয়ে বললেন নাও,বাগানে কচু গাছের চারপাশ আগাছা মুক্ত করার কাজে লেগে যাও।আমি করছি সেই দেখে তোমরাও কর।
অমর শুরু করলেও সমরের ওই কাজ করার ইচ্ছা ছিল না। তা দেখে বুড়ো কিছু না বলে অমরকে সাথে নিয়ে বাগানের আগাছা পরিস্কার করতে থাকলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর বাগানের মালিক এলেন।তিনি দুই যুবক কে জানতে চাইলে বুড়ো বলেন,ওরা আমার নাতি,গ্রাম থেকে এসেছে।তাই কাজে লাগিয়েছি।যদি আপনি রাজি না হন ওদেরকে লাগাব না।মালিক বলেন ঠিক আছে এসেই পড়েছে যখন,লাগাও।তবে ঠিকঠাক কাজ করে যেন।
মালিক চলে গেলে সমরও কাজে লেগে গেল।দুপুরে এক বুড়ি সেখানে হাজির। বুড়োকে বলেন,এস,খেয়ে নাও। বুড়ো বলেন,দেখছ দুই নাতি এসেছে,তাদের খাবার না দিয়ে আমি খাব কি করে।বুড়ি একটি এলুমিনিয়াম হাঁড়ি থেকে কিছু খাবার বের করে একটি থালায় রাখলেন,বলেন এগুলো তিনজনে ভাগ করে খেয়ে নাও।
তিন জনে বাগানের কুয়োতে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে।বুড়ো দিব্যি খেতে শুরু করলেন।দুই যুবকের কেউ খাচ্ছে না দেখে বুড়ো খাওয়া বন্ধ করে বলেন এই যে এনাকে দেখছ,ইনি বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে যা পেয়েছেন তাই নিয়ে এসেছেন।আমি রোজই এই খাবার খাই।তোমরা যদি খেতে না চাও তাহলে খেও না।যেখান থেকে এসেছ সেখানেই চলে যাও।এখানে এ থেকে বেশি কিছু পাবে না।কচু বাড়ির মালিক আমাকে টাকা দেন না।আমার সময় কাটে না বলে এই কাজ করি। তোমরা নাও খেতে পার।আমি দীর্ঘ দিন ধরে এই কচু পোড়া খেয়েই জীবন কাটাচ্ছি। কচু পোড়াও মিলবে না এখান থেকে চলে গেলে।
এসব শুনে ওই বুড়ি কিছু একটা ভাবলেন।শাড়ির খুঁট থেকে একটি দশ টাকার নোট বার করলেন। যুবকদের হাতে দিয়ে বললেন,যাও বাছারা,এটা দিয়ে বাজারে কিছু কিনে খেও। দুই যুবক দেখল বুড়ির কাছে ওই দশ টাকাটাই পুঁজি ছিল।সেটাই তাদের দিয়েছেন। দুই যুবকের চোখের জ্বল আর আটকে থাকল না।বুড়ির পায়ে হাত দিয়ে টাকাটা হাতে গুঁজে দিয়ে বুড়ি যে খাবার এনেছিলেন তাই তৃপ্তি করে খেয়ে নিল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।