কবিতায় বদরুদ্দোজা শেখু

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার অন্তর্গত ঠাকুরপাড়া গ্রামে ইং ১৯৫৫ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সাইফুদ্দীন সেখ ক্ষুদ্র চাষী, মা ফজরেতুননেশা বিবি গৃহবধূ। কবি শিক্ষায় গণিতশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর, নেশায় লেখালিখি। বিবাহিত।শোভা গোস্বামীকে বিয়ে করেছেন। এ যাবৎ কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ---- অলৌকিক আত্মঘাত, দুঃস্বপ্নের নগরে নিভৃত নগ্ন,শব্দ ভেঙে সংলাপ , আরো থোড়া দূর (২০১৯ )এবং পরী ও পেয়ালা (২০২০ ) । কবিতা প্রকাশের উল্লেখযোগ্য পত্রপত্রিকা---- অদলবদল, সপ্তাহ,পূর্বাভাস,জাগরী ,দৌড়, কবিতীর্থ প্রভৃতি । কবিতালেখায় কবি কাব্যতরী, কথাওকাব্য, কুসুম সাহিত্য অঙ্গন ,চন্দ্রমল্লিকা ,শব্দনগর, একুশে বর্ণমালা, কল্পকথা সাহিত্য পরিক্রমা প্রভৃতি সাহিত্য গোষ্ঠী থেকে একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন। কবি অল্পস্বল্প অণুগল্প ও ছোট গল্পও লিখেন।

স্থবির প্রহরে 

ভোর ভোর ওঠার অভ্যাস আজকাল
বদলে’ গেছে , বলা যায় বিষণ্ণ হতাশা
ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র জীবনযাপনে। মনের প্রজাপতিগুলোর
ডানাপাখনা ছেঁটে গেছে অদৃশ্য দস্যু করোনার ত্রাসে।
তবু বিদ্রোহী মনে বেপরোয়া রোখ চড়ে—
“চলো অশরীরী দেখে আসি স্থবির পৃথিবীটাকে,
টেক্সাস প্যারিস রোম লন্ডন নয়,
অন্ততঃ নিজের শহরটাকে দেখে আসি দূর দিয়ে
সৃসিক্ষু ঝটিকা সফরে ” —-
ইত্যাকার ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলাম একাই
ঐতিহাসিক ব্যারাক স্কোয়ার চত্বরে—
সেখানে চৌদিক ছিল খোলা মাঠ , এখন লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা,
রেলিঙের পারে ফুলগাছ ঝাউগাছ বাহার বসেছে,
ভিতরে চৌহদ্দি জুড়ে বাঁধানো হাঁটার পথ সুচারু সুন্দর
এখানে অনেক মেলাখেলা হয় , অনুষ্ঠান হয়
যুবকযুবতী বুড়োবুড়ি জোড়ায় জোড়ায় ঘোরে সকাল বিকাল,
বালক বালিকারা বেলুন ওড়ায়, ফেরিওয়ালাগুলো
খাদ্যদ্রব্য খেলনাপাতির মনোরম পসরা সাজিয়ে বসে,
বিনোদনে উৎসবে গমগম করে ।- – – –
এখন সেসব শুনশান অচেনা চত্বর , শ্বাস ফ্যালে শুধু
শিরীষ বৃক্ষের জিরাফের মতো উঁচুউঁচু গ্রীবাগুলো বিবিক্ত প্রহরে।
নিত্য ভিক্ষুকরাও দেখি প্রাণভয়ে ঢুকেছে গুহায় ।
দেখতে দেখতে এমন দৃশ্য , অস্পৃশ্য বিশ্ব
জুটলো এসে আষ্টেপৃষ্ঠে ক্লিষ্ট এবং নিঃস্ব,
শিষ্টাচারের রীতিপ্রথায় হাতকড়া প্রচ্ছন্ন
দূরত্ব বাঁচিয়ে চলার মহড়ায় আচ্ছন্ন
অধিকাংশ জনমানব টুঁড়ি পরার অভ্যাস
করতে ব্যস্ত নাকে মুখে , সুখের স্বপ্নবিন্যাস
ত্রস্ত ধ্বস্ত ভূতগ্রস্ত, আমোদ প্রমোদ বন্ধ
দ্বন্দ্ব-দ্বিধার পদক্ষেপেও সংক্রমণের গন্ধ
শুঁকছে সবাই, ধুঁকছে সবাই খাদ্যাভাবে দৈন্যে
কর্মহারা লাখো বেচারা জীবন-যুদ্ধের সৈন্যে
শ্রমিক মজুর ঝি-চাকরানি খেটে-খাওয়া নিত্য
অধিকাংশ গণসম্প্রদায়, দায়দায়িত্বের বৃত্ত
অসহায় স্থবির নুলো, ধামাকুলোর গোষ্ঠী
ঝাঁপ ফেলেছে পথের ধারেও প্রান্ত জনসমষ্টি,
সবাই ক্যামন ব্রাত্য এবং সবাই সন্দিগ্ধ ।
করোনা-গ্রাসের বিশ্ব-ত্রাসে উৎকট নিষিদ্ধ
স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়াকলাপ , বিলাপের দুঃসংবাদ
ছড়াচ্ছে অপ্রতিরোধ্য , দুর্বোধ্য বরবাদ
মনে হচ্ছে জীবনযাত্রা , মাত্রাছাড়া ভাইরাস
সংক্রমণে শ্মশান-কবরে ভ’রে উঠছে শব-লাশ ।
এই অবকাশ হয়তো রক্ষা করবে দূষণাপন্ন
পরিবেশকে, জাগবে আবার প্রকৃতির লাবণ্য;
অন্যমনে করছি যখন এমন আশার ভিক্ষা —
এই করোনা দিয়ে গেল কি কোনো কিছুর শিক্ষা ?
পরিবেশের ভারসাম্য ? প্রকৃতি সংরক্ষণ ?
সেই আস্থায় চাগিয়ে উঠে বিদগ্ধ বিপন্ন মন।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।